পাশাপাশি কয়েকটা গর্ত। উঁকি দিয়ে দেখল দুজনে। ভেতরটা অন্ধকার। টর্চ আনা উচিত ছিল। গর্তের মুখে পানিতে হাত দিয়ে নাড়া দিয়ে দেখল। কোন জবাব এল না। বেরিয়ে এল শুধু ছোট মাছের দল।
বড় বড় কিছু গর্তের মুখে ঘন হয়ে জন্মেছে শেওলা। ওপরের দিকে মাথা তুলে দুলছে তালে তালে। দুহাতে ওগুলো সরিয়ে উঁকি দিতে হচ্ছে ওসব গর্তের ভেতরে। কিন্তু অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না।
পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেল। দেয়ালের ধার ধরে ধরে প্রায় শখানেক ফুট চলে এসেছে ওরা নৌকার কাছ থেকে। কিন্তু পাপালোর কোন চিহ্নই নেই।
থেমে গেল ওরা। মুখ কাছাকাছি নিয়ে এল। মাস্কের ভেতরে দুজনের চোখ দেখতে পাচ্ছে দুজনে। মুসার চোখ বড় বড় হয়ে গেল, দেখল রবিন। উদ্বেগ প্রকাশ পাচ্ছে। বুড়ো আঙুল তুলে উল্টো দিক দেখাল সে। মাথা ঝোঁকাল মুসা। দুজনে আবার এগিয়ে চলল নৌকাটার দিকে।
নৌকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ওরা। এই সময় দেখতে পেল ওকে। দ্রুত উঠে যাচ্ছে ওপরে পাপালো। আশ্চর্য বিশ মিনিট পানির তলায় দম আটকে রাখতে পারলা অবাক হল দুই গোয়েন্দা। ওরাও উঠতে শুরু করল ওপরের দিকে।
ভুসস করে মাথা তুলল দুই গোয়েন্দা। কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে আছে পাপালো। হাঁ করে শ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। অক্ষতই মনে হচ্ছে। ওদেরকে দেখে হাসল।
পাপালোর পাশে চলে এল দুই গোয়েন্দা। ঠেলে মুখের একপাশে সরিয়ে দিল মাস্ক।
পাপু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল মুসা। ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাদেরকে।
কোথায় ছিলে তুমি? বন্ধুকে সুস্থ দেখে হাসি ফুটেছে। রবিনের মুখে। কি হয়েছিল?
হাসল আবার পাপালো। একটা জিনিস পেয়েছি। বলত কি?
তোমার কম্পাস?
এদিক ওদিক মাথা নাড়ল গ্ৰীক কিশোর। জ্বলজ্বল করছে কালো চোখের তারা। হয়নি। আবার বল।
বুঝেছি! মোহর চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
হাসছে পাপালো। ডান হাত বাড়াল। মুঠো খুলল। এক টুকরো সোনা। মুদ্রা ছিল এককালে। বেঁকেচুরে গেছে ধারগুলো।
মোহরের সিন্দুকটা পেয়েছ নাকি? জানতে চাইল রবিন।
না। দেয়ালের একটা গর্ত দিয়ে মাছ ঢুকতে বেরোতে দেখলাম। ভাবলাম, মাছেরা যদি পারে, পাপুও পারবে। ঢুকে পড়লাম ভেতরে। চুপ করল পাপালো। নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, দ্বীপের তলায় এক গুহা আবিষ্কার করেছি। ওখানেই পেয়েছি। এই সোনার টুকরো। বাজি ধরে বলতে পারি, আরও অনেক মোহর আছে ওখানে।
১৩
পাশাপাশি ভেসে আছে মুসা আর রবিন। তল থেকে পাঁচ ফুট ওপরে। বিচিত্র শব্দ তুলে ব্রীদিং টিউব থেকে বেরিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে বুদবুদ। পাশ দিয়ে অলস ভঙ্গিতে ভেসে চলে গেল এক ঝাঁক সাগর-কই, ঢুকে পড়ল সামনে দেয়ালের গর্তে, হারিয়ে গেল অন্ধকারে।
