তবে কানাডিয়ানের কোনোই ওজর আপত্তি টিকল না। তাকে জোর করে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। আর সিমুর যখন এক্সিট আর্চ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তাকেও বাধা দিল দুই অফিসার। তিনি প্রথমে ভান করলেন যেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। তবে বুঝতে পেরে তার মুখ ছাইয়ের মতো সাদা হয়ে গেল। তিনি প্রতিবাদ করলেও শেষ পর্যন্ত অফিসারদের সঙ্গে বাধ্য হলেন একটি সার্চ রুমে ঢুকতে।
একটি ওয়ানওয়ে মিরনের পেছনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল বাটলার। রাঘব বোয়ালটাকে ধরা গেছে। চেজিং শেষ। এখন কেস দুটো পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে ওগুলোর মধ্যে কী আছে।
দুটি আলাদা কামরায় দুজনকে পরীক্ষা করা হলো। সময় লাগল তিন ঘণ্টা। কিন্তু হ্যাঁভারস্যাক খালি। লাইনিং ফ্রেম ইত্যাদি খুলেও ভেতরে কিছুই পাওয়া গেল না। এতে অবাক হলো না বিল বাটলার। কারণ ডীকয়রা কখনও কিছু বহন করে না।
তবে হিউগো সিমুর তাকে বিমূঢ় করে তুলল। তার চামড়ার সুটকেস ডজনবার এক্সরে করেও ভেতরে কিছু মিলল না। লুকানো কমপার্টমেন্টেও কিছু নেই। কুমিরের চামড়ার অ্যাটাচি কেসেরও একই অবস্থা। অ্যান্টাসিড ট্যাবলেটের একটি টিউব পাওয়া গেল শুধু। সিমুরকে ন্যাংটো করে সার্চ করা হলো, এক্স-রে করা হলো তার জামাকাপড়। কিছু নেই।
সকাল দশটার দিকে মুক্তি পেল দুজনেই। সিমুর তখন চিৎকার করে বলছেন ওদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন। বাটলার এসব হুমকি ধামকি মোটেই পাত্তা দিল না। এরকম সবাই করে। কারণ কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজের আসল ক্ষমতা সম্পর্কে এদের কোনও ধারণাই নেই।
ওদের পিছনে লোক লাগাব, বস? জিজ্ঞেস করল নক টিমের দুই নম্বর সদস্য। বাটলার একটু ভেবে মাথা নাড়ল।
এরা যদি সত্যি নিরপরাধ হয়ে থাকে খামোকাই পিছু নেয়া হবে। আর যদি নিরপরাধ না হয় তবে ব্যাংকক থেকে কেউ তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে কিনা সে বিষয়েও আমার সন্দেহ আছে। বাদ দাও। পরের বারে দেখা যাবে।
.
কানাডিয়ানটি এয়ারপোর্ট কোচে চড়ে লণ্ডন চলে এল, উঠল প্যাডিংটনের কাছে জরাজীর্ণ এক হোটেলে। মি. হিউগো সিমুর ট্যাক্সি নিয়ে দূরের এক দামী হোস্টেলের উদ্দেশে রওনা হলেন।
বেলা দুটোর পরে লণ্ডনের বিভিন্ন রাস্তায় চারজন লোক চারটি ফোন পেল। তারা সবাই ফোন বুথের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের সবাইকে একটি ঠিকানায় রিপোর্ট করতে বলা হলো। এদের একজন একটি ফোন করে ছুটল তার গন্তব্যে।
বিকেল চারটা। বিল বাটলার কতগুলো সার্ভিসড অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে একটি গাড়িতে বসে আছে একা। এ ধরনের বাসা সাপ্তাহিক, এমনকী দিনের ভিত্তিতেও ভাড়া পাওয়া যায়।
বেলা চারটা পাঁচে নম্বরবিহীন একটি ট্রানজিট ভ্যান এসে থামল তার পেছনে। এটির জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল বাটলার। ভ্যান থেকে তার নক টিমের দশজন সদস্য বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়ল। ব্রিফিংয়ের সময় নেই। গ্যাংটির হয়তো কোথাও কোনও লুক আউট লুকিয়ে আছে। যদিও গত আধঘণ্টা ধরে নজর রাখার পরেও সে কোনও জানালার পর্দাও তুলতে দেখেনি। সে তার দলের সদস্যদের উদ্দেশে মাথা ঝাঁকিয়ে ব্লকের দরজা ধরে আগে বাড়ল। ফ্রন্ট ডেস্কে কেউ নেই। সে তার দুই লোককে লিফটের দরজায় নজর রাখতে বলে বাকি আটজনকে নিয়ে উঠতে লাগল সিঁড়ি বেয়ে। তিন তলার ফ্ল্যাট।
নক দল দরজায় নক করার প্রয়োজন অনুভব করল না। প্রচণ্ড এক ধাক্কায় ভেঙে ফেলল দরজা। ওরা সবাই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল ঘরে।
ভাড়া করা ড্রইংরুমে পাঁচ জন লোক। তারা প্রতিরোধের চেষ্টাই করল। বসে থাকল চুপচাপ। আকস্মিক এ হামলায় হতভম্ব। বাটলার ঢুকল সবার শেষে। তার লোকেরা ওই পাঁচজনকে তাদের আইডি দেখিয়ে দিলে তারা আর উচ্চবাচ্য করার সাহস পায়নি। বাটলার সবার আগে ধরল আমেরিকানটাকে।
পরে জানা যায় সে-ই ফোন করে বলেছিল কানাডিয়ান হিপ্পি একটা ডীয় এবং হিথ্রো এয়ারপোর্টের কাস্টমস হটলাইন ব্যবহার করবে। তার ব্যাগে পাওয়া গেল ছয় কিলো খাঁটি কলম্বিয়ান কোকেন।
মি. সালভাতর বোননা, আমি আপনাকে অন্যদের সঙ্গে যোগসাজশে এই দেশে নিষিদ্ধ পদার্থ নিয়ে আসার অভিযোগে গ্রেপ্তার করলাম…
মিয়ামির লোকটিকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে বাটলার ফিরল হিপ্পির দিকে। খিটখিটে কানাডিয়ানকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাটলার পেছন থেকে তার সহকর্মীদেরকে বলল, ওকে আমার গাড়িতে তোললা। ওর সঙ্গে আমার কথা আছে।
মি. হিউগো সিমুর সিল্কের সুট ছেড়ে টুইড এবং স্ন্যাকস পরেছেন। ইনি দ্বিতীয় ডীকয়। তাঁর কাছ থেকে পঞ্চাশ পাউন্ডের নোটে মোট দশ হাজার পাউন্ড উদ্ধার করা হলো। অপারেশনে সহায়তা করার জন্য তাকে এ টাকাটা দেয়া হয়েছিল। বাকি দুজনের দিকে তাকালেন বাটলার।
কনসাইনমেন্টটি ওদের দুজনের মাঝখানে, টেবিলের ওপর রয়েছে। এটি এখনও কেসের মধ্যেই আছে যেটি কাস্টমস ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছে। ফলস বটম খুলে নিচে ফাঁকা একটা জায়গা পাওয়া গেছে, ওর মধ্যে সিলথেন ব্যাগে রয়েছে দুই কিলো ওজনের থাই হোয়াইট হিরোইন। তবে কেসটির গায়ে স্কুবিডু এবং শ্যাগির কার্টুন ছবি এখনও লটকে আছে।
মি. জন হিগিন্স, এ জিনিসটি আমাদের দেশে আমদানি এবং আমদানিতে অন্যদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো…