তুমি এখানে কী করছ? এডোয়ার্ডের গলার স্বর একটু বেশিই কর্কশ শোনাল। তোমার জন্য একটু বেশি সকাল হয়ে গেল না?
হয়তো বা, অচঞ্চল কার্ল। ভেতরে আসতে পারি?
নাক দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াল এডোয়ার্ড। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ড্রইংরুমে ঢুকল কার্ল। বসল সোফায়। কলেজে একই বিষয়ে পড়াশোনা করলেও ওরা কখনও বন্ধু হতে পারেনি। আসলে কার্লের চালিয়াতি ভাবটাই সহ্য করতে পারত না এডোয়ার্ড। এক রুমে থাকলেও কথাবার্তা হত খুব কম। একে এড়িয়েই চলত এডোয়ার্ড। সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পরে অন্য রুমে কার্লের সিট অ্যালট হলে হাঁপ ছেড়েই বেঁচেছিল ও। কার্লের সঙ্গে ইদানিং দুএকবার দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কারণ ওই গ্লোরিয়া। ধুমসী গ্লোরিয়ার সঙ্গে কার্ল ডেটিং করছে, এ ব্যাপারটা মাঝে মাঝে হজম করতে বেশ কষ্টই হয় এডোয়ার্ড গিবসনের।
গ্লোরিয়ার সঙ্গে শীঘ্রি দেখা হয়েছে? কার্লের বিপরীত দিকের উইং চেয়ারটি দখল করল এডোয়ার্ড। গলায় উপহাস।
সে তো সবসময়ই দেখা হয়, হাসল কার্ল। আসলে আজকে আমি গ্লোরিয়ার ব্যাপারেই তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
গ্লোরিয়ার ব্যাপারে বহু কথা শুনেছি, টেবিলে রাখা ডানহিলের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট নিল এডোয়ার্ড। সরু চোখে লক্ষ করছে অপরজনকে। দুজনে মিলে তো ভালোই জুটি করেছ।
হেসে উঠল সেবন। তোমার হিংসা হচ্ছে?
অবাক হচ্ছি। হয় গ্লোরিয়া একদম বদলে গেছে নতুবা তোমার মতো নির্বোধ, বধির এবং কানা মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। ও যে কী জিনিস তা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছ?
বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল, বলল কার্ল। তবে মাঝে মাঝে ও খুব আদুরে হয়ে ওঠে। এবং দিলখোলা।
মনে মনে সাবেক স্ত্রীকে একটা গালি দিল এডোয়ার্ড। হাতের সিগারেটটি না ধরিয়েই অ্যাশট্রেতে ফেলে দিল। তোমার মতলবটা কী, কার্ল? কেন এসেছ এখানে?
বললামই তো। গ্লোরিয়ার বিষয়ে কথা বলতে। জানি ও পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত নারী নয়। ওর শরীরে থলথলে চর্বি, সবসময়ই কোনো না কোনো অসুখে ভুগছে। এবং কথা বলে বলে তোমার কানের পোকা নড়িয়ে দেবে।
তো?
তবে সেদিন একটা কথা ভাবছিলাম। ওকে তো তোমার প্রতিমাসেই খোরপোশ বাবদ মোটা অংকের টাকা দিতে হচ্ছে। টাকার পরিমাণটা কত, এডোয়ার্ড?
তা দিয়ে তোমার দরকার কী?
অনুমান করি তিন-চার হাজারের কম নয়, নাকি?
দেখো, কার্ল–
তুমি আমার কথা আসলে বুঝতে পারছ না, খ্যাক খ্যাক করে হাসল কার্ল। আমি তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাতে আসিনি। এসেছি তোমাকে সাহায্য করতে। প্রতিমাসে তোমার কষ্টার্জিত অর্থ গ্লোরিয়ার পেছনে যাতে ব্যয় করতে না হয় সে বিপদ থেকে বাঁচাতে একটা বুদ্ধি করেছি আমি। কাজেই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে তোমার লাভ বই ক্ষতি হবে না, দোস্ত।
তুমি আমার খরচ বাঁচাতে চাইছ?
