গার্ড শান্ত গলায় বলল পাপালো। জিম রিভানের ভয়ে। দেখলেই তাড়া করে। এখানকার সবাই তাড়া করে আমাকে। উজ্জ্বল চোখ দুটোতে বিষণ্ণতা।
কেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।
লোকের ধারণা, আমি খারাপ, ধীরে ধীরে বলল পাপালো। আমরা গরীব, তারওপর বিদেশী, কাজেই চোর। ফিশিংপোর্টে অনেক লোক আছে, যারা সত্যিই খারাপ। ওরাই চুরি করে, নাম দেয়। আমার। বলেঃ ওই গ্রেশান কুত্তাটার কাজ।
পাপালোর জন্যে দুঃখ হল তিন গোয়েন্দার।
আমরা তোমাকে অবিশ্বাস করি না, পাপু, বলল মুসা। কত রকমের লোক আছে দুনিয়ায়। মানুষকে কষ্ট দিয়ে মজা পায়। ওদের কথায় কান দিও না… আচ্ছা, গতরাতে এত তাড়াতাড়ি আমাদেরকে খুঁজে পেলে কি করে, বল তো?
সেটাই সহজ, উজ্জ্বল হয়ে উঠল আবার কালো চোখজোড়া। হাক স্টিভেনের রেস্তোরাঁয় ঝাড় দিই। আমি। বাসনপেয়ালা মেজে দিই। দুডলার করে পাই রোজ। খুব ভাল লোক হাক। ও সাহায্য না করলে না খেয়েই মরতে হত…
দুডলারে দুজন মানুষের খাওয়া হয়। চোখ কপালে উঠল। রবিনের। বেঁচে আছ কি করে?
আছি, কোনমতে, সহজ গলায় বলল পাপালো। পুরানো ভাঙা একটা কুড়ে ঘরে ঘুমাই। এক সময় ঝিনুক রাখত। ওখানে জেলেরা। কাজে লাগে না এখন, ফেলে রেখেছে। ভাড়া দিতে হয় না। আমাকে। সীম আর রুটি কিনতেই খরচ হয়ে যায় দুডলার। মাছ ধরতে জানি, তাই বেঁচে আছি। বাবা অসুস্থ। ভাল খাওয়া দরকার। কিন্তু কোথায় পাব? মাঝে মাঝে বাবার কষ্ট দেখলে আর সইতে পারি না। ছুটে বেরিয়ে আসি কুড়ে থেকে। পাগলের মত ঘুরে বেড়াই উপসাগরে, খুঁজে ফিরি সোনার মোহর। মানুষের দয়া আমি চাই না, ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করলেই যথেষ্ট।
অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বলতে পারল না। আর। নোনাপানি ছুয়ে ছয়ে আসছে। হাওয়া, শই শই শব্দ, সাগরের দীর্ঘশ্বাস যেন।
কোমরের বেল্টে গোঁজা ছুরি খুলে নিয়ে খামোখাই মাটিতে গাঁথছে পাপালো। থমথমে পরিবেশ হালকা করার জন্যে হাসল। নিজের দুঃখের সাতকাহনই গেয়ে চলেছি। আসল কথা থেকে দূরে সরে গেছি। অনেক। হ্যাঁ, কি যেন জিজ্ঞেস করছিলে?
গতরাতে এত তাড়াতাড়ি আমাদেরকে খুঁজে পেলে কি করে? মনে করিয়ে দিল মুসা।
সকালে হাক স্টিভেনের ওখানে বাসন মাজছিলাম। হঠাৎ কানে এলো, হাসাহাসি করছে কয়েকজন লোক। একজন বললঃ গোয়েন্দা, না! গোয়েন্দা আনাচ্ছে। আসুক না আগে হাত দেখিয়ে ছাড়ব ব্যাটাদের!
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে কাটতে হঠাৎ থেমে গেল কিশোর। হাতা শব্দটা কোন বিশেষ ভঙ্গিতে উচ্চারণ করেছিল?
