পরদিন সকালে একটা ফ্যাটিগ পার্টি (যুদ্ধের পাশাপাশি রাস্তা নির্মাণ, মালবহনসহ টুকটাক নানা কাজ করে যে সৈন্যদল) জঙ্গলে ঢুকল একজন ক্যাপ্টেন এবং সার্জেন্টের তত্ত্বাবধানে, তারা আহত এবং নিহতদের খোঁজে এসেছে। জঙ্গলের মাথায়, রাস্তার একপাশে দুটো লাশ দেখতে পেল তারা, পড়ে আছে পাশাপাশি। একজন ফেডারেল অফিসার, বাকিজন কনফেডারেট প্রাইভেট। অফিসারের গলার ভেতরে আমুল বিঁধে আছে একটা তরবারি, উপুড় হয়ে আছে সে, রক্তে ভেসে গেছে চারপাশ। পাশের লোকটার বুকে ঢুকে আছে তরবারি, সারা শরীরে কমপক্ষে পাঁচটি মারাত্মক জখমের দাগ।
ক্যাপ্টেন মৃত অফিসারকে চিৎ করে শোয়াল। চমকে উঠল সে। ঈশ্বর! আঁতকে উঠল সে, এ তো বাইরিং। অপর লাশটার দিকে আঙুল তুলে দেখাল সে, মনে হয় মৃত্যুর আগে দুজনে জবর লড়াই করেছে।
সার্জন বাইরিং-এর তরবারিটা পরীক্ষা করল। এটা ফেডারেল ইনফ্যান্ট্রির তরবারি, ক্যাপ্টেনের সাথেও আছে অমন একটা। বাইরিং-এর বেল্টে একটা পিস্তলও গোঁজা আছে। তবে গুলি ছোঁড়া হয়নি।
সার্জন তরবারি রেখে এবার অপর লাশটার দিকে এগোল। এই লোকটাকে নিষ্ঠুরভাবে কুপিয়ে মারা হয়েছে। তবে শরীরে রক্তের চিহ্ন নেই। বাম পা-টা শক্ত হয়ে উঠে আছে আকাশের দিকে। পা-টা সোজা করার ব্যর্থ চেষ্টা করল সার্জন, উল্টো খুলে এল ওটা শরীর থেকে। সাথে-সাথে ভস করে পচা একটা গন্ধ ধাক্কা মারল ওদের নাকে।
দুজনেই এবার মুখ তুলে চাইল, ভয় এবং বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল পরস্পরের দিকে।
আ সিম্পল মিসটেক – ম্যাক্স ভ্যান ডারভির
অনেক সয়েছে সে। হ্যারী লোথারিওর আর ক্ষমা নেই। তাকে এবার অবশ্যই মরতে হবে।
মোনা রোপ দোকান থেকে কম দামী একটা হ্যাট কিনল, লিপস্টিক কিনল আরেক দোকান থেকে, আর বেলচাটা কম দামে পেয়ে গেল এক ডিসকাউন্ট স্টোরে। জিনিসগুলো নিয়ে ভাড়া করা সেডানে উঠল মোনা। চোহারায় নিস্পৃহ ভাব ধরে রাখলেও ভেতরে ভেতরে সে খুবই নার্ভাস।
খুব সাবধানে গাড়ি চালাল মোনা যেন অ্যাক্সিডেন্ট না হয়। দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় না সে। বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়িয়ে রিভারভিউ বুলেভার্দের দিকে মোড় নিল মোনা। তার বা দিকে সবুজ ঘাসের প্রশস্ত লন সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভিজাত বাড়িগুলো। আর ডানের ঢাল গিয়ে মিশেছে নদীর কিনারায়। এদিকে বড় বড় গাছপালার আড়ালে মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে বড় লোকদের দামী বাড়ির ছাদ।
বুলেভার্দ থেকে মোড় ঘুরে বার্নহিল্ট ড্রাইভওয়েতে চলে এল মোনা, পাথুরে, সুদৃশ্য একটি বাড়ির ডাবল গ্যারেজের বন্ধ দরজার সামনে ব্রেক কষল। পার্স থেকে দ্রুত চাবি নিয়ে দরজা খুলল সে, সেডানটাকে ভেতরে ঢোকাল, তারপর আবার ফিরে চলল বুলেভার্দের উদ্দেশে।
