মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেলেন পালফ্রে। ফ্যালন স্ট্রং ব্ল্যাক কফির জন্য ঘণ্টা বাজিয়ে ফ্লাইট ডিটেলস চেক করতে বসলেন।
কিছুক্ষণ পরে CSD নিচ থেকে ফিরে এলেন। জানালেন ওটা হিউগো সিমুরই বটে, কোনো সন্দেহ নেই। ক্যাপ্টেন ফ্যালন তাঁর বিমানের দুজন সন্দেহভাজন যাত্রীর বিষয়ে সমস্ত তথ্য দিয়ে সতর্ক করে দিলেন হিথ্রো বিমান বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে। এখন তারা যা অ্যাকশন নেয়ার নেবে।
.
সোয়া চারটায় অ্যালার্মের শব্দ শোনা হলো না বিল বাটলারের। তার আগেই চারটা বাজার দশ মিনিট আগে ঘুম ভেঙে গেল ফোনের শব্দে। হিথ্রো এয়ারপোর্টের চার নম্বর টার্মিনাল থেকে তার লোক ফোন করেছে। তার কথা শুনতে শুনতে ঘুমের চটকা পুরোপুরি ভেঙে গেল বাটলারের। কুড়ি মিনিট পরে সে উঠে পড়ল গাড়িতে। গাড়ি চালাতে চালাতে হিসেব নিকেশ কষতে লাগল।
ফাঁদে ফেলার জন্য বা টোপ ফেলতে অচেনা বহু অভিযোগই আসে। বেশিরভাগই বইয়ে লেখা পুরানো সব ট্রিক। এগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত বিল বাটলার। সাধারণত এ ধরনের ফোন আসে। শহরের কোনও পাবলিক বুথ থেকে, কারও নাম ধরে বলা হয় সে আসছে ফ্লাইটের একজন ক্যারিয়ার।
তবে কাস্টমসের পক্ষে এ ধরনের ফোন কল অগ্রাহ্য করা অসম্ভব। যদিও ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বর্ণিত ট্যুরিস্ট একজন নিরপরাধ মানুষ। যে ফোন করেছিল সে নিশ্চয় লণ্ডনের কোনো গ্যাং সদস্য।
বর্ণিত মানুষটিকে যখন জেরা করা হবে আসল অপরাধী হয়তো ততক্ষণে সবার চোখে ধুলো দিয়ে সটকে পড়েছে।
কিন্তু তাই বলে একজন এয়ারক্রাফট ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে আসা ওয়ার্নিং? এটি নতুন ঘটনা। তাঁর বিমানের একজন যাত্রী তাঁকে চিঠি লিখেছে? দুজন যাত্রীকে সন্দেহ করা হচ্ছে? এর পেছনে সুসংগঠিত কোনও মস্তিষ্ক কাজ করছে এবং বাটলারের কাজ হবে বুদ্ধির লড়াইয়ে আড়ালের ওই লোকটিকে হারিয়ে দেয়া।
বিল বাটলার চার নম্বর টার্মিনালের সামনে গাড়ি থামাল। প্রায় খালি ভবনের দিকে লম্বা কদমে এগোল। সাড়ে চারটা বাজে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ডজনখানেক প্রকাণ্ড জেট বিমান চার নম্বর টার্মিনালকে প্রায় দখল করে রেখেছে। দুই ঘণ্টার মধ্যে অবশ্য জায়গাটি উন্মদাশ্রমে পরিণত হবে।
.
