ত্রিশ সেকেণ্ড পরে তার সঙ্গে যোগ দিলেন আরেকজন। হিগিন্স সতর্ক হয়ে উঠল। এ মানুষটি হিপ্পি থেকে একদমই আলাদা। তার চেহারায়। আভিজাত্য এবং বড়লোকি চালচলন পরিষ্কার ফুটে বেরুচ্ছে। ইনি সামনের ক্লাব কিংবা প্রথম শ্রেণীর আসন থেকে এসেছেন। কিন্তু কেন?
গ্যালির আলোতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় মানুষটির পরনে ক্রিম সুটের ট্রাউজার্স, সিল্ক শার্ট, গলায় ঢিলে করে বাঁধা টাইটিও সিল্কের। এ নিশ্চয় প্রথম শ্রেণীর যাত্রী। তিনি কি এতদূর এসেছেন প্রাতঃকৃত্য সারতে?
তারপর ওরা দুজনে কথা বলতে শুরু করল। মি. বড়লোক এবং হিপ্পি। নিচু গলায়, ভঙ্গিটা জরুরি। বড়লোক মানুষটিই মূলতঃ হিপ্পির দিকে ঝুঁকে কথা বললেন, সে শুধু অসংখ্যবার মাথা দুলিয়ে ভদ্রলোকের কথায় সায় দিয়ে গেল। শরীরী ভাষা বলছে বড়লোকটি হিপ্পিকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছেন আর হিপ্পি মাথা ঝাঁকিয়ে রাজি হয়ে যাচ্ছে তাঁর প্রতিটি কথায়।
জন হিগিন্স সেই ধরনের মানুষ যারা সবসময় পড়শীরা কে কী করছে তার সুলুক সন্ধান রাখে এবং সবকিছুর মধ্যেই একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ শোকার চেষ্টা করে। এবারেও তাই ঘটল।
সে ভাবছিল মি. বড়লোকের যদি পায়খানায় যাওয়ার দরকার হতো তাহলে তিনি প্রথম শ্রেণী এবং ক্লাব ক্লাসের পাঁচ/ছটি ল্যাভেটরির যে কোনও একটিতে যেতে পারতেন। এই অসময়ে নিশ্চয় সবগুলো পায়খানা দখল হয়ে থাকবে না। না, ওরা এ জায়গাটি এবং এ সময়টি বেছে নিয়েছে কথা বলার জন্য। এরা স্রেফ আজাইরা প্যাচাল পাড়তে আসেনি, যেমনটি পায়খানা বা অন্য লাইনে দাঁড়ানো মানুষজন করে সময় কাটানোর জন্য।
ওরা বিচ্ছিন্ন হলো। সিল্ক শার্ট অদৃশ্য হয়ে গেলেন দৃশ্যপট থেকে, ফিরে গেলেন সামনে, তাঁর আসনে। হিপ্পি কোনো ল্যাভেটরিতেই ঢুকল না, চলে এল নিজের সিটে। জন হিগিন্সের মাথায় তখন চিন্তার ঝড়। বুঝতে পারছে সে একটি অদ্ভুত তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেছে যদিও জানে না বিষয়টি কী। সে চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরল হিপ্পিকে চারপাশের অন্ধকারে নজর বুলাতে দেখে। কেউ তাকে দেখে ফেলেছে কিনা, নিশ্চিত হতে চাইছে বোধহয়।
দশ মিনিট বাদে তার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেল জন হিগিন্স। এ লোক দুটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এখানে সাক্ষাত করেছে। হয়তো বড়লোকটি কোনও স্টুয়ার্ডেসের মারফত হিপ্পির কাছে চিরকুট পাঠিয়েছিলেন এ সময়টায় তিনি ওর সঙ্গে দেখা করবেন। যদিও হিগিন্স কোনও স্টুয়ার্ডেসকে হিপ্পির কাছে কোনও চিরকুট দিতে দেখেনি। তবে?