তুমি কি করে বুঝলে ভুরু কোঁচকাল পাপালো। জবাবের অপেক্ষা না করেই বলল, ওই শব্দটা বলার সময় জোর দেয় সে। ঝড়ের সময়ই তোমাদের নিরুদ্দেশের খবর ছড়িয়ে পড়ল। বুঝে গেলাম, কোথায় পাওয়া যাবে তোমাদেরকে।
দ্যা হ্যানড…হস্ত…হাত, বিড়বিড় করল কিশোর। চিমটি কাটছে ঠোঁটে।
পুরানো গলাবন্ধ শার্টের তলায় হাত ঢোকাল পাপালো। আমাকে যখন বিশ্বাস কর তোমরা…একটা জিনিস দেখাচ্ছি… ছুরিটি মাটিতে রেখে চামড়ার তেল চিটচিটে একটা থলে বের করে আনল সে। প্লাস্টিকের সুতোয় বাঁধা মুখ।
বাঁধন খুলল পাপালো। চোখ বন্ধ করা সবাই, হাসি হাসি গলায় বলল। হাত বাড়াও।
হাসল তিন গোয়েন্দা। চোখ বন্ধ করে হাত সামনে বাড়াল। সবার ডান হাতের তালুতে একটা করে বস্তু রাখল পাপালো। এবার চোখ খোল!
অবাক হয়ে দেখল তিন গোয়েন্দা, তিনটে পুরানো সোনার মোহর।
বুড়ো আঙুলের সাহায্যে চকচকে মুদ্রার ধারটা পরীক্ষা করল রবিন। ক্ষয়ে গেছে। লেখা পড়ল। ষোলোশো পনেরো! চোখ বড়বড় হয়ে গেছে তার। এত পুরানো।
স্প্যানিশ ডাবলুন! হাতের মোহরটার দিকে চেয়ে আছে কিশোর। জলদস্যুদের গুপ্তধন!
ইয়াল্লা! কোথায়, কোথায় পেয়েছ এগুলো?
সাগরের তলায়, বালিতে পড়েছিল, বলল পাপালো। খুঁজলে আরও পাওয়া যেতে পারে। সিন্দুক কোথাও লুকিয়ে রাখেনি ওয়ান-ইয়ার, নৌকা থেকে পানিতে ফেলে দিয়েছিল। অনেক আগের ঘটনা। সিন্দুকটা নিশ্চয় পাচে ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। মোহরগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বালিতে। ঢেউয়ের জন্যে এক জায়গায় নেই। আর এখন। একটা পেয়েছি স্কেলিটন আইল্যান্ডের দক্ষিণে, একটা ড়ুবে যাওয়া ইয়টের কাছে। সুন্দর ইয়ট ছিল। এককালে, ধ্বংস হয়ে গেছে এখন। কয়েকদিন পরেই দুটো মোহর পেয়েছি আরেক জায়গায়। মনে হয়। ওখানে আরও…
জোরে গাল দিয়ে উঠল। কেউ, এই হারামজাদা, শুয়োরের বাচ্চা, এখানে কি করছিস!
চমকে ফিরে তাকাল তিন গোয়েন্দা। বিনয়ী জিম রিভানের এ-কি। মূর্তিা রাগে কাঁপছে। চোখ মুখ লাল। ছুটে আসছে। বেকায়দা ভঙ্গিতে পাশে ঝুলছে অকেজো হাতটা। হারামজাদা আবার গাল দিয়ে উঠল। সে। একবার না বলেছি, এদিক মাড়াবি না। আজ অ্যায়সা ধোলাই দেব… থেমে গোল সে।
জিমের দৃষ্টি অনুসরণ করে ফিরে তাকাল তিন গোয়েন্দা। তাদের পাশে নেই পাপালো। ছায়ার মত নিঃশব্দে উঠে চলে গেছে ওখান থেকে।
৭
চোরটা কি চায়? ভারি গলায় জিজ্ঞেস করল জিম। তোমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছে কেন?
কিছুই চায় না, গম্ভীর হয়ে বলল কিশোর। ও আনেনি আমাদেরকে, নিজেরাই এসেছি। গুহাটা দেখতে।
কিশোরের দিকে চাইল একবার জিম। নরম হল গলার স্বর, ছেলেটা ভাল না। পাকা চোর, হাতেনাতে কেউ ধরতে পারেনি। আজ পর্যন্ত। ওর কাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শই দেব আমি। এখন এসো। জোসেফ গ্র্যাহাম ফিরে এসেছে। তোমাদেরকে যেতে বলেছে।