ফেস মাস্ক আর ফ্লিপার পরে নিলো ছেলেরা। টেনেন্টুনে পরীক্ষা করে দেখল জোসেফ। ঠিকমতই পরা হয়েছে। একটা আলমারি খুলে গ্যাস ট্যাংক, হোস কানেকশন আর ভারি ডাইভিং বেল্ট বের করল সে। বলল, এখানকার পানি খুব ভাল। পরিষ্কার, গরম। ওয়েটসুট পরার দরকার নেই। রবিন, প্রথমে তুমি চল আমার সঙ্গে। সব সময় কাছাকাছি থাকবে, আলাদা হবে না। মুহূর্তের জন্যেও। বুঝেছ?
মাথা কাত করে সায় দিল রবিন।
গ্যাস ট্যাংক, বেল্ট বাড়িয়ে দিল জোসেফ। এগুলো পরে নাও।
পরে নিতে লাগল রবিন। তীক্ষ্ম চোখে তার দিকে চেয়ে রইল জোসেফ। নাহ, পরতে জানে ছেলেটা। ভালই শিক্ষা দিয়েছে ইনস্ট্রাকটর, ভাবল সে।
বোটের পাশ থেকে ঝুলে আছে দড়ির সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে পানিতে নামল জোসেফ। সাগরের দিকে পিঠি দিয়ে হাত ছেড়ে দিল সিড়ি থেকে। ঝুপ করে পড়ল চিত হয়ে। ড়ুবে গেল। তার পর পরই একই কায়দায় ডুবল রবিন।
ফ্লিপার নেড়ে দ্রুত ড়ুবে চলল। জোড়া লেগে গেছে পায়ের ভাঙা হাড়। কোন অসুবিধে হচ্ছে না। সাঁতরাতে। কুসুম গরম পানি। স্বচ্ছ। খুব ভাল লাগছে তার।
নতুন এক পৃথিবীতে এসে প্রবেশ করেছে যেন। নিচে একটা বিশাল কালো ছায়া! ড়ুবে যাওয়া ইয়ট। জোসেফের পাশাপাশি জাহাজটার দিকে নেমে চলল রবিন।
কাত হয়ে পড়ে আছে। ইয়ট। সামনের দিকে বিরাট এক ফাটল হাঁ করে আছে। আরও কাছে গিয়ে দেখা গেল, শ্যাওলায় ঢেকে আছে জাহাজের গা। আশেপাশে সাঁতরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট মাছ।
রবিনের আগে আগে সাঁতরাচ্ছে এখন জোসেফ। ফ্লিপার নেড়ে চলে গেল জাহাজের ওপর দিয়ে, পেছন দিকে।
দুটো বড় গলদা চিংড়ির ওপর নজর আটকে গেল। রবিনের। আরও কাছ থেকে দেখার জন্যে এগিয়ে গেল। হঠাৎ জোরে ঝাঁকুনি লাগল পায়ে। থেমে যেতে হল।
কিছু একটা শক্ত করে চেপে ধরেছে তার ডান পা।
৮
পানির তলায় এই প্রথম বিপদে পড়ল রবিন। আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। জোরে লাথি মেরে পা ছাড়ানোর চেষ্টা করল। পারল না। চাপ বাড়ল পায়ে। পেছনে টানছে।
পেছনে ফিরে চাইতে গেল রবিন। ফেস মাস্কে হাত লেগে গেল। নিজের অজান্তেই। সঙ্গে সঙ্গে যেন অন্ধ হয়ে গেল সে, সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পানি ঢুকে পড়েছে মাস্কের ভেতর। উত্তেজনায় ভুলে গেল, কি করে পানি বের করে দিতে হয়।
হঠাৎ কাঁধ চেপে ধরল। কেউ। চমকে উঠল রবিন। ধরেই নিলো, দানবটা এবার শেষ করতে এসেছে তাকে। কিন্তু না, পিঠের ট্যাংকে তিন বার আলতো টোকা পড়ল। জোসেফ ফিরে এসেছে তাকে উদ্ধার করতে।
শান্ত হয়ে এলো রবিন। উত্তেজনা আর আতঙ্ক চলে গেল। মনে পড়ল, কি করে পানি বের করে দিতে হয়।
