পুরানো ভাঙাচোরা জেটির পাশে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছে পাপালো। দুই বন্ধুকে দেখেই হাত তুলে ডাকল।
নৌকায় উঠল দুই গোয়েন্দা। নৌকা ছাড়ল পাপালো। গুপ্তধনের খোঁজে চলল। তিন কিশোর।
বন্ধুদেরকে বেরিয়ে যেতে দেখল কিশোর। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চেয়ার ঠেলে সরিয়ে উঠে দাঁড়াল। স্কেলিটন আইল্যান্ডের ওপর লেখা ফিচারটা আরেকবার খুঁটিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শোবার ঘরে এসে ঢুকাল।
বিছানা গোছগাছ করছে মিসেস ওয়েলটন। মুসার বালিশটা টান দিয়ে সরিয়েই স্থির হয়ে গেল। চেঁচিয়ে উঠল, আরো সোনার মোহরা এটা এলো কোখেকো ভুরু কুঁচকে তাকাল কিশোরের দিকে। তোমরা খুঁজে পেয়েছ, না? স্কেলিটন আইল্যান্ডে?
মুসা পেয়েছে, বলল কিশোর। কানে বাজছে জোসেফ গ্র্যাহামের হুশিয়ারিঃ খবরদার ! কেউ যেন জানতে না পারে! কিন্তু চেপে রাখা গেল না। ফাঁস হয়ে গেল মুসার বোকামির জন্যে।
স্কেলিটন আইল্যান্ডেই পেয়েছে তো?
না, উপসাগরে। দ্বীপ থেকে অনেক দূরে।
তাজ্জব কাণ্ড! প্রথম দিন পানিতে ডুব দিয়েই মোহর পেয়ে গেল! কিশোরের দিকে তাকাল। চোখে সন্দেহ। লোকের ধারণা, শূটঙ-ফুটিঙ কিছু না, আসলে মোহর খুঁজতে এসেছে দলটা। ক্যাম্প করেছে। দ্বীপে। ক্যাপ্টেন ওয়ান ইয়ারের আসল ম্যাপটা পেয়ে গেছে। ওরা কোনভাবে।
হুঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝোঁকাল কিশোর। সেজন্যেই কি বিরক্ত করা হচ্ছে সিনেমা কোম্পানিকে। কেউ হয়ত চাইছে, কোম্পানি দ্বীপ থেকে চলে যাক। …কিন্তু মিসেস ওয়েলটন, সত্যি বলছি, কোন ম্যাপ নেই কোম্পানির কাছে। ওরা গুপ্তধন খুঁজতে আসেনি। ছবি তুলতেই এসেছে। আপনার এখানে অনেকেই আসে, তাদের ভুল বিশ্বাস ভেঙে দেবার চেষ্টা করবেন।
তা করব। কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না। একবার কোন কথা ওদের মাথায় ঢুকলে আর সহজে বেরোতে চায় না।
হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকাল কিশোর। এই যেমন, নাগরদোলার ভূতের কথাও বেরোতে চাইছে না। আচ্ছা, আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব, জবাব দেবেন? সারাজীবন এখানেই বাস আপনার, এখানকার অনেক কিছুই জানেন।
নিশ্চয় বলব, যা জানি, হাসল মহিলা। ঘরটা গুছিয়ে নিই। নিচেও কয়েকটা কাজ আছে। তুমিও নিচেই চলে এসো। কফি খেতে খেতে কথা বলব।
ঠিক আছে, বলল কিশোর। রবিনের ব্যাগ থেকে ম্যাগাজিনটা বের করে নিলো। আমি যাচ্ছি। আপনি আসুন। ড্রইংরুমে এসে বসল কিশোর। পড়ায় মন দিল।
কাজ সেরে এলো মিসেস ওয়েলটন। হাতে দুকাপ কফি।
ম্যাগাজিনটা বন্ধ করে পাশে রেখে দিল কিশোর। হাত বাড়িয়ে একটা কাপ তুলে নিলো।
আরেকটা সোফায় বসে পড়ল মিসেস ওয়েলটন। হ্যাঁ, এবার কি বলতে চাও?
