জি, স্যার ম্যাথিউ। পার্কমিড হাসপাতালে আমি প্রায় দুই সপ্তাহ ছিলাম। গির্জার যাজক প্রতিদিন আমাকে দেখতে আসত। ওর কাছে জানতে চেয়েছিলাম ব্রুস আমাকে ছাড়া কীভাবে চলছে।
আপনার কাছে কি ব্যাপারটি বিস্ময়কর মনে হয়নি হাসপাতালে থাকাকালীন আপনার স্বামী একটিবারের জন্যও আপনাকে দেখতে আসেননি? জিজ্ঞেস করলেন স্যার ম্যাথিউ। তিনি ধীরে ধীরে তাঁর কফির কাপটি টেবিলের কিনারে ঠেলে দিচ্ছিলেন।
না। আমি বিভিন্ন সময় ওকে হুমকি দিয়েছিলাম ওকে ছেড়ে চলে যাব এবং আমার মনে হয় না… কাপটা খসে পড়ল টেবিল থেকে এবং পাথুরে মেঝেতে পড়ে বিকট শব্দে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
লাফিয়ে উঠলেন মিসেস ব্যাঙ্কস তবে ভাঙা কাপের দিকে ফিরে তাকালেন না।
আপনি ঠিক আছেন তো, মি. ক্যাসন? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
দোষটা আমার, বললেন স্যার ম্যাথিউ। বড্ড আনাড়ি আমি।
ক্যাসন হাসি চেপে রাখলেন। উইদারিংটন পাথর মুখ করে থাকল।
প্লিজ বলে যান, স্যার ম্যাথিউ ঝুঁকে ভাঙা কাপের টুকরোগুলো তুলতে লাগলেন মেঝে থেকে। আপনি বলছিলেন আমার মনে হয় না..
ও, হাঁ, বললেন মিসেস ব্যাঙ্কস। আমার মনে হয় না আমি ফার্মে ফিরলাম কী ফিরলাম না তাতে ব্রুসের কিছু এসে যেত।
তা তো বটেই, টেবিলে কাপের ভাঙা টুকরোগুলো তুলে রাখলেন স্যার। ম্যাথিউ। আপনি কি আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারবেন পুলিশ কেন কুঠারের হাতলে আপনার একটি চুল খুঁজে পেয়েছিল যে অস্ত্রটি দিয়ে আপনার স্বামীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড করা হয়েছে?
জি, স্যার, ম্যাথিউ। আমি ব্যাখ্যা দিতে পারব। আমি ওর নাশতা বানানোর জন্য কিছু কাঠ কাটছিলাম চুল্লি ধরাব বলে।
তাহলে আমাকে এ প্রশ্নটি করতেই হচ্ছে কুঠারের হাতলে আপনার হাতের কোনো ছাপ ছিল না কেন, মিসেস ব্যাঙ্কস?
কারণ আমি গ্লাভস পরে কাজটি করছিলাম, স্যার ম্যাথিউ। আপনি যদি অক্টোবরের মাঝামাঝিতে কোনো খামারে সকাল পাঁচটার সময় কাজ করতে যান তাহলে বুঝতে পারবেন ঠাণ্ডা কাহাকে বলে।
এবারে ক্যাসন তাঁর মুখে হাসি ফুটতে দিলেন।
আপনার স্বামীর জামার কলারে যে রক্তের দাগ পাওয়া গেল তার ব্যাখ্যা কী? ক্রাউনের ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা বলছেন ওটা আপনার রক্ত?
আপনি ভালো করে চোখ বুলালে ওই বাড়ির অনেক কিছুর ওপরেই আমার শরীরের রক্তের দাগ দেখতে পাবেন, স্যার ম্যাথিউ।
আর বেলচায় যে আপনার হাতের ছাপ ভর্তি? ওইদিন সকালে নাশতা বানানোর আগে কি কোনো খোঁড়াখুঁড়ি করছিলেন?
না। তবে তার আগের সপ্তাহে প্রতিদিনই আমাকে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়েছে।
ও, আচ্ছা, বললেন স্যার ম্যাথিউ। এবারে অন্য একটি বিষয় নিয়ে কথা বলব যে কাজটি বোধহয় আপনাকে প্রতিদিন করতে হয় না। বিশেষ করে স্ট্রিকনিন কেনার বিষয়টি। প্রথমত, মিসেস ব্যাঙ্কস, আপনার এতটা বিষ কেনার দরকার পড়ল কেন? দ্বিতীয়ত, এ জিনিস কিনতে সাতাশ মাইলের দূরের রিডিং শহরেই বা গেলেন কেন?
আমি প্রতি বৃহস্পতিবারে রিডিংয়ে কেনাকাটা করতে যাই, ব্যাখ্যা দিলেন মিসেস ব্যাঙ্কস। আশপাশে অ্যাগ্রিকালচারাল কোনো সাপ্লায়ার নেই।
স্যার ম্যাথিউর কপালে ভাঁজ পড়ল। তিনি আসন ছাড়লেন। মন্থর গতিতে মিসেস ব্যাঙ্কসকে বৃত্তাকারে ঘুরতে লাগলেন। ওদিকে ক্যাসন একঠায় তাকিয়ে রইলেন মিসেস ব্যাঙ্কসের চোখের দিকে। কিন্তু চোখজোড়া অপলক একদিকেই চেয়ে আছে।
স্যার ম্যাথিউ তাঁর ক্লায়েন্টের পেছনে এসে দাঁড়ালেন। ঘড়ি দেখলেন। সকাল ১১:১৭। তিনি জানেন তার টাইমিং হতে হবে নিখুঁত কারণ তিনি নিশ্চিত শুধু চতুর নয়, অসম্ভব ধূর্ত এক মহিলার সঙ্গে কাজ করছেন। ভুলে যেয়ো না, নিজেকে মনে মনে বললেন তিনি, ব্রুস ব্যাঙ্কসের মতো পাজি লোকের সঙ্গে যে এগারো বছর ঘর সংসার করতে পারে, টিকে থাকতে তাকে ধূর্ততার পরিচয় দিতেই হবে।
আপনি কিন্তু এখনো বললেন না কেন অতটা বিপুল পরিমাণের স্ট্রিকনিন আপনার দরকার হয়েছিল, ক্লায়েন্টের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই বললেন তিনি।
আমাদের অনেকগুলো মুরগি মারা যাচ্ছিল, জবাব দিলেন মিসেস ব্যাঙ্কস বিন্দুমাত্র মাথা না নাড়িয়ে। আমার স্বামীর ধারণা ছিল এসব ইঁদুরের কাজ। ওরাই মুরগিগুলোকে মেরে ফেলছে। সে ইঁদুর মারার জন্য আমাকে বেশি পরিমাণে বিষ কিনে আনতে বলে। চিরতরে নিকেশ করো ঠিক এ কথাটাই বলেছিল সে।
কিন্তু শেষে দেখা যাচ্ছে আপনার স্বামীই নিকেশ হয়ে গেলেন। চিরতরে –এবং নিঃসন্দেহে ওই একই বিষ প্রয়োগে। বললেন স্যার ম্যাথিউ।
রুপার্টের নিরাপত্তা নিয়েও আমি চিন্তিত ছিলাম, কাউন্সেলের ব্যাঙ্গোক্তি এড়িয়ে গেলেন মিসেস ব্যাঙ্কস।
কিন্তু ওই সময় তো আপনার ছেলে বোর্ডিং স্কুলে ছিল, নয় কি?
জি। তবে ওই সপ্তাহের ছুটিতে ওর বাড়ি ফেরার কথা ছিল।
আপনি ওই সাপ্লায়ারের দোকানে আগে কখনো গিয়েছিলেন?
নিয়মিতই যাই, বললেন মিসেস ব্যাঙ্কস। স্যার ম্যাথিউ আরেকটা চক্কর দিয়ে আবার তার সামনে এসে দাঁড়ালেন।
মাসে অন্তত একবার ওই দোকানে যাওয়া হয় আমার, ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। তিনি মাথাটা ডানদিকে একটু ঘোরালেন।
স্যার ম্যাথিউ নিশ্চুপ রইলেন। আরেকবার ঘড়ি দেখার ইচ্ছেটি দমন করলেন। তিনি জানেন আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটনাটি ঘটবে। একটু পরেই ইন্টারভিউ রুমের দূর প্রান্তের দরজাটি খুলে গেল এবং বছর নয়ের একটি বাচ্চা ঘরে ঢুকল।