গুডবাই, স্যার। আশা করি আপনারা ফ্লাইটটি উপভোগ করেছেন।
তারা CSDকে পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পরে ক্লাব ক্লাসের প্যাসেঞ্জাররা নামল। সবশেষে ইকোনমি ক্লাসের যাত্রীরা।
.
ইমিগ্রেশন হলটি প্রকাণ্ড এবং পাসপোর্ট কন্ট্রোল অফিসাররা সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ডেস্কের পেছনে জন সমুদ্র সামাল দিতে। ওপরে এবং এক পাশে, আয়না লাগানো একটি দেয়াল, আসলে এটি টু-ওয়ে মিরর, এর পেছনে একটি ঘর আছে। এ ঘরে বিল বাটলার দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে।
তার নিচে দশজন পাসপোর্ট অফিসার, দুজন ইউকে এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন পাসপোর্টের লোক, বাকি আটজন পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর পাসপোের্ট চেক করবে। বাটলারের একজন সহকারী এদেরকে ব্রিফ করেছে। ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসের মধ্যে সদ্ভাব সর্বদাই বিদ্যমান, তবে এ ব্রিফিং তাদের মাঝে নিস্তেজ সকালে একটু উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীদের মধ্যে মাত্র চারজন ব্রিটিশ, বাকিরা থাই অথবা অস্ট্রেলিয়। চার ইউকে নাগরিকের পাসপোর্ট ডেস্ক পার হতে অত্যল্প সময় লাগল। তবে তৃতীয় জন যখন তার পাসপোর্ট হাতে পেল, ইমিগ্রেশন অফিসার সামান্য মাথা কাত করে আয়নাঅলা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল। বিল বাটলারের হাতে সেই চিঠিটি। ক্রিম সিল্ক সুট শুধু একজনই পরেছেন। হিউগো সিমুর। সে তার হাতে বাঁধা খুদে কমিউনিকেটরে দ্রুত কথা বলল।
ও এখন বেরিয়ে আসছে। ক্রিম সিল্ক সুট। হাতে কুমিরের চামড়ার অ্যাটাচি কেস।
রনজিত গুল সিং একজন শিখ। সে ম্যানচেস্টার ভার্সিটি থেকে এম.এ পাশ করেছে এবং কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজের একজন অফিসার। নকএর সে একজন সদস্যও বটে। সে পাসপোর্ট কন্ট্রোলের পেছনের প্যাসেজে ঝাড়ুদারের ছদ্মবেশে দাঁড়িয়ে ছিল। ডান কানে হিয়ারিং প্লাগের সমান ছোট ইয়ারপিসের মাধ্যমে সে মেসেজটি শুনতে পেল। কয়েক সেকেন্ড পরে ক্রিমসুট পরা এক লোক তার পাশ দিয়ে হেঁটে পুরুষদের ল্যাভেটরিতে ঢুকল। এ তথ্য বাটলারকে দিতে সে হুকুম দিল, ওর পিছু নাও। দ্যাখো কী করে।
কিন্তু হাত মুখ ধোয়া ছাড়া আর কিছুই করলেন না ক্রিম সুট। কারও সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন না তিনি। সিং তথ্যটি দিল তার বসকে।
এদিকে হিপ্পিকে অনুসরণ করছিল ক্যাজুয়াল ড্রেস পরা আরেক তরুণী। আর হিউগো সিমুর তখন ল্যাভেটরি থেকে বেরিয়ে এসে ইকোনমি ক্লাস যাত্রীদের ভিড়ে মিশে গেছেন। তিনি কিছুই করছেন না।