সকাল ছটা। বিল বাটলার তার নক টিমের দশ জন সদস্যকে টার্মিনাল চারের উদ্দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আগামী চল্লিশ মিনিটের মধ্যে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, বোস্টন এবং মিয়ামি থেকে আসা প্লেনগুলোর সঙ্গে যোগ হবে পূর্ব থেকে আসা বিমান। অফবোর্ড প্যাসেঞ্জারদের ভিড়ে টার্মিনাল পরিণত হবে জনসমুদ্রে। এমবাৰ্কেশন, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস সব জায়গাতেই ছদ্মবেশে নিজেদের নোক ঢুকিয়ে দিয়েছে বাটলার। তবে মুশকিল হলো, অনেক সময়ই দেখা যায় ক্যারিয়ার ভয়ের চোটে তার লাগেজই সংগ্রহ করে না। ক্যারুজলে একের পর এক সুটকেস আসতে থাকে, ওগুলো কারা তুলে নিচ্ছে, তার ওপর সতর্ক নজর থাকে কাস্টমসের। কিন্তু বিশেষ একটি কেস হয়তো কেউ তুলতেই এল না।
ওয়েস্ট ড্রেটন জানালো স্পিড়বার্ড ওয়ান জিরো চ্যানেল পার হয়ে সাফোক উপকূলের দিকে আসছে। কোর্স অনুযায়ী সে এয়ারপোর্টের উত্তর দিকে আসবে, তারপর লম্বা একটা চক্কর দিয়ে মেইন রানওয়েতে নেমে পড়বে।
সকাল ছটা পাঁচে স্পিডবার্ড ওয়ান জিরো উপকূল পার হলো। ইতিমধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে খাবারের ট্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে ভিডিও বিনোদন। কেবিন ক্রুরা ফার্স্ট এবং ক্লাব ক্লাসের যাত্রীদের হাতে তুলে দিতে লাগল যার যার জ্যাকেট। জানালার ধারে বসা যাত্রীরা উঁকি মেরে দেখল তাদের নিচ দিয়ে সাঁ সাঁ করে ছুটে যাচ্ছে আলোকমালা।
মি. হিউগো সিমুর ফার্স্ট ক্লাস ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। ক্লিন শেভড, মাথার চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো, গা দিয়ে দামী মিচফিল্ড আফটারশেভের সুঘ্রাণ আসছে। সিটে বসে তিনি টাই ঠিকঠাক করে নিলেন, ওয়েস্টকোটের বোম লাগালেন এবং স্টুয়ার্ডেসের কাছ থেকে ক্রিম সিল্ক জ্যাকেটটি নিয়ে ভাঁজ করে কোলের ওপর রাখলেন। কুমিরের চামড়ার অ্যাটাচি কেসটি তাঁর দুই পায়ের ফাঁকে বসে রইল।
ইকোনমি ক্লাসে কানাডিয়ান হিপ্পি আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। সিগারেটের জন্য আইঢাই করছে প্রাণ। আইলের ধারে বসেছে বলে পোর্ট হোল দিয়ে কিছু দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য সেই চেষ্টা সে করলও না।
চার সারি পরে হিগিন্স পরিবারের ঘুম ভেঙেছে, তারা নিচে নামার জন্য প্রস্তুত। জুলি তার পুকিকে বলছে তার নতুন বাড়িতে সে কী কী মজার জিনিস দেখতে পাবে। মিসেস হিগিন্স তার ক্যারি অন ব্যাগে শেষ টুকিটাকি জিনিসপত্র ভরছে। পরিপাটি মি. হিগিন্স তার প্লাস্টিকের অ্যাটাচি কেসটি হাঁটুর ওপর রেখেছে, হাত জোড়া তার ওপর ভাঁজ করা। সে তার কর্তব্য পালন করেছে। এখন তার ভালো লাগছে।
.
সকাল ছটা আঠারো মিনিটে হিথ্রো বিমান বন্দরে নেমে এল স্পিড়বার্ড ওয়ান জিরো। প্লেন থামতেই এয়ারপোর্টের টেকনিকাল স্টাফের কভারল পরা এক তরুণ এসে সাক্ষাত করল হ্যারি পালফ্রের সঙ্গে। সে CSDর কাছ থেকে হিগিন্সের লেখা চিঠিটি নিয়ে গেল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। সে চলে যাওয়ার পরে, CSD তার পেছনে দাঁড়ানো প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের দিকে ঘুরলেন।