দড়ির সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল দুই ডাইভার। পানির তলায় ড়ুবে গেল মাথা। কি কি ঘটেছে পানির তলায়, কিশোরকে খুলে বলল রবিন। শেষে বলল, পরের বার আর এমন ভুল…
একটা ডাক শুনে থেমে গেল রবিন। চাইল। একশো গজ দূরে ছোট একটা পালের নৌকা। নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে। হাত নেড়ে তাদের ডাকছে পাপালো।
দেখতে দেখতে কাছে চলে এল নৌকা। দ্রুত অভ্যস্ত হাতে পাল নামিয়ে ফেলল পাপালো। হাসল। ঝকঝাঁক করে উঠল সাদা দাঁত।
আমার সম্পর্কে নিশ্চয় অনেক খারাপ কথা বলেছে। জিম, বলল পাপালো। বিশ্বাস করেছ তো?
না, বলল রবিন। বিশ্বাস করিনি। তোমার সম্পর্কে কোনরকম খারাপ ধারণা আমাদের নেই।
খুব খুশি হলাম, হাসল আবার পাপালো। বোটের গায়ে হাত ঠেকিয়ে নৌকা থামাল।
বোটে ফেলে রাখা ডুবুরির-সরঞ্জামগুলোর দিকে চাইল একবার সে, চকচক করছে চোখ। গলার স্বর নির্লিপ্ত রেখে বলল, ইয়টটার কাছে যেতে এত সাজসরঞ্জাম লাগে না। পানি খুবই অল্প। কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই যেতে পারি। আমি ওখানে।
শুনেছি, গ্ৰীক স্পঞ্জ শিকারিরা যন্ত্রপাতি ছাড়াই একশো ফুটের বেশি পানির তলায় ডুব দিতে পারে, বলল রবিন।
ঠিকই শুনেছি, গর্বিত স্বরে বলল পাপালো। আমার বাপ দুশো ফুট নিচে চলে যেতে পারত। কোমরে একটা দড়ি বাঁধা থাকত শুধু, টেনে তোলার জন্যে। দাম রাখতে পারত তিন মিনিট। মেঘ ঘনিয়ে এল। তার চেহারায়। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাবা। আর কোনদিন ডুব দিতে পারবে না। প্রায়ই বলে, আবার গ্রীসে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু টাকা কোথায়? যদি কোনদিন গুপ্তধন পেয়ে যাই, বাবাকে নিয়ে দেশে চলে যাব আমি। একটা মোটরবোট কিনিব। মাছ ধরব সাগরে। আহা, ওখানকার জেলেদের জীবন কত সুন্দরা আবার হাসি ফিরল। পাপালোর চেহারায়। দ্বিধা করল এক মুহূর্ত। তারপর বলল, আগামীকাল গুপ্তধন খুঁজতে যাব। আমার সঙ্গে যাবে তোমরা?
নিশ্চয়!। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন। খুব মজা হবে।
এতক্ষণ চুপচাপ কথা শুনছিল কিশোর। বলল, শুধু গুপ্তধন খুঁজলে, আর সাঁতার কেটে বেড়ালে তো চলবে না। আমাদের। যে কাজে এসেছি, তা-ও কিছু করার দরকার। তারপর দুজনকেই অবাক করে দিয়ে জোরে হ্যাঁ-চু-চোহা। করে উঠল সে।
ঠাণ্ডা লাগল নাকি তোমার? গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে চেয়ে বলল রবিন।
কিশোর কোন জবাব দেয়ার আগেই বলে উঠল। পাপালো, খবরদার, ঠাণ্ডা লাগলে ডুব দিতে যেয়ো না! ভীষণ কানব্যথা করবে। আচ্ছা, চলি এখন। কাজ আছে। কাল দেখা হবে।
আবার পাল তুলে দিল পাপালো। চলতে শুরু করল নৌকা। রোদে চকচক করছে উপসাগরের পানি। তাতে ভর করে উড়ে চলল যেন হালকা পালের নৌকা।
কয়েক মিনিট পর। পানির ওপর মাথা তুলল। মুসা আর জোসেফ। বোটে উঠে এল।
ফেস মাস্ক খুলে ফেলল মুসা। হাসল। দারুণ! কিশোর, এবার তোমার পালা।
খুব একটা আগ্রহী মনে হল না কিশোরকে। শরীর ভাল লাগছে না। পিঠে ট্যাংক বেঁধে মাস্কটা টেনে নামাল মুখের ওপর। জোসেফের পিছু পিছু পানিতে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে।
রবিন! উত্তেজিত মনে হল মুসাকে। জন, কি দেখেছি?