তাই তো বললাম। প্রতিমাসে তোমার তিন-চার হাজার ডলার টাকা বেঁচে যাবে। কী, আগ্রহ হয়?
যথেষ্টই আগ্রহ বোধ করছে এডোয়ার্ড। তবে চেহারা ভাবলেশহীন করে রাখল।
ঠিক আছে। বলো শুনি তোমার বুদ্ধিটা কী?
কী আবার, বিয়ে। গ্লোরিয়া আবার বিয়ে না করলে তো তোমাকে খোরপোশ দিয়েই যেতে হবে। আইন তো তাই বলছে।
গ্লোরিয়ার বিয়ে? পৃথিবীর সবচেয়ে নির্বোধ ছাড়া কেউ ওকে বিয়ে করবে না। আমি চিনি তো ওকে। হাড়ে হাড়ে চিনি। পাঁচটা বছর একসঙ্গে ছিলাম। গড, আমার হাড়মাংস চিবিয়ে খেয়েছে! শিউরে উঠল যেন এডোয়ার্ড। তারপর নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ করে জানতে চাইল, বোলো না যে তুমি ওকে বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছ।
স্বাভাবিক অবস্থায় কস্মিনকালেও এ চিন্তা করতাম না। কিন্তু ইদানীং খুব টানাটানি যাচ্ছে। দেনার সাগরে ডুবে আছি।
তুমি কি ভাবছ গ্লোরিয়া তোমাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করবে? আরে, ও তো আমার টাকায় চলে।
আমি গ্লোরিয়ার কাছে টাকা চাইতে যাবও না। আমার আসলে এখুনি বেশ কিছু টাকা দরকার। পাওনাদারের ডরে বাসায় ঘুমাতেও পারি না এমন অবস্থা। ওরা এখন ফোনেও হুমকি দিচ্ছে। তাই অনেক সময় ফোনের তার খুলে রাখি। কার্ল ঘাড় ফিরিয়ে পেছন দিকটায় একবার নজর বুলাল পাওনাদাররা এঘরেও এসে হাজির হয়েছে কি না দেখার জন্যই বোধহয়।
তুমি কি আমার কাছে কোনো পরামর্শ চাইতে এসেছ, কার্ল?
আসলে তোমাকে একটা প্রস্তাব দিতে এসেছি। মৃদু হাসল কার্ল। বিয়ের প্রস্তাব। আমি বিয়ে করব যদি তুমি আমাকে টাকা দাও। ক্যাশ। এবং এখন।
শিস দিল এডোয়ার্ড। থোকা, তোমার মাথাটাই আসলে খারাপ হয়ে গেছে।
আমার কোনো উপায় নেই, বলল কার্ল। তার মুখের দু কোনা কুঁচকে গেছে। আজ রাতের মধ্যে যদি আমি দশ হাজার ডলার জোগাড় করতে না পারি ওরা আমার লাশ ফেলে দেবে বলেছে। এডোয়ার্ডের চোখে চোখ রাখল সে। এডোয়ার্ড, আই মিন ইট! আমি গ্লোরিয়াকে বিয়ে করতে রাজি আছি যদি তুমি আমাকে সাহায্য করো। আমি ওকে প্রস্তাব দেব।
তুমি কী করে জানো ও রাজি হবে?
রাজি হবে, ও নিয়ে তোমাকে একটুও ভাবতে হবে না। কিন্তু আমাকে নগদ দশ হাজার ডলার পেতেই হবে। এবং দ্রুত।
তোমাকে আমি নগদ দশ হাজার ডলারঅই দেব, নরম গলায় বলল এডোয়ার্ড। প্যাকেট থেকে আরেকটি সিগারেট নিল। এবারে ধরাল। কিন্তু আমি শিওর হবো কী করে? কী করে বুঝব তুমি পিছিয়ে যাবে না?