মাথা ডানে ঘোরােল রবিন। আস্তে করে এক আঙুলে চাপ দিল মাস্কের বা পাশে। সামান্য ফাঁকা হল মাস্ক। জোরে শ্বাস ফেলল। সে। বুদবুদ তুলে বেরিয়ে গেল বাতাস, সঙ্গে নিয়ে গেল মাস্কের ভেতরের পানি। আঙুল সরিয়ে আনতেই আবার জায়গামত বসে গেল মাস্ক। অন্ধকার সরে গেল চোখের সামনে থেকে।
প্রথমেই জোসেফের ওপর চোখ পড়ল। রবিনের। এদিক ওদিক মাথা নাড়ছে লোকটা। আঙুল তুলে পেছনে দেখাল। ফিরে চাইল রবিন। হায় হায়, এর জন্যেই এত ভয় পেয়েছে সো জাহাজের একটা দড়ি পেচিয়ে গেছে তার পায়ে।
বাঁকা হয়ে দড়ি ধরল রবিন। খুলে ফেলল। পা থেকে। নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে। অযথা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। কয়েক ফুট দূরে সরে গেছে জোসেফ। হয়ত এখুনি ওঠার ইঙ্গিত করবে।
কিন্তু না, উঠল না জোসেফ। ডান হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর মাথা এক করে একটা রিং তৈরি করল। দেখাল। রবিনকে। তার মানে, সব কিছু ঠিকঠাকই আছে। পাশে চলে এলো রবিন। দুজনে সাঁতরে চলল অ্যাবার।
পুরো জাহাজের সামনে থেকে পেছনে একবার সাঁতরাল ওরা। তারপর চারদিকে এক চক্কর দিল। আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে ছোট ছোট মাছ। ভয় পাচ্ছে না। দুজন সাঁতারুকে বড় জাতের কোন মাছ মনে করছে। হয়ত।
অসংখ্য গলদা চিংড়ি দেখতে পেল রবিন। ইস, একটা স্পীয়ার গান যদি থাকত সঙ্গে। কয়েকটাকে ধরে নিয়ে যাওয়া যেত।
আরও কিছুক্ষণ সাঁতরাল ওরা। তারপর ওপরে ওঠার ইঙ্গিত করল জোসেফ।
ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে লাগল। দুজনে, কোনরকম তাড়াহুড়ো করল না। মোটর বোটের তলা দেখা যাচ্ছে, অদ্ভুত কোন দানব যেন। ভুসূস করে পানির ওপর মাথা তুলল দুজনে।
দড়ির সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল জোসেফ। তাকে অনুসরণ করল রবিন।
কেমন লাগল? আগ্রহী গলায় বলল মুসা। হাত ধরে রবিনকে বোটে উঠতে সাহায্য করল।
ভালই লাগত, কিন্তু গুবলেট করে ফেলেছি, বলল রবিন। দাঁড়ি পেচিয়ে গিয়েছিল পায়ে। মাথা ঠিক রাখতে পারিনি।
জোসেফও জানাল, কিছু কিছু ভুল করেছে রবিন। পানির তলায় কোন কারণেই আতঙ্কিত হয়ে পড়া চলবে না, এর ওপর ছোটখাট এক বক্তৃতা দিল। বলল, এরপর ইয়টের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
মন খারাপ করার কিছু নেই, হেসে বলল জোসেফ। পানির তলায় হঠাৎ কোন বিপদে পড়ে গেলে মাথা ঠিক রাখা সত্যি কঠিন। রবিনের কপাল ভাল, দড়িতে আটকেছে পা। অক্টোপাসের কবলে পড়েনি। তবে, অক্টোপাস কিংবা হাঙর আক্রমণ করে বসলেও মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। না না, চমকে ওঠার কিছুই নেই। এদিককার পানিতে ওই দুটো জীব দেখা যায় না খুব একটা। হ্যাঁ, এবার মুসার পালা।
তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল মুসা।