দায়িত্বশীল নাগরিকটিকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে সে হড়হড় করে বমি করে দিল। সে চলে যাওয়ার পরে শেষ লোকটির দিকে ফিরল বাটলার। ইনিই ব্যাংকক চালানের মাথা। আড়ালের আসল মানুষ। লণ্ডনের আকাশের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। জানেন উন্মুক্ত এ আকাশ আর ভবিষ্যতে দেখার সুযোগ হবে না তার।
আমি আপনাকে অনেক আগে থেকেই সন্দেহ করছিলাম, বন্ধু।
কোনও সাড়া নেই।
দারুণ একটা ফন্দি এঁটেছিলেন। ডীয় একজন নয়, দুজন। গ্রীন চ্যানেলের সুবিধা নিয়ে নিরপরাধ মি. হিগিন্স এবং তার পরিবারকে বুদ্ধ বানিয়ে এ সুযোগটা আপনি নিয়েছেন। আমি আপনাকে গ্রেফতার করছি মি. হ্যারি পালফ্রে…
বাটলার তার দুই লোককে ভাড়া করা বাড়িটিতে রেখে এল যদি তারা আরও কোনও এভিডেন্স খুঁজে পায়। সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল রাস্তায়। সামনে অনেক কাজ পড়ে আছে। তবে এ কাজটি সে উপভোগই করবে। তার দলের দুই নম্বর সদস্যটি হুইলে বসেছে। বাটলার পেছনে, নিশ্চুপ কানাডিয়ানের পাশে এসে বসল।
সরাসরি কাজের কথায় আসি, বলল বাটলার। তুমি কবে জানলে এই ডাবল ব্লাফে সিমুর তোমার পার্টনার?
ওই ফ্ল্যাটে বসে। কিছুক্ষণ আগে, জবাব দিল হিপ্পি।
বজ্রাহত দেখাল বাটলারকে।
ল্যাভেটরি ডোরে মাঝরাত্তিরে তোমরা কী কথা বলছিলে?
কীসের কথা? কীসের ল্যাভেটরি? আমি ওই লোককে এর আগে জীবনেও দেখিনি।
হেসে উঠল বাটলার যে কাজটি সে খুব কমই করে।
তাতো বটেই। হিথ্রোর ওই ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু তুমি তো নিয়মকানুনগুলো জানাই। ওখানে বসেও তোমার কাভার ফাঁস করার কোনও উপায় ছিল না। সে যাকগে, ফোন করার জন্য ধন্যবাদ। খুব ভালো দেখিয়েছ, শন। আজ রাতে আমি তোমাকে বিয়ার খাওয়াব।
ফার্স্ট ক্লাস হানিমুন – হেনরি স্লেসার
ডিভোর্সের বয়স সাত মাস দুই সপ্তাহ চার দিন পার হয়ে গেলেও শনিবার সকালে গ্লোরিয়াবিহীন বেডরুমে মনে বেশ আনন্দ নিয়ে ঘুম ভেঙে গেল এডোয়ার্ড গিবসনের। হাই তুলল সে, হাত পা আয়েশ করে ছড়িয়ে দিল, ডাবল বেডে গা মোড়ামুড়ি করতে করতে একাকী থাকার মজাটুকু উপভোগ করছিল ও।
ইনসমনিয়ায় ভোগা গ্লোরিয়ার ক্যানকেনে কণ্ঠের ঘ্যানঘ্যান আর তার সুখের ঘুম নষ্ট করবে না, রাতের বেলা হার্টের প্যালপিটেশন বেড়ে যাওয়া কিংবা শাস নিতে কষ্ট হওয়ার ক্রমাগত অভিযোগ আর বিরক্ত করবে না এডোয়ার্ডকে। এডোয়ার্ড অলস, তার ভেতর দয়ামায়া নেই, তার ভুঁড়ি বেড়ে যাচ্ছে, রাতের বেলা বিশ্রী নাক ডাকে বলে ঘুমাতে পারে না গ্লোরিয়া, সে অমনোযোগী, গ্লোরিয়ার অসুখ বিসুখের দিকে তার কোনো খেয়াল নেই ইত্যাদি হাজারো বিষয় নিয়ে আর কোনো লেকচারও শুনতে হবে না এডোয়ার্ড গিবসনকে।
ডান পায়ের আঙুলের এক লাথিতে একদা গ্লোরিয়ার শয্যা থেকে বালিশ ফেলে দিল ও। সে কত সুখী ভেবে মুচকি হাসি ফুটল ঠোঁটে।