এক সেকেন্ডের জন্য ঘাড় ঘুড়িয়ে বাড়িটার দিকে চাইল মোনা, উঁচ করে ঈর্ষার কাঁটা বিঁধল বুকে। স্যালি লাফহার্টি, তার বাল্য বন্ধু, হিউস বার্নহিল্টকে বিয়ে করে কত সুখে আছে! ওরা দুজনেই এখন ইউরোপে, সামার বিজনেস ভ্যাকেশন কাটাতে গেছে। যাবার আগে স্যালি তাঁর বাড়ির একগোছা ডুপ্লিকেট দিয়ে গেছে মোনাকে।
উইকএন্ডে যে কোন সময় চলে আসিস এখানে। বার বার বলেছে স্যালি।
এটা ফ্রান্সের রিভিয়েরা নয় বটে, কিন্তু এখানে এলে তোর মন ভাল হয়ে যাবে। নদীতে ইচ্ছেমত সাঁতার কাটতে পারবি, পার্টি দিতে পারবি।
মোনা বুলেভার্দের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটা ট্যাক্সি ডাকল। বিশ মিনিট পরে আবার ডাউন টাউন চলে এল। দুই ব্লক পরে ওর পার্ক করা গাড়িটার দিতে দ্রুত এগুলো সে। এখন পর্যন্ত সব কিছু প্ল্যান মাফিক ঠিকঠাক চলছে। কপালের ঘাম মুছল মোনা, ঘামে ভেজা হাতের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কোঁচকাল, গাড়ির সীটে রাখা বেদিং স্যুট দিয়ে হাতটা পরিষ্কার করল, তারপর স্টার্ট দিল গাড়িতে। বাড়ি ফিরছে মোনা রোপ, যে বাড়িতে হ্যারী রোপের সঙ্গে দীর্ঘ ষোলোটা বছর এক সঙ্গে কাটিয়েছে সে।
তবে আর নয়। আর হ্যারীর সাথে এক সঙ্গে থাকতে রাজি নয় মোনা। নাটকের মঞ্চ তৈরি হয়ে গেছে, এইবার ঘটতে শুরু করবে ঘটনা।
অভিজাত এই এলাকায় পুবদিকে বেটিফেয়ার চাইল্ডদের বাড়ি। মোনা, দেখল হলুদ শর্টস পরা বেটি লম্বা একটা কাঁচি নিয়ে তাদের বাগানে কাজ করছে। বাগান থেকে কয়েক গজ দূরে মোনাদের বাসা। নিজের বাসার সামনে গাড়ি দাঁড় করাল সে। বেটি মুখ তুলে চাইল, বলল, হাই!
মোনা গাড়ি থেকে নামতে নামতে কষ্ট করে হাসি ফোঁটাল ঠোঁটে। হাই!
আজ খুব গরম পড়েছে, না? সাঁতার কেটে এলে?
মোনা মনে মনে খুব খুশি হয়ে উঠল এই কথায়। মাথা ঝাঁকিয়ে বেদিং স্যুটটা বেটির উদ্দেশ্যে নাড়ল। সব কিছু কি চমৎকার খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে। মোনা রোপ যে বুধবার বিকেলটা সুইমিং পুলে কাটিয়েছে তার সাক্ষ্য বেটিই দেবে। বলবে, অফিসার, মোনা ওইদিন যখন বাড়ি ফেরে তখন প্রায় পাঁচটার মত বাজে। ওর হাতে একটা বেদিং স্যুট ছিল। সে ওটা আমার দিকে তাকিয়ে নেড়ে ছিল।
মোনা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে গ্যারেজে গেল, গাড়িটা যথাস্থানে রাখল, তারপর বাড়িতে ঢুকল। বেটি ফেয়ারচাইল্ডের চোখের আড়াল হতেই চঞ্চলা হরিণী হয়ে উঠল সে। রান্নাঘরের সিঙ্কে সুইম স্যুটটা ডুবিয়ে কিছুক্ষণ পর ওটাকে ইউলিটি রুমের হ্যাঁঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখল।