আইলের দিকে মাথা তুলে তাকাতেই দেখতে পেল সেই হিপ্পিটা ওদের চার সারি সামনে বসেছে। ৩০৪ তে। তার সামনে দীর্ঘ প্যাসেজ বাল্কহেড পর্যন্ত ঠেকেছে। ওখানে ক্লাব ক্লাস আলাদা করে ফেলেছে ইকোনমি ক্লাসকে। এদিকে কমপ্লিট একটি গ্যালি রয়েছে চারটে ল্যাভেটরিসহ। হিগিন্স দেখতে পাচ্ছে চার-পাঁচজন স্টুয়ার্ডেস রাতের খাবার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সে ছয় ঘন্টা আগে হোটেল রুমে বসে স্ন্যাক খেয়েছে। তারপর আর দানাপানি পড়েনি পেটে। খিদেও পেয়েছে। সে জুলির দিকে তাকাল, ও আরামে বসতে পরেছে কিনা দেখতে। মেয়েকে কার্টুন চ্যানেল ছেড়ে দিল।
.
ব্যাংকক থেকে টেক অফ করে উত্তর অভিমুখে চলেছেন ক্যাপ্টেন ফ্যালন। নিচের দিকে তাকালেন। পরিষ্কার রাত। তাদের পেছনে গালফ অব। থাইল্যান্ড, সামনে দেশটির আয়তন সমান ছড়িয়ে রয়েছে আন্দামান সাগর। চাঁদের আলোয় জলমগ্ন ধানক্ষেতগুলো দেখলে মনে হয় গোটা দেশ জল দিয়ে তৈরি। স্পিডবার্ড ওয়ান জিরো ৩১০০০ ফুট উচ্চতায় উড়ে চলেছে। লন্ডন যেতে একে একে পার হবে কলকাতা, দিল্লি, কাবুল, তেহরান, পূর্ব তুরষ্ক, বলকান এবং জার্মানি। তিনি স্পিডবার্ড ওয়ান জিরোকে অটো পাইলটে দিলেন, হাত-পা টানটান করলেন। আপার ডেকের এক স্টুয়ার্ডেস তার জন্য কফি নিয়ে এল।
.
৩০সি-র হিপ্পি লেট নাইট ডিনারের মেনুকার্ড দেখছে। খাওয়ার প্রতি তার তেমন আগ্রহ নেই। এ মুহূর্তে একটি সিগারেটে সুখটান দিতে পারলে খুব ভালো হতো। তবে এখনই এ সুযোগ নেই। পরে সুযোগ পেলে সে গাঁজা ভরা একটি সিগারেট খাবে।
গরুর মাংস আনুন, পাশে দাঁড়ানো হাসিমুখের স্টুয়ার্ডেসকে উদ্দেশ্য করে বলল সে। তার উচ্চারণে আমেরিকান টান থাকলেও পাসপোর্ট বলছে সে একজন কানাডিয়ান, নাম ডোনোভান।
.
পশ্চিম লন্ডনে, সশস্ত্র রক্ষী দ্বারা সুরক্ষিত একটি অফিসে ফোন বেজে উঠল। ডেস্কে বসা লোকটি ঘড়ি দেখল। সাড়ে পাঁচটা বাজে কিন্তু এখনই সাঁঝের আঁধার ঘনিয়েছে।
ইয়েস।
বস, BA 0-1-0 ব্যাংকক থেকে উড়াল দিয়েছে।
ধন্যবাদ।
সে ফোন রেখে দিল। উইলিয়াম বিল বাটলার ফোনে কথা বলে সময় নষ্ট করার মানুষ নয়। আসলে সে এমনিতেও খুব কম কথা বলে। সবাই এ কথা জানে। তারা এও জানে যারা ভালো কাজ দেখাতে পারে তাদের প্রতি সে সদয় থাকে আর অকর্মাদের প্রতি তার আচরণ অত্যন্ত বিরূপ।
তবে একটি কথা কেউ জানে না তা হলো তার ফুটফুটে একটি মেয়ে ছিল, তার অহংকার, মেয়েটি স্কলারশিপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল কিন্তু হেরোইনের ওভারডোজ খেয়ে মারা যায়। বিল কাটলার হেরোইন একদমই পছন্দ করে না। সে আরও ঘৃণা করে হেরোইন ব্যবসায়ীদেরকে। এ কারণে হেরোইন ব্যবসায়ীদের যমে পরিণত হয়েছে সে। তার বিভাগ HM কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজের পক্ষে হার্ড ড্রাগসের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করে চলেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করাই বাটলারের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
.
