আস্তে মাথা ঝাঁকাল জোসেফ। তা-তো লাগবেই। কিন্তু আর কি করার আছে? বড় কোন গর্ত নেই টিলার। থাকলে ও পথে দড়ি নামিয়ে দিয়ে টেনে তোলা যেত।
জোসেফের কথা কানে ঢুকছে কিনা কিশোরের, বোঝা গেল না। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে সে।
মিস্টার গ্র্যাহামা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। নৌকাটাকে টেনে বের করে আনলেই হয়।
টেনে বের করবা ভুরু কুঁচকে গেল জোসেফের। কি করে?
মোটর বোটের সাহায্যে, বলল কিশোর। খুব শক্তিশালী ইঞ্জিন এই বোটটার। নোঙরের দড়িও অনেক লম্বা। নোঙরের একটা আকশি নৌকায় গেঁথে…
কিশোর, তুমি একটা জিনিয়াস! চেঁচিয়ে উঠল জোসেফ। ঠিক বলেছ! এখুনি যাচ্ছি। আমি!
দ্রুত হাত চালাল জোসেফ। ক্যাপস্ট্যান থেকে খুলে আনল দড়িসহ নোঙর। দড়ির অন্য মাথা বাঁধল বোটের পেছনের একটা রিঙবোল্টে। পানিতে ছুড়ে ফেলে দিল নোঙর।
আমি যাচ্ছি। দড়ি ধরে তিনবার টানব। ফাস্ট-গিয়ারে দিয়ে আস্তে আস্তে জোর বাড়াবে। নৌকাটা সুড়ঙ্গমুখ থেকে খসে এলে বুঝতেই পারবে। থেমে যাবে তখন। গুহায় ঢুকে ওদেরকে বের করে আনব আমি। …আর হ্যাঁ, টানতে টানতে হঠাৎ যদি সামনে লাফ দিয়ে ছুটতে শুরু করে বোট, বুঝবে, নৌকা থেকে নোঙর খসে গেছে। এখানে নিয়ে আসবে। আবার বোট। আমার ওঠার অপেক্ষা করবে। ঠিক আছে?
মাথা ঝোঁকাল কিশোর।
নেমে গোল জোসেফ।
আবার অপেক্ষার পালা। দড়ি ধরে বসে রইল কিশোর। দুরুদুরু করছে বুকের ভেতর। একবার টান পড়ল দড়িতে। নোঙর গাঁথছে হয়ত জোসেফ। এক মিনিট কাটল.. দুই মিনিট… হঠাৎ টান পড়ল দড়িতে। জোরে জোরে, তিন বার।
লাফ দিয়ে উঠে এল কিশোর। ড্রাইভিং সিটে বসেই গিয়ার দিল। ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল বোট। তারপর থেমে গেল। হঠাৎ করেই। টান টান হয়ে গেছে দড়ি।
এক্সিলেটরে চাপ বাড়াচ্ছে কিশোর। হুইলে হাতের আঙুল চেপে বসেছে। নোঙর বাঁধা দড়ির মতই টান টান হয়ে গেছে তার স্নায়ু। গর্জন বাড়ছে শক্তিশালী ইঞ্জিনের।
প্রথম কয়েক মুহূর্ত কিছুই ঘটল না। তারপর সামনে বাড়তে লাগল। বোট, ধীরে, অতি ধীরে। এক ইঞ্চি দুইঞ্চি করে। বিশাল মরা তিমিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে যেন টাগবোট। হঠাৎ সামনে লাফ দিল বোট। সেরেছে—ভাবল কিশোর। গেছে হয়ত ছুটে। কিন্তু না, যতখানি জোরে ছোটা উচিত তত জোরে এগোচ্ছে না তো বোটা তারমানে নৌকাটা আটকে আছে নোঙরে। ওটাকে টেনে নিয়ে চলেছে বোট। বিশ ফুট… পঞ্চাশ ফুট… একশো ফুট দূরে গিয়ে ইঞ্জিন নিউট্রাল করে দিল কিশোর। প্ৰায় সঙ্গে সঙ্গেই থেমে দাঁড়াল বোটটা।
সিট থেকে উঠে পেছনে চলে এল কিশোর। কোমরের বেল্ট থেকে ছুরি খুলে নিয়ে কেটে নিল দড়ি। ফিরে এসে বসল। আবার ড্রাইভিং সিটে।
আবার আগের জায়গায় বোট ফিরিয়ে নিয়ে এল কিশোর। অপেক্ষা করতে লাগল। এক মিনিট… দুই মিনিট… ভুসস করে বোটের পাশেই ভেসে উঠল একটা মাথা। জোরে শব্দ করে শ্বাস নিল পাপালো হারকুস। বোটের গা ঘেঁষে এল। থলেটা ছুড়ে দিল ভেতরে। চেঁচিয়ে বলল, জলদি লুকাও ওটা! ভেতরে মোহর কারও কাছে ফাঁস করা চলবে না এখন।
হাত ধরে আগে পাপালোকে বোটে উঠতে সাহায্য করল কিশোর। তারপর ভেজা থলেটা তুলে নিয়ে সিটে রেখে ওটার ওপরেই বসে পড়ল। লুকানোর এর চেয়ে ভাল জায়গা আর নেই বোটে।
কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল পাপালো, এই সময় ভেসে উঠল রবিন। পরীক্ষণেই মুসা। দুজনকে উঠতে সাহায্য করল কিশোর আর পাপালো।
যাক, উদ্ধার করলে শেষ পর্যন্ত! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। বাঁচার আশা ছিলই না!
