সিটে বসে হিগিন্স কেস খুলে সাদা কাগজের একটি প্যাড এবং কলম বের করল। কাগজের প্যাডটি সে প্যানসিয়া হোটেল থেকে নিয়ে এসেছে। প্যানসিয়া লোগো এবং ঠিকানার অংশটুকু সাবধানে ছিঁড়ে নিয়ে অ্যাটাচি কেসটিকে লেখার ডেস্ক বানিয়ে ক্যাপিটাল লেটারে চিঠি লিখতে শুরু করল হিগিন্স। আধঘন্টা লাগল তার কাজটি করতে।
তার লেখা যখন শেষ, বিমান তখন আংকারার আকাশে। জন হিগিন্স কাগজটি ভাঁজ করে BAর দেয়া ইউনিসেফ চ্যারিটির একটি খামে ঢুকিয়ে তার ওপর বড় বড় হস্তাক্ষরে লিখল: FOR THE CAPTAIN. URGENT।
সিধে হলো হিগিন্স, নিঃশব্দে হেঁটে গেল ল্যাভেটরি দরজার পর্দার ধারে। উঁকি দিল গ্যালিতে। এক তরুণ স্টুয়ার্ড তার দিকে পেছন ফিরে ট্রেতে সকালের নাশতা সাজাতে ব্যস্ত। হিগিন্স সরে এল। বেজে উঠল বাযার। শুনল স্টুয়ার্ড গ্যালি ছেড়ে সামনে কদম বাড়িয়েছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে সুড়ৎ করে ভোলা জায়গায় ঢুকে পড়ল হিগিন্স। ট্রের ওপর সাজানো দুটি কফি কাপের মাঝখানে খামটি খাড়া ভাবে বসিয়ে দিয়ে ফিরে এল নিজের আসনে।
আরও আধঘণ্টা বাদে,আরও ব্রেকফাস্ট ট্রে রেডি করতে গিয়ে খামটি নজরে এল স্টুয়ার্ডের। প্রথমে ভাবল ইউনিসিফের কোনও ডোনেশন খাম। পরে লেখাটি চোখে পড়ল তার। কপাশে ভাঁজ পড়ল স্টুয়ার্ডের, একটু ভেবে দেখা করতে চলল কেবিন সার্ভিস ডিরেক্টরের সঙ্গে।
এ জিনিসটি দুটো কফি কাপের মাঝখানে ছিল, হ্যারি। ভাবলাম ফ্লাইট ডেকে না গিয়ে আগে আপনাকে দেখাই।
চোখ পিটপিট করলেন হ্যারি পালফ্রে।
ঠিকই করেছ, সাইমন। হয়তো ভুয়া কোনও চিঠি। এটা আমার কাছে থাক। তুমি বরং ব্রেকফাস্ট ট্রেগুলো…
চলে গেল স্টুয়ার্ড। ইউনিফর্ম ট্রাউজার্সে ঢাকা তার সুঠাম নিতম্বের দিকে তাকিয়ে হ্যারির বুকে আঁচ করে বিধল কামনার ছুরি। তিনি বহু স্টুয়ার্ডকে নিয়ে শুয়েছেন, তবে এ ছেলেটা দারুণ। হয়তো হিথ্রোতে… তিনি খামটির দিকে তাকালেন। এবার ভাবলেন খুলে দেখবেন, শেষে মত বদলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলেন। টোকা দিলেন ফ্লাইট ডেকের দরজায়।
এটা স্রেফ ফর্মালিটি। CSD যে কোনও সময় ফ্লাইট ডেকে আসতে পারেন। তিনি ভেতরে ঢুকলেন। বামের আসনে বসে আলোকিত একটি উপকূলের দিকে তাকিয়ে আছে রিলিফ ক্যাপ্টেন। ফ্যালন এখানে নেই। CSD গেলেন বাঙ্ক রুমে। এখানে তাঁকে ত্রিশ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হলো।
ধূসর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে দরজা খুলে দিলেন ক্যাপ্টেন ফ্যালন।
হ্যারি?
একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে, স্কিপার। কেউ এ জিনিসটি মিডসেকশন গ্যালির দুটো কফি কাপের মাঝখানে খুঁজে দিয়ে গেছে। নিজের চেহারা দেখায়নি সে। অচেনা কেউ একজন, অনুমান করি।
তিনি খামটি বাড়িয়ে ধরলেন।
আড্রিয়ান ফ্যালনের পেটে মোচড় দিল। ত্রিশ বছরের ক্যারিয়ারের কখনও তিনি হাইজ্যাকের শিকার হননি। বোমা হামলার ভয়ে তাঁকে ভীত হতে হয়নি। তবে তাঁর অনেক সহকর্মীরই এসব অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে এ দুঃস্বপ্নের মাঝে তাঁকেও যেতে হবে। তিনি খামটি ছিঁড়ে, চিঠিতে বের করে বাঙ্কের কিনারে বসে পড়তে লাগলেন। চিঠিতে লেখা : ক্যাপ্টেন, আমি নিজের নাম বলতে পারছি না বলে দুঃখিত। কারণ এর মধ্যে আমি নিজেকে কোনোভাবেই জড়াতে চাই না। তবু একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে আমার মনে হলো আমি যা দেখেছি তা আপনাকে অবগত করা দরকার। আপনার দুজন যাত্রী অত্যন্ত অদ্ভুত আচরণ করছে এবং তাদের এহেন আচরণের যৌক্তিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
এরপরে চিঠিতে বিস্তারিত লেখা প্রত্যক্ষদর্শী কী দেখেছে এবং কেন তার কাছে গোটা ব্যাপারটি অদ্ভুত এবং রহস্যময় লেগেছে। শেষে লেখা:
দুই যাত্রীর একজনের চেহারা ও পোশাক আশাক হিপ্পিদের মতো, সে বসেছে 30C আসনে। অপরজনের কথা আমি বলতে পারব না তবে আমার ধারণা তিনি প্রথম শ্রেণী কিংবা ক্লাব ক্লাসের যাত্রী।
বড়লোক যাত্রীটির বর্ণনাও দেয়া হয়েছে চিঠিতে। সবশেষে লেখা:
আশা করি আমি কোনও ঝামেলা সৃষ্টি করছি না তবে দুজন মানুষ যদি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে একত্রিত হয় এবং তা কারও মনে সন্দেহের উদ্রেক করে, সেক্ষেত্রে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জ্ঞাত করা দায়িত্ব মনে করেই এ পত্র লেখা।
ক্যাপ্টেন ফ্যালন চিঠিতে হ্যারি পালফ্রেকে দিলেন। তিনি চিঠি পড়া শেষ করে ঠোঁট কামড়ালেন।
মিডনাইট অ্যাসাইনেশন? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
এরা কেন একত্রিত হয়েছিল সে বিষয়ে কোনও ইংগিত নেই। সে যাকগে, হ্যারি, তুমি আমাকে প্যাসেঞ্জার লিস্টটি এনে দেবে?
CSD যাওয়ার পরে চুল টুল আঁচড়ে, শার্ট ঠিকঠাক করে রিলিফ ক্যাপ্টেনকে ফ্যালন জিজ্ঞেস করলেন, বর্তমান পজিশন?
গ্রিক কোস্ট সামনেই। কোনও সমস্যা, আড্রিয়ান?
আরে নাহ।
পালফ্রে ফিরে এলেন যাত্রী তালিকা নিয়ে। 30C আসনের যাত্রীর নাম কেভিন ডোনোভান।
আর অপর যাত্রী? বড়লোকটি?
মনে হয় তাঁকে আমি দেখেছি। বললেন পালফ্রে। ফার্স্ট ক্লাস, সিট 2K, তিনি প্যাসেঞ্জার লিস্টে আঙুল বুলালেন। এঁর নাম মি. হিউগো সিমুর।
লাফ মেরে কোনও উপসংহারে পৌঁছানোর আগে নিশ্চিত হও, বললেন ক্যাপ্টেন। ফার্স্ট ক্লাস এবং ক্লাব ক্লাসে ভালোভাবে খোঁজ নাও! ওয়ারড্রোবে ক্রিম সিল্কের জ্যাকেটের খোঁজ করো।