ওই স্কেলিটন আইল্যান্ড, বলল কিশোর। প্রথমেই বলুন, ওটা ভূতুড়ে হল কি করে? জানা আছে তার, তবু স্থানীয় একজনের মুখে শুনতে চায়।
খুলে বলল সব মিসেস ওয়েলটন। ফিচারে লেখা তথ্যের সঙ্গে তার কথা হুবহু মিলে গেল। একটা কথা জানা গেল, যেটা লেখা নেই। প্লেজার পার্ক পরিত্যক্ত হবার অনেক বছর পর আবার দেখা দিতে শুরু করেছে। স্যালি ফ্যারিংটনের ভূতা বেশ ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে ইদানীং।
জেলেরা, যারা দেখেছে, বলল কিশোর, তাদেরকে কতখানি বিশ্বাস করা যায়?
তা সঠিক বলা মুশকিল! তিলকে তাল করার অভ্যাস আছে জেলেদের। তবে ওই তিলটা থাকতেই হবে। আরেকটা ব্যাপার, স্কেলিটন আইল্যান্ডে ভূত আছে, শুধু শুধু বানিয়ে বলতে যাবে কেন ওরা?
কেন বলতে যাবে, কোন ধারণা নেই কিশোরের। তবে, জেলেরা পুরোপুরি মিছে কথা বলেছে, এটাও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। তার।
ঠিক কবছর আগে থেকে দেখা দিতে শুরু করেছে স্যালি ফ্যারিংটনের ভূত?
সঠিক বলতে পারব না, বলল মিসেস ওয়েলটন। তবে বছর দুইতিন আগে থেকে। কিশোরের দিকে তাকাল বাড়িওয়ালি। সিনেমা কোম্পানি এলো, ক্যাম্প করল দ্বীপে। চুরি যেতে লাগল তাদের জিনিসপত্র, কিন্তু চোর ধরা পড়ল না। ভূতে নিয়ে যায় যেন জিনিসপত্রগুলো একেবারে গায়েবা নাহ, কিছু একটা রহস্য আছে দ্বীপটীয়া কি, বলতে পারব না।
কিশোরও মিসেস ওয়েলটনের সঙ্গে একমত। কিছু একটা রহস্য আছে কঙ্কাল দ্বীপের। কিন্তু কি সে রহস্য!
১০
চমৎকার হাওয়া, ফুলে উঠেছে পােল। তরতর করে এগোচ্ছে ছোট নৌকা। আশেপাশে কোন নৌকা-জাহাজ নেই। অনেক দূরে দক্ষিণ দিগন্তে কয়েকটা কালো বস্তু, মাছ ধরা নৌকা।
কঙ্কাল দ্বীপের জেটিতে এসে নৌকা বাঁধল পাপালো, রবিন আর মুসার অনুরোধ। ডুবুরির সাজসরঞ্জাম নেবে ওরা। তবে আগে জোসেফ গ্রাহামের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
অনুমতি দিল জোসেফ। তাড়াহুড়ো করে চলে গেল প্লেজার পর্কের দিকে।
ট্যাংক। দুজনের জন্যে। পাপালোর দরকার নেই। ওসব সরঞ্জাম ছাড়াই সাগরে ডুব দিতে অভ্যস্ত সে। কি ভেবে, পানির তলায় ব্যবহারের উপযোগী দুটো টর্চও নিয়ে নিলো।
আবার এসে উঠল। ওরা নৌকায়। বাঁধন খুলল পাপালো। আবার নৌকা ছাড়ল।
উজ্জ্বল রোদে ঝিকমিক করছে পানি। ছোট ছোট ঢেউয়ে তালে। তালে দুলছে নৌকা। চুপ করে বসে থাকতে থাকতে ঝিমুনি এসে গেল। দুই গোয়েন্দার।
গান ধরল পাপালো। ভাষাটা বুঝতে পারল না। দুই গোয়েন্দা। নিশ্চয় গ্ৰীক। চোখ মেলে চাইল ওরা। চোখে পড়ল দ্য হ্যান্ড, হস্ত। যেখানে দুরাত আগে রহস্যজনকভাবে আটকা পড়েছিল ওরা।