এবং আপনাকে কনভিন্স করার শেষ সুযোগটি রয়েছে মিসেস ব্যাঙ্কসের। বললেন মি. ক্যাসন।
বেড়ে বলেছেন, বন্ধুর সরস প্রত্যুত্তরের জবাবে মাথা ঝাঁকালেন স্যার ম্যাথিউ। তাঁর মনে হচ্ছে পুরানো বন্ধুটির সঙ্গে এই তরবারি খেলায় তিনি হেরে যাচ্ছেন। এখন প্রত্যাঘাতের সময় এসেছে।
তিনি ডেস্কের খোলা ফাইলে নজর ফেরালেন। প্রথমত, তিনি সরাসরি তাকালেন ক্যাসনের দিকে যেন সহকর্মীটি রয়েছেন কাঠগড়ায়, মাটি খুঁড়ে লাশ বের করার সময় মৃত ব্যক্তিটির জামার কলারে আপনার মক্কেলের রক্ত লেগে ছিল।
আমার মক্কেল তা মেনেও নিয়েছেন, নিজের নোটগুলোতে চোখ বুলাতে বুলাতে শান্ত গলায় বললেন ক্যাসন। তবে…
দ্বিতীয়ত, ক্যাসনকে কিছু বলার সুযোগ দিলেন না স্যার ম্যাথিউ। যে অস্ত্রটি দিয়ে তার শরীর টুকরো টুকরো করা হয়, একটি কুঠার, সেটি পরদিন খুঁজে পাওয়া যায় এবং ওটার হাতলে মিসেস ব্যাঙ্কসের মাথার চুল পাওয়া গেছে।
আমরা তাও অস্বীকার করছি না, বললেন ক্যাসন।
আমাদের বাছাই করার মতো বেশি জিনিস নেই, বললেন স্যার ম্যাথিউ, চেয়ার থেকে উঠে ঘরে পায়চারি শুরু করলেন। এবং তৃতীয়ত, যে বেলচা দিয়ে ভিক্টিমের কবর খোঁড়া হয় সেটিরও অবশেষে সন্ধান মিলেছে। এবং তাতে আপনার মক্কেলের হাতের ছাপ ছিল সর্বত্র।
আমরা এটিরও ব্যাখ্যা দিতে পারি, বললেন ক্যাসন।
কিন্তু জুরিরা কি আমাদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করবেন, গলার স্বর চড়ালেন স্যার ম্যাথিউ, যখন তারা জানবেন খুন হওয়া লোকটির সহিংসতার লম্বা একটি রেকর্ড রয়েছে, আপনার মক্কেলকে স্থানীয় গায়ে প্রায়ই আহত অবস্থায় দেখা গেছে, গায়ে ক্ষতচিহ্ন, চোখের নিচে কালশিটে, মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে– এমনকী একবার তার ভাঙা হাতেরও পরিচর্যা করা হয়?
আমার মক্কেল সবসময়ই বলে আসছেন ওসব ক্ষতচিহ্নের সৃষ্টি হয়েছে। খামারে কাজ করার সময়। আর তাঁর স্বামী ছিলেন ওই খামারের ম্যানেজার।
কিন্তু এসব ব্যাখ্যা আমার বিশ্বাসের জায়গায় একটা দাগ ফেলেছে যার বিরোধিতা করা একেবারেই অসম্ভব, বললেন স্যার