মণি ছাড়া বিশাল এক চোখের মত দেখতে লাগছে। সুড়ঙ্গমুখটাকে। এক কোণ থেকে আরেক কোণের দৈর্ঘ্য বারো ফুট। চোখের মাঝামাঝি জায়গার উচ্চতা ফুট পাঁচেক। ধারগুলো মসৃণ, শেওলা জন্মাতে পারে না স্রোতের জন্যে।
সুড়ঙ্গমুখের বিশ ফুট দূরে পড়ে আছে পাপালোর নৌকাটা। দুলছে। জায়গা বদল করছে। ধীরে ধীরে। এগিয়ে আসছে। এদিকেই। সেদিকে একবার চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো রবিন। নৌকার প্রতি খেয়াল দেবার সময় নেই এখন।
দুই গোয়েন্দার হাতে টর্চ। সুড়ঙ্গে ঢুকতে ইতস্তত করছে।
পাপালোর কথামত, কোন বিপদ নেই গুহায়। কম্পাস খুঁজতে এসেছিল সে। পায়নি। উঠে যাবার সময়ই নজরে পড়েছে সুড়ঙ্গমুখটা। কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসেছে। ওটার কাছে। ঢুকে পড়েছে।
ভেতরের দিকে প্রথমে সরু হয়ে, তারপর ধীরে ধীরে প্রশস্ত হয়ে গেছে সুড়ঙ্গ। খানিকটা এগিয়ে পেছনে ফিরে চেয়েছে পাপালো। সুড়ঙ্গমুখ দেখা যাচ্ছে, ইচ্ছে করলে ফিরে যাওয়া যায়। কিন্তু ফেরেনি সে। সামনে কি আছে, দেখার ইচ্ছে।
দম ফুরিয়ে আসতেই টনক নড়েছে পাপালোর। সামনে অন্ধকার, কি আছে কে জানে! পেছনে তাকিয়ে দেখেছে, অনেক দূরে আলো। এতদূর যেতে পারবে না, তার আগেই দম ফুরিয়ে যাবে।
আতঙ্কে ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল হাত-পা, দুই গোয়েন্দাকে বলছে পাপালো। কিন্তু মাথা গরম করলাম না। ফিরে যাবার চেষ্টা করলে মরবো। সামনে এগোলে হয়ত বেঁচে যাব। সুড়ঙ্গটা কোন গুহায় গিয়ে শেষ হলে বাতাস পেয়ে যেতে পারি। প্ৰাণপণে সাঁতরে চললাম। খানিকটা এগোতেই আলো চোখে পড়ল। ভরসা পেলাম। আলোর দিকে উঠতে লাগলাম। ভুসস করে মাথা ভেসে উঠল পানির ওপরে। দম নিয়ে তোকালাম চারদিকে। আবছা অন্ধকার। একটা গুহায় ঢুকেছি। আমি। দ্বীপের তলায়। শেওলায় ঢাকা একটা পাথুরে তাকে উঠে বসলাম। জিরিয়ে নিয়ে নামব ভাবছি, এই সময়ই হাতে লাগল শক্ত জিনিসটা। শেওলার ভেতরে আটকে আছে। কৌতূহল হল। তুলে নিলাম। ও মা! সোনা!! তালগোল পাকানো মোহরা গুহার তলায় অন্ধকার। দেখা যায় না। কিছু। আমার বিশ্বাস, আরও গুপ্তধন আছে ওখানে।
পানির তলায় গুহা, জলদস্যুর গুপ্তধন, আর কি চাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল দুই গোয়েন্দা, ঢুকবে ওখানে। কোনরকম সরঞ্জাম ছাড়া পাপালো যদি পারে, আধুনিক ডুবুরির সরঞ্জাম নিয়ে ওরা ঢুকতে পারবে না কেন? তাড়াতাড়ি চলে এসেছে এখানে। কিন্তু সুড়ঙ্গমুখের চেহারা দেখেই ভয় ঢুকে গেছে মনে। ইতস্তত করছে ভেতরে ঢুকতে।
এই সময় ওপর থেকে নেমে এলো পাপালো। দুই গোয়েন্দার পাশ কাটিয়ে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়ল সুড়ঙ্গে। আর দ্বিধা করার কোন মানে হয় না। যা থাকে কপালে, ভেবে, ঢুকে পড়ল দুজনে।