কি?
কিছু একটা দেখেছি। ইয়টের ফুট পঞ্চাশেক তফাতে। উঠে আসছি তখন। বালিতে পড়ে আছে, চকচকো আমার মনে হয় মোহর! আবার যখন ডুব দেব, দেখে আসব ওটা।
তুমি শিওর?
ঠিক শিওর না। তবে চকচকে কিছু একটা দেখেছি, এটা ভুল নয়। এখানকার লোকে তো বলেই, উপসাগরের তলায় ছড়িয়ে গেছে মোহর।
মাঝে মধ্যে পাওয়াও যায়।
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল রবিন। ভেসে উঠেছে। কিশোরের মাথা। তার পাশেই জোসেফ। কিশোরের ফেস মাস্ক সরে গেছে একপাশে। তাকে ধরে রেখেছে জোসেফ। ঠেলে দিচ্ছে বোটের দিকে।
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
তেমন কিছু না, অভয় দিয়ে বলল জোসেফ। কি করে জানি মাস্ক সরে গেল ওর। ভাগ্য ভাল, গভীর পানিতে ছিল না।
বোটে উঠে এল দুজনে। বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কিশোরের চেহারা। মাস্ক খুলে রাখতে রাখতে বলল, কান ব্যথা করছিল। হাঁচি পেল হঠাৎ। আটকাতে পারলাম না। মাস্ক সরে গেল। পানি ঢুকে গেল মুখে। মাস্ক আর জায়গামত সরাতে পারলাম না।
আবার হাঁচি দিল কিশোর।
ঠাণ্ডা লেগেছে, বলল জোসেফ। আজ আর ডুব দিতে পারবে না। আগামী তিন-চার দিনেও পারবে বলে মনে হয় না।
আমারও তাই মনে হচ্ছে, সায় দিয়ে বলল কিশোর। গতকাল প্লেনে এয়ারকুলারের বাতাস একটু বেশি ঠাণ্ডা ছিল। তার ওপর রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছি। ঠাণ্ডা ধরে ফেলেছে।
পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে আর ডুবতে এসো না, পরামর্শ দিল জোসেফ। হাঁচি কিংবা কাশি থাকলে তো নয়ই। ঠিক আছে, তুমি বাস। মুসা আর রবিনকে ঘুরিয়ে আনি কয়েকবার। নাকি তোমরাও আর যেতে চাও না?
না না, যেতে চাইব না কেন? বলে উঠল মুসা।
পালা করে ডুব দিতে লাগল মুসা আর রবিন। প্রথমবারের চেয়ে বেশিক্ষণ ড়ুবে থাকে এখন। চকচকে জিনিসটা আবার দেখা যায়। কিনা, সেদিকে নজর রাখল। দুজনেই। কিন্তু দেখতে পেল না। আর।
বিকেল হয়ে গেল। আর কোনরকম বিপদ ঘটল না। সেদিনকার মত ডোবার কাজে ইস্তফা দেবার সিদ্ধান্ত নিল জোসেফ। একা একা একবার ডুব দেবার অনুমতি চাইল মুসা। কি ভেবে রাজি হয়ে গেল তাদের ইনস্ট্রাক্টর।
অনেকক্ষণ পরে, শঙ্কিত হয়ে পড়েছে জোসেফ, এই সময় ভেসে উঠল মুসার মাথা। বোটে এসে উঠল। এক হাতে মুঠো করে রেখেছে কি যেন।