পাঁচ ঘণ্টা পর। স্পিড়বার্ড ওয়ান জিরো এ মুহূর্তে কাবুল এবং কান্দাহার পার হয়ে উত্তরে পানশির পর্বতমালার দিকে চলেছে। ওখানে ধর্মোন্মাদ তালেবানদের বাস।
প্লেনের যাত্রীরা ডিনার সেরে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সবগুলো জানালার পর্দা ফেলা, বাতির আলো কমানো, গায়ে পাতলা কম্বল। যারা ঘুমায়নি তারা ইন ফ্লাইট মুভি দেখছে, কেউ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।
34Gতে মিসেস হিগিন্স ঘুমিয়ে পড়েছে, চিবুক পর্যন্ত টেনে দেয়া ব্ল্যাঙ্কেট, মুখ অর্ধেক খোলা, প্রশান্ত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। E এর F সিটদুটোর আর্মরেস্ট সরিয়ে, ওটাকে একটি আসনে রূপান্তরিত করে তাতে হাত পা ছড়িয়ে, বুকে পুতুল চেপে আরাম করে ঘুমাচ্ছে জুলি।
তবে ঘুম নেই জন হিগিন্সের চোখে। সে প্লেনে কখনও ঘুমাতেও পারে না। যতই ক্লান্ত লাগুক শরীর, জেগে থাকে। এ মুহূর্তে সে থাইল্যান্ডে তাদের ছুটি কাটানোর কথা ভাবছিল। একটি প্যাকেজ ট্যুরে গিয়েছিল সে ওখানে। নইলে ইনসিওরেন্স কোম্পানির একজন কেরানির পক্ষে সপরিবারে দূরপ্রাচ্য ভ্রমণে যাওয়ার সাধ্য কোথায়?
তারা ফুকেট আইল্যাণ্ডের পানসিয়া হোটেলে উঠেছিল। জুলিকে নিয়ে সৈকতে সাঁতার কেটেছে, কোরাল রিফে রঙিন মাছ দেখে খুশিতে মেয়ের কী চিৎকার! সে হোটেল শপ থেকে জুলিকে ওই পুতুলটি কিনে দিয়েছে।
ফুকেটের কথা ভাবতে ভাবতে ঝিমুনি এসে গিয়েছিল জন হিগিন্সের। প্লেন একটি ছোট্ট এয়ার টার্বুলেন্সের মধ্যে পড়ে ঝাঁকি খেতে ঘুমঘুম ভাবটা কেটে গেল, সে সভয়ে চেপে ধরল সিটের আর্মরেস্ট।
হিগিন্স দেখল চার সারি সামনে হিপ্পিটা জেগে গেছে। সে ঘড়ি দেখল, কম্বলের মধ্যে নড়েচড়ে বসল। তারপর সিধে হলো।
হিপ্পি চারপাশে একবার চোখ বুলাল কেউ তাকে লক্ষ করছে কিনা দেখার জন্য। তারপর আইল ধরে বাল্কহেডের দিকে এগুলো। এখানে একটি পর্দা আছে তবে আধ গোটানো, গ্যালি এরিয়া থেকে এক ফালি আলো এসে পড়েছে। আলোতে দেখা যাচ্ছে এক টুকরো কার্পেট এবং দুটো ল্যাভেটরি ডোর। হিপ্পি দরজায় পা বাড়াল, দুটির দিকেই একে একে তাকাল তবে খুলবার কোনো লক্ষণ নেই তার মধ্যে। নিশ্চয় ভেতরে লোক আছে, ভাবল হিগিন্স, যদিও সে পায়খানায় কাউকে যেতে দেখেনি। হিপ্পি একটি ল্যাভেটরির দরজায় হেলান দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।