বিল বাটলারের সন্দেহ হলো এ লোকটি ইচ্ছে করে সময় নষ্ট করছেন। তার মনে হচ্ছে হিল্পিটি ডীকয় বা টোপ। ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের কাছে বোধ করি কনসাইনমেন্টটি আছে। তবে ব্যাংকক থেকে আসা লাগেজগুলো যখন ছয় নম্বর ক্যারুজেল থেকে প্রথম শ্রেণীর যাত্রীরা একের পর এক তুলে নিতে লাগল তিনি কিন্তু তার সুটকেসটি স্পর্শও করলেন না। কনভেয়র বেল্টটি অন্তত কুড়ি বার চক্কর দিল, তবু ওদিকে এগিয়ে গেলেন না ভদ্রলোক কিংবা একবার তাকিয়েও দেখলেন না। তিনি এ মুহূর্তে রয়েছেন হলরুমের শেষ মাথায় ট্রলি সেকশনে, যেখান থেকে লোকে ট্রলিতে বোঝাই করছে তাদের মালপত্র।
ক্যারুজেল থেকে দশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে হিপ্পি ডোনোভান। অপেক্ষা করছে তার ভারী, কালো রঙের হ্যাঁভার স্যাকটির জন্য। আর দুটি ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে এল মি. হিগিন্স, তার স্ত্রী এবং কন্যা জুলিকে নিয়ে। জুলি, জীবনে এই প্রথম বিদেশে গেছে, বায়না ধরেছে সে আলাদা। একটি ট্রলিতে তার ব্যাগ এবং পুকিকে নেবে।
এক এক করে যাত্রীরা যে যার ব্যাগ নিল ক্যারুজেল থেকে। নিজের রঙচঙে ব্যাগটি দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠল জুলি, ওই যে, ড্যাডি!
তার চিৎকার শুনে অনেক যাত্রীই পেছন ফিরে মেয়েটিকে একবার দেখে স্নেহপূর্ণ হাসি দিল। জুলির ব্যাগটি মাঝারী সাইজে স্যামসোনাইট, গায়ে তার প্রিয় সব কার্টুন চরিত্রের অসংখ্য ছবি সটানো : স্কুবিডু, শ্যাগি, উইলি, কয়োটি এবং রোড রানার। প্রায় একই সঙ্গে তার বাবা-মার ব্যাগ দুটিও হাজির হলো। মি. হিগিন্স তাড়াতাড়ি ব্যাগগুলো নামিয়ে নিল।
হিপ্পি তার হ্যাঁভারস্যাক পেয়ে কাঁধে ঝোলাল। পা বাড়াল গ্রীন চ্যানেলের দিকে। ওদিক দিয়েই যাত্রীরা সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে। মি. সিমুর অবশেষে তার চামড়ার সুটকেসটি নিয়ে, ট্রলিতে চাপিয়ে গ্রীন চ্যানেল অভিমুখে চললেন। বিল বাটলার ইতিমধ্যে গ্রীন চ্যানেলের সামনে চলে এসেছে এবং আয়নার পেছনে দাঁড়িয়ে লোকজনকে লক্ষ করছে।
তবে হিপ্পি গ্রীন চ্যানেল পর্যন্ত যেতে পারল না। তার আগেই ইউনিফর্মধারী কাস্টমসের দুই লোক তার পথ আটকে দাঁড়াল। এবং অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলল, স্যার, কি দয়া করে আমাদের সঙ্গে একটু আসবেন?
রেগে কাঁই কানাডিয়ান।
এসবের মানে কী?
প্লিজ আসুন, স্যার।
এবারে বিস্ফোরিত হলো কানাডিয়ান।
এই যে এক মিনিট। তেরো ঘন্টা প্লেনে জার্নি করে এখন আমি এসব হাবিজাবি কথা শুনতে চাই না, বুঝতে পেরেছেন?
তার চেঁচামেচিতে তার পেছনে মানুষের সারিটি দাঁড়িয়ে পড়ল যেন গুলি খেয়েছে। তবে পরের মুহূর্তে তারা দেখেও না দেখার ভান করে সামনে এগোল। এদের মধ্যে হিউগো সিমুরও আছেন।