সব চুপ। ঘর নিস্তব্ধ। দারুণ অবাক হয়ে অভ্যাগতরা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখছে নতুন খেলা। উঁচ পড়লেও তখন শোনা যায়, এমনি স্তব্ধতা বিরাজ করছে অত বড় ঘরে।
আচমকা সেই থমথমে নৈঃশব্দ ভঙ্গ করে শোনা গেল একটা আশ্চর্য শব্দ। দাঁতে দাঁতে পেষার রক্ত জল করার আওয়াজ। ঠিক এই শব্দই শোনা গিয়েছিল রাজামশায় যখন মদ ছুঁড়ে ভিজিয়ে দিয়েছিলেন ট্রিপেটার মুখ। তখন শব্দের উৎস ধরা যায় নি-এখন ধরা গেল।
আওয়াজটা আসছে হপ-ফ্রগের দাঁতের পাটির মধ্য থেকে। শূদন্তের মত দাঁত কিড়মিড় করছে হপ-ফ্রগ, মুখের কোণ দিয়ে বেরুচ্ছে ফেনা-জ্বলন্ত চোখে উন্মত্ত ক্রোধে চেয়ে আছে রাজা আর তাঁর সাত মন্ত্রীর ঊর্ধ্বমুখের পানে।
অমানবিক কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল বেঁটে বামন-চিনেছি! চিনেছি! এবার তোদের চিনেছি! বলে, জ্বলন্ত মশালটা নামিয়ে মুখ দেখার অছিলায় আগুন ধরিয়ে দিল রাজার গায়ে। আধমিনিটের মধ্যেই আটজনের আলকাতরা ভিজানো পাটের সাজ জ্বলে উঠল দাউ দাউ করে। নীচের শিহরিত আতঙ্কিত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা শুধু গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়েই গেল প্রতিকার করতে পারল না।
আগুন লেলিহান হয়ে উঠল। গা বাঁচাতে শিকল বেয়ে বানরের মত ক্ষিপ্রগতিতে ওপরে উঠে গেল বেঁটে–আবার দম বন্ধ করা নীরবতা নেমে এল ঘরে। জনতা মূক হয়ে চেয়ে রইল অবিশ্বাস্য এই দৃশ্যের দিকে।
তীব্র কণ্ঠে বলল বামন ভাড়-শুনুন আপনারা, শুনুন। এরা কারা এখন চিনতে পারছেন? রাজা আর তার সাত মন্ত্রী। অসহায় একটি মেয়েকে আঘাত করতে রাজার বিবেকে আটকায়নি। মন্ত্রীরা বাধা দেয়নি-বরং উসকে দিয়েছে। আর আমি? আমি হপ-গ-আপনাদের ভড়। কিন্তু এই আমার শেষ ভাঁড়ামো!
পাটের সাজ তখন আরো জোরে পটপট শব্দে জ্বলছে। আটটা কদর্য মাংসপিন্ড একত্রে ঝুলছে শেকলের প্রান্তে। পুড়ে কালো হয়ে চেনা দায়। বিকৃত বামন জ্বলন্ত মশাল জ্বলন্ত দেহগুলোর ওপর ছুঁড়ে মেরে অলস ভঙ্গিমায় উঠে গেল আরো ওপরে বেরিয়ে গেল স্কাইলাইট দিয়ে।
ছাদে দাঁড়িয়েছিল ট্রিপেটা। কপিকল ঘুরিয়ে সে-ই তুলেছে। ওরাংওটাংদের। প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করেছে হপ-ফ্রগকে। দুই বন্ধু ছাদ থেকে নেমে পালিয়ে গেল স্বদেশে-আর তাদের দেখা যায় নি।