জোসেফের ভাবভঙ্গিতে মনে হল, খুব রেগে গেছে, বলল রবিন।
সব শুনলে বাবাও খেপবে! কথার ধরনেই বোঝা গেল, ভয় পাচ্ছে মুসা। তবে যা-ই হোক, কিছু মোহর পেয়েছি। পাপু বলেনি?
থলেটার ওপরেই বসে আছি, বলল কিশোর। এখন মোহরের কথা থাক। পরে সব শুনিব।
কাজটা খুব খারাপ হয়ে গেছে, পিঠে বাঁধা গ্যাস ট্যাংক খুলতে খুলতে বলল রবিন। কিন্তু দোষ আমাদের নয়। পাপালোর নৌকাটাকে
চুপ! রবিনকে থামিয়ে দিল কিশোর। জোসেফ। সব জানানোর দরকার নেই ওকে। রেখেঢেকে বলবে।
বোটের পাশে ভেসে উঠেছে জোসেফ। এক হাতে দড়ির কাটা প্ৰান্ত। বাড়িয়ে দিল ওটা। ধরল কিশোর। বেঁধে দিল ক্যাপস্ট্যানের সঙ্গে। তাড়াতাড়ি এসে বসল। আবার সিটে।
বোটে উঠে এল জোসেফ। ধীরেসুস্থে খুলে নিল ফেস মাস্ক, ফ্লিপার, গ্যাস ট্যাংক।
নীরবে অপেক্ষা করছে ছেলেরা। ওদের দিকে তাকাল জোসেফ। তারপর? খুব তো দেখালে!
আমরা… শুরু করেও থেমে গেল রবিন।
হাত তুলেছে জোসেফ। আর সাফাই গাইতে হবে না। যা করার করেছি। তবে তোমাদের ডাইভিং এখানেই শেষ। গোয়েন্দাগিরিও। মিস্টার আমানও তাই বললেন। শুরু থেকেই আমার মত ছিল না। বাচ্চাকাচ্চা দিয়ে কাজ হবে না কিছুই। শুধু শুধু বাড়তি ঝামেলা!
নীরব রইল ছেলেরা।
পাপালোর দিকে ফিরল জোসেফ। তারপর? চোরের কি খবর? অনেক হারামীপনা করেছ, এবার জেল খাটগে।
জোসেফ কি বলছে, কিছুই বুঝতে পারল না ছেলেরা।
হাঁ করে আছ কেন? পাপালোর দিকে চেয়ে বলল জোসেফ। গতরাতে একটা ট্রেলারের জানালা ভাঙা হয়েছে। ছোট ফোকর। বড় মানুষ ঢুকতে পারবে না। ওই ফোকর দিয়ে, গোটা দুয়েক দামি লেন্স চুরি গেছে। কম করে হলেও হাজার ডলার দাম। ভুল করে একটা ছুরি ফেলে গেছে চোর। স্থির চোখে পাপালোর দিকে তাকিয়ে আছে সে। ছুরিটা কার, জােন? তোমার! আর জানালার ওই ফোকর দিয়ে তোমার পক্ষেই ঢোকা সম্ভব।