তবে প্রাতঃকৃত্য ও গোসল সেরে ও যখন নাস্তার টেবিলে বসল, মনের উল্লাস দূর হয়ে গেল। টোস্টে পুরু করে মাখন মাখাতে গিয়ে মনে পড়েছে আজ গ্লোরিয়াকে ওর খোরপোশের টাকা দেয়ার দিন। টোস্টে আর কামড় দেয়া হলো না, খিঁচড়ে গেছে মেজাজ। খাবারটা টেবিলে রেখে বেডরুমে ঢুকল এডোয়ার্ড। ভিক্টোরিয়ান ডেস্কের টপ ড্রয়ার খুলে চেক বইটি বের করল। রাগ এবং অনিচ্ছা নিয়ে চার অংকের সংখ্যাটি বসাতে হলো চেকের ওপর।
তিন মাসের আদালতে বিচ্ছেদ লড়াই শেষে গ্লোরিয়ার একমাত্র বিজয়–প্রতিমাসে এডোয়ার্ডের কাছ থেকে সে চার হাজার ডলার করে ভরণপোষণের খরচ পাচ্ছে। অনেক টাকা। যদিও তার ব্যাংক ব্যালান্স মন্দ নয়। তবু প্রতিমাসে ওই বিরক্তিকর মহিলার পেছনে এতগুলো টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে ভাবতেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এডোয়ার্ডের মন। কিন্তু করার কিছু নেই। আদালতের আদেশ তো আর সে অমান্য করতে পারবে না।
চেকটি কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিতে হবে গ্লোরিয়ার বাসার ঠিকানায়। এডোয়ার্ড শুনেছে বহাল তবিয়তেই আছে তার ভূতপূর্ব স্ত্রী। থাকবে না! মাস মাস মাগনা চার হাজার ডলার পেলে তো স্বর্গে থাকার কথা। রাগে গা টা আবার চিড়বিড় করে ওঠে এডোয়ার্ডের।
সে চেকটি খামে ভরেছে, বেজে উঠল কলিংবেল। কপালে ভাঁজ পড়ল এডোয়ার্ডের, বিস্মিত। ঘড়ি দেখল। সাড়ে নটা। এ সময় তো সাধারণত কেউ আসে না। তবে কে এল? সেই ফেরিঅলাটা নয়তো? এক লোক মাঝে মাঝে ছুটির দিনে হাবিজাবি জিনিস বিক্রি করতে আসে। একদিন প্রচণ্ড ধমকও দিয়েছে এডোয়ার্ড এসব তার লাগবে না বলে। ফেরিঅলা মিনমিন করে বলেছে ম্যাডাম নাকি তার কাছ থেকে প্লাস্টিকের ঝুড়ি, বালতি এসব কিনতেন। এডোয়ার্ড লোকটিকে পরিস্কার বলে দিয়েছিল ম্যাডাম এখন আর এখানে থাকেন না। তারপরও ব্যাটা দুইদিন ওকে বিরক্ত করেছে। আজ হারামজাদাকে ঠিক চড় কষিয়ে দেবে ডেভিড। রেগেমেগে সে ঝড়াং করে দরজা খুলল। না, ফেরিঅলা নয়, দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে কার্ল সেবরন।
সুপ্রভাত, দাঁত বের করে বলল কার্ল।
কার্ল সেবরন এডোয়ার্ডের সঙ্গে কলেজে পড়াশোনা করত। রুমমেট ছিল। ধান্ধাবাজ টাইপের মানুষ। ছোটখাট নানান ব্যবসা করেছে। কিন্তু ধান্ধাবাজির কারণে কোনো ব্যবসাই টিকিয়ে রাখতে পারেনি। গ্লোরিয়ার সঙ্গে কয়েকদিন আগে ওকে ঘুরতে দেখেছে এডোয়ার্ড। কার্ল হয়তো তার সুদর্শন চেহারা দিয়ে গ্লোরিয়াকে গেঁথে ফেলেছে। ওর গায়ের কালো রঙের নতুন সুটটা হয়তো গ্লোরিয়ারই উপহার। এডোয়ার্ডের খোরপোশের টাকা দিয়ে কেনা? পায়ের জুতোজোড়াও চকচকে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সে দুলছে। টানটান মুখের চামড়া, চেহারায় কিছু পাবার প্রত্যাশা।