কিন্তু তিনি তো নিজেকে নিরপরাধ বলে সবসময়ই দাবি করছেন। তাহলে কীভাবে কী হবে? জানতে চাইলেন ক্যাসন।
স্যার ম্যাথিউর মুখে এক টুকরো হাসি ফুটল। মি. উইদারিংটন এবং আমার একটা প্ল্যান আছে, তাই না, হিউ? উইদারিংটনের দিকে দ্বিতীয়বার ঘুরলেন তিনি।
জি, স্যার ম্যাথিউ, জবাব দিল তরুণ ব্যারিস্টার। খুশি কারণ অবশেষে তার মতামত চাওয়া হয়েছে, যদিও দায়সারাভাবে। স্যার ম্যাথিউ পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো কু দিলেন না বলে ক্যাসনও জানার জন্য চাপাচাপি করলেন না।
তাহলে কবে আমরা আমাদের মক্কেলের মুখোমুখি হচ্ছি? সলিসিটরের দিকে মনোযোগ ফেরালেন স্যার ম্যাথিউ।
সোমবার সকাল এগারোটায় যেতে পারবেন? প্রশ্ন করলেন ক্যাসন।
এ মুহূর্তে তিনি আছেন কোথায়? ডায়েরির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে জানতে চাইলেন স্যার ম্যাথিউ।
হলোওয়েতে, জবাব দিলেন ক্যাসন।
তাহলে আমরা সোমবার সকাল এগারোটায় হলোওয়েতে যাব। বললেন স্যার ম্যাথিউ। এবং সত্যি বলতে কী, মিসেস মেরি ব্যাঙ্কসের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমার আর তর সইছে না। ওই মহিলার সাহস আছে বটে, আর কল্পনা শক্তির কথা তো বাদই দিলাম। আমার কথাটা মার্ক করে রাখুন, মি. ক্যাসন, যে কোনো কাউন্সেলের জন্য তিনি নিজেকে দারুণ প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন।
.
হলোওয়েতে কারাগারের ইন্টারভিউ রুমে স্যার ম্যাথিউ প্রবেশ করে এই প্রথম মেরি ব্যাঙ্কসকে দেখলেন এবং চমকে গেলেন। কেস ফাইলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি জানেন ভদ্রমহিলার বয়স সাঁইত্রিশ, তবে তাঁর সামনে কোলে হাত রেখে পলকা এবং ভঙ্গুর চেহারার, ধূসর চুলের যে মহিলাটি বসে আছেন দেখে মনে হচ্ছে তাঁর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। তবে ভদ্রমহিলার চমৎকার চোয়ালের গঠন এবং ছিপছিপে দেহ দেখে অনুমান করা যায় একদা তিনি বেশ সুন্দরী ছিলেন।
ক্রিম কালারের ইটের কামরাটির মাঝখানে একটি ফরমিকা টেবিল আর খান কয়েক চেয়ার ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই। ক্যাসন স্যার ম্যাথিউকে মিসেস ব্যাঙ্কসের বিপরীত দিকের চেয়ারটিতে বসতে বললেন। ঘরের একমাত্র জানালা দিয়ে এক ঝলক আলো আসছে। আললাটি সরাসরি পড়েছে মিসেস ব্যাঙ্কসের গায়ে। স্যার ম্যাথিউ এবং জুনিয়র সলিসিটরের দুই পাশে বসলেন। প্রধান কাউন্সেল শব্দ করে এক কাপ কফি ঢেলে নিলেন নিজের জন্য।
গুড মর্নিং, মিসেস ব্যাঙ্কস, বললেন ক্যাসন।
গুড মর্নিং, মি. ক্যাসন, প্রত্যুত্তর দিলেন ভদ্রমহিলা, যেদিক থেকে কথা ভেসে এসেছে সেদিকে সামান্য মাথা ঘোরালেন। আপনি বোধহয় সঙ্গে কাউকে নিয়ে এসেছেন।
