প্রয়োজনে আমি তোমাকে লিখিত দেব, উৎকণ্ঠিত কণ্ঠ কার্লের। আমি ওর কাছে গিয়ে এখুনি প্রস্তাব দেব। তুমি চাইলে ওকে এখুনি ফোন করতে পারি।
ঠিক হ্যায়, বলল এডোয়ার্ড, বেড়ে গেছে হৃদস্পন্দন।ওকে ফোন করো, কার্ল।
ড্রইংরুমের কোনায় ফোন স্ট্যান্ডের দিকে ইঙ্গিত করল ও।
সোফা ছাড়ল কার্ল। দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গেল ফোনের দিকে। সোনালি রঙের রিসিভার তুলে গ্লোরিয়ার নম্বরে ফোন করল। ওকে লক্ষ করছে এডোয়ার্ড। রিসিভার কানে ঠেকিয়ে মনে হয় রিংটোন শুনছে। একটু পরে তার মুখে হাসি দেখা গেল।
গ্লোরিয়া, বলল কার্ল। আমি কার্ল.. ভাল আছি, সুইটহার্ট, তুমি কেমন আছ? উচ্চকিত গলায় সে এবার হেসে উঠল। …হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওখানে আবার যাব আমরা। হয়তো আজ রাতেই। শোনো, গ্লোরিয়া… কার্ল ফোনের কর্ড পেঁচাচ্ছে। নার্ভাস লাগছে তাকে। তোমাকে একটা কথা বলব। কাল রাতেই বলতাম, কিন্তু চারপাশে এত লোকজন ছিল যে… ভাবছিলাম আজ রাতে কথাটা বলব তোমায়। কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি, জানো, জানু? কথাটা বলার জন্য কিছুতেই তর সইছিল না, ডার্লিং। তাই আজ সকালেই ফোন দিলাম। জবাব না পেলে আমি স্রেফ পাগল হয়ে যাব।
চোখ বুজল কার্ল, তার কপালে ফুটে উঠেছে ঘাম। রোদ পড়ে চিকচিক করছে। সোনা, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। গাঢ় গলায় ফিসফিস করল সে। আজকেই আমরা বিয়ে করব।
সে এডোয়ার্ডের দিকে তাকাল। উল্লসিত চেহারা। সত্যি বলছ? আনন্দিত শোনাল তার স্বর। সত্যি তুমি রাজি আছ? … শোনো, তোমাকে আমি দুই ঘণ্টা সময় দিলাম। আমরা চার্চে বিয়েটা সেরে ফেলব… তোমাকে যে কত কথা বলার আছে!.. তাহলে ওই কথাই রইল। তুমি কিন্তু বেলা একটার মধ্যে চলে আসছ, বিয়েটা সেরে আমরা আজ হোটেল শেরাটনে লাঞ্চ করব, ডার্লিং। ওকে, সুইটি… গড ব্লেস ইউ।
ঝকঝকে ক্রেডলে রিসিভার রেখে দিল কার্ল। ঝাড়া পাঁচ মিনিট বুক ভরে শ্বাস নিল। তারপর সোফায় এসে বসে পড়ল ধপ করে।
এডোয়ার্ড গিবসন ওর দিকে স্থির তাকিয়ে আছে। তুমি দেখছি মিথ্যা বলোনি, বলল ও। তুমি সত্যি বিয়ে করবে ওই…
মিথ্যা কেন বলতে যাব? থমথমে চেহারা কার্লের। টাকাটা দাও, তোমাকে লিখিত দিয়ে দিচ্ছি যে গ্লোরিয়াকে আমি বিয়ে করছি। পারলে একটু বাড়িয়ে দিও, এডোয়ার্ড। ধার শোধ করতেই তো পুরো টাকাটা চলে যাবে। বিয়ের একটা খরচাপাতি আছে না…
ঠিক আছে, হাসল এডোয়ার্ড। আমি তোমাকে আরও পাঁচশো ডলার দেব। আমার তরফ থেকে তোমাদের বিয়ের গিফট। একটা ফার্স্ট ক্লাস হানিমুন করে এসো। দীর্ঘ শরীর দিয়ে সিধে হলো ও। হেঁটে গেল কার্লের কাছে। ওর প্রশস্ত কাঁধে চাপড় মারল। একটু বসো, বন্ধু। আমি টাকা নিয়ে আসছি।
মুখে স্বস্তির হাসি নিয়ে লম্বা পদক্ষেপে নিজের বেডরুমে রওনা হলো এডোয়ার্ড গিবসন।
.
বিকেল চারটার দিকে ফোনের শব্দে সাধের ভাতঘুমটা ভেঙে গেল এডোয়াডের। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে কান পাতল। ওপাশ থেকে ভেসে এল নাকী সুর গলা।
মি. গিবসন? আমি মারভিন ফ্লেমিং। আপনার সাবেক স্ত্রীর উকিল।
কে? ও, মি. ফ্লেমিং, ঠোঁট কামড়াল এডোয়ার্ড। গ্লোরিয়ার মতো এ লোকটাকেও ও দুচক্ষে দেখতে পারে না। তারপর মনে পড়ল গ্লোরিয়া নামের বোঝাটা কাঁধ থেকে নেমে গেছে। কী ব্যাপার?
আমার হঠাৎ মনে হলো আপনি বোধকরি খবরটা পাননি। তাই ভাবলাম ফোন করি। নাকি খবর পেয়ে গেছেন?
কীসের খবর?
দুঃসংবাদই বলতে পারেন, গম্ভীর শোনাল মারভিন ফ্লেমিংয়ের গলা। বেশ দুঃসংবাদ। বলতে আমার কষ্টই হচ্ছে, তবে কিছু আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে আপনার সাবেক স্ত্রীর মৃত্যুতে…
ওর কী হয়েছে?
আমি অত্যন্ত দুঃখিত। মিসেস গ্লোরিয়া গত রাতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় মি. কার্ল তার পাশে ছিলেন। ভাবলাম আপনি
আর মি. সেবরন যেহেতু পুরানো বন্ধু, তাই…
পুরানো বন্ধুর নিকুচি করি! বেঁকিয়ে উঠল এডোয়ার্ড। ঠকাশ করে রেখে দিল রিসিভার। তার পরপরই আবার ফোন তুলে কার্লের নম্বরে ডায়াল করল। কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না দেখে রাগের চোটে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছিল এডোয়ার্ড, খট করে একটা শব্দ হল, ভেসে এল এক মহিলা কণ্ঠ। বোধহয় কাজের বুয়া-টুয়া হবে। মি. সেবনের বাসা। কে বলছেন?
কার্ল সেবরন আছে?
আপনি কে বলছেন?
আমার নাম এডোয়ার্ড গিবসন। কার্লের বন্ধু। ও আছে কি না বলেন।
মি. সেবরন বাসায় নেই।
কোথায় গেছে? রুদ্ধশ্বাসে জানতে চাইল এডোয়ার্ড।
মি. সেবরন বেলা তিনটার দিকে এয়ারপোর্টে গেছেন। বোধহয় সেন্ট থমাসের প্লেন ধরবেন। তবে আমি ঠিক শিওর নই–
ও কি কিছু বলে গেছে? চেঁচিয়ে উঠল এডোয়ার্ড। নিশ্চয় বলে গেছে কিছু?
জি, স্যার। ভীত শোনাল তরুণ কণ্ঠ। বললেন কোন্ দূর দেশে নাকি হানিমুন করতে যাবেন। কিন্তু মি. সেবরন তো বিয়েই করেননি। হানিমুনের কথা কেন বললেন বুঝতে পারছি না…
মর্নিং ভিজিট – জেমস হেডলি চেজ
লেফটেনেন্ট দাঁড়িয়ে পড়ে হাত তুলল। ডান দিকে খামারবাড়িটি দেখতে পেয়েছে সে। নারকেল বীথিতে অর্ধেকটা ঢাকা পড়েছে।
চার নিগ্রো সৈনিক প্রস্তরমূর্তি বনে গেল। রাইফেল নামিয়ে তাতে হেলান দিয়ে রয়েছে।
মাথার ওপরের সূর্য ছোট্ট এই দলটিকে রোদের তাপে পুড়িয়ে ভাজা ভাজা করে ফেলছে। লেফটেনেন্টের মোটা চামড়া গড়িয়ে পড়ছে ঘাম, আঁটসাট ইউনিফর্মে সে খুবই অস্বচ্ছন্দ বোধ করছে। ঘামের দাগ লেগে নোংরা হয়ে গেছে সাদা ইউনিফর্ম। সে মনে মনে গালি দিল তীব্র গরম, প্রেসিডেন্ট এবং সবার ওপরে এ.বি.সি. সন্ত্রাসবাদীদের।