এমনও হতে পারে ওরা দুজন থাইল্যাণ্ডে বসেই এ বিশেষ মুহূর্তটির কথা ঠিক করে রেখেছিল। কিন্তু কেন? কিছু আলোচনা করার জন্য? কোনও প্রগেস রিপোর্ট দেবে? হিপ্পি কি ব্যবসায়ীটির পিএ? অবশ্যই না। কোনও ধনবান ব্যবসায়ীর প্রাইভেট সেক্রেটারি অমন ফকিরনির মতো পোশাক পরে না। হিগিন্সের মনে সন্দেহ গাঢ়তর হলো।
রাত এগারোটা। লণ্ডন। বিল বাটলার তার ঘুমন্ত স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিভিয়ে দিল ঘরের বাতি। সে ভোর সাড়ে চারটায় অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছে। সোয়া পাঁচটায় সে হিথ্রো বিমান বন্দরে পৌঁছাবে। এ সময়টুকু হাতমুখ ধুয়ে, কাপড় পরে, গাড়ি চড়ে রওয়ানার জন্য যথেষ্ট। তার টাচডাউনের সময় সকাল সোয়া ছয়টা। এরপরে কী ঘটবে না ঘটবে পুরোটাই জানে ভাগ্য।
সারাটা দিন প্রচুর পরিশ্রম গেছে। কোন দিনই বা যায় না? ক্লান্ত হলেও ঘুম আসছিল না বাটলারের। মনে চিন্তার স্রোত।
Us Drug Entarcement Administration 7 DEAs Talicsta এক সহকর্মীর আভাস পাবার পরেই শুরু হয়েছে হান্ট।
ব্রিটিশ আইলের নব্বই ভাগ এবং পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চলে হেরোইনের যে চালানটা আসে তা টার্কিশ। এ ব্যবসা নির্দয় ধূর্ততার সঙ্গে পরিচালনা করছে তুর্কি মাফিয়া, এরা খুবই হিংস্র যদিও সবসময় লো প্রোফাইলে থাকে বলে বেশিরভাগ ব্রিটিশ এদের ব্যাপারে কিছু জানে না।
এদের প্রডাক্ট আসে আনাটলিয়ার পপি ফুল থেকে। দেখায় অশোধিত বাদামী রঙের চিনির মতো। মোমবাতির আগুনে টিনফয়েলে এ জিনিস রেখে গরম করে ধোয়া টেনে নেয় মাদকসেবীরা। ব্রিটিশ মাদকাসক্তরা শরীরে খুব কমই ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে, আমেরিকানরা করে।
গোল্ডেন ট্রায়ালে এবং ফান ইস্টার্ন ট্রাফিক এই টার্কিশ ডোপ উৎপাদন করে না, এটি থাইল্যাণ্ড হোয়াইট নামে পরিচিত, দেখতে লাগে বেকিং পাউডার। এ জিনিসটি আমেরিকানদের খুব পছন্দ।
DEA বাটলারকে জানিয়েছে তাদের এক আণ্ডারওয়ার্ল্ড সোর্স বলেছে গত ছয় মাসে ব্রিটেনে ছয় কেজি খাঁটি কলম্বিয়ান কোকেন এবং দুই কিলো থাই হোয়াইট পাঠানো হয়েছে এক ক্যারিয়ার বা মিউল-এর মাধ্যমে।
পরিমাণটি বিরাট কিছু না হলেও ফেলে দেয়ার মতো নয়। প্রতি ট্রিপে ব্রিটিশ অর্গানাইজার ২০০,০০০ পাউণ্ড করে পেয়েছে। পরিমাণ শুনে বিল বাটলার বুঝতে পেরেছে এ জিনিস জাহাজ কিংবা ট্রাকে করে আসেনি, এসেছে আকাশ পথে। প্যাসেঞ্জার ব্যাগেজে। সে এবার ঘুরে শুয়ে চার ঘণ্টার ঘুম ঘুমাবার চেষ্টা করল।
.
ঘুমাতে পারছে না জন হিগিন্সও। তাদের বিমান যখন পূর্ব তুরস্কের আনাটলিয়ার পথে, ওইসময় সে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মাথার ওপরের র্যাক থেকে নিজের অ্যাটাচি কেসটি নামিয়ে আনল। কেউ নড়াচড়া করছে না, এমনকী হিপ্পিও না।