জি, মিসেস ব্যাঙ্কস। আমার সঙ্গে আছেন স্যার ম্যাথিউ রবার্টস কিউ সি, তিনি আপনার ডিফেন্স কাউন্সেল হিসেবে কাজ করবেন।
মিসেস ব্যাঙ্কস সামান্য মাথা ঝাঁকালেন। স্যার ম্যাথিউ চেয়ার ছেড়ে সিধে হলেন, এক কদম সামনে বেড়ে বললেন, গুড মর্নিং, মিসেস ব্যাঙ্কস। তারপর ঝট করে ডান হাতখানা বাড়িয়ে দিলেন সামনে।
গুড মর্নিং, স্যার ম্যাথিউ, জবাব দিলেন মিসেস ব্যাঙ্কস, তার মুখের একটি পেশীও কাঁপল না, এখন তাকিয়ে আছেন ক্যাসনের দিকে। আপনি আমার হয়ে মামলা লড়বেন জেনে খুবই খুশি হলাম।
আপনাকে স্যার ম্যাথিউ কিছু প্রশ্ন করতে চান, মিসেস ব্যাঙ্কস, বললেন ক্যাসন। যাতে তিনি ঠিক করতে পারবেন কীভাবে আপনার মামলাটি নিয়ে এগোবেন। প্রসিকিউশনের কাউন্সেলের ভূমিকা পালন করবেন তিনি, যাতে আপনি বুঝতে পারেন উইটনেস বক্সে কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
বুঝতে পারছি, প্রত্যত্তরে বললেন মিসেস ব্যাঙ্কস। আমি স্যার ম্যাথিউর যে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে পারলে খুশিই হবো। আমি নিশ্চিত তাঁর মতো একজন খ্যাতিমান মানুষের পক্ষে এ কথা প্রমাণ করা কঠিন হবে না যে একজন পলকা শরীরের অন্ধ মেয়ে মানুষের পক্ষে ষোল স্টোন ওজনের একজন পুরুষকে কুপিয়ে হত্যা করা সম্ভব নয়।
যদি কিনা সেই দুশ্চরিত্র ষোল স্টোন ওজনের মানুষটিকে কোপানোর আগে বিষ খাইয়ে দেয়া হয়, মৃদু গলায় বললেন স্যার ম্যাথিউ।
যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেই জায়গা থেকে পাঁচ মাইল দূরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা কেউ যদি এমন কাজ করতে পারে তাহলে তার হিম্মত আছে স্বীকার করতেই হবে, জবাবে বললেন মিসেস ব্যাঙ্কস।
অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় যদি সত্যি সেটা ঘটে থাকে, বললেন স্যার ম্যাথিউ। আপনি বলছেন মাথার পাশে আঘাত পেয়ে আপনি অন্ধ। হয়ে গেছেন।
জি, স্যার ম্যাথিউ। আমি নাশতা বানানোর সময় আমার স্বামী উনুন থেকে ফ্রাইং প্যানটি তুলে নিয়ে ওটা দিয়ে আমাকে আঘাত করে। আমি মাথা নুইয়ে ফেলেছিলাম, তবে প্যানের কিনারা বাড়ি খায় আমার মুখের বাম পাশে। তিনি বাম চোখের ওপরে একটি দাগে হাত ছোঁয়ালেন। গভীর ক্ষতচিহ্ন। সারাজীবনই হয়তো ওটা তাঁকে বয়ে বেড়াতে হবে।
তারপর কী হলো?
আমি রান্নাঘরের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে টের পাই কেউ এসেছে ঘরে। তবে লোকটা কে বুঝতে পারছিলাম না তার কণ্ঠ শোনার আগ পর্যন্ত। লোকটা ছিল জ্যাক পেমব্রিক, আমাদের পোস্টম্যান। সে আমাকে কোলে করে তার গাড়িতে তোলে এবং লোকাল হসপিটালে নিয়ে যায়।
আর আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন পুলিশ আপনার স্বামীর লাশ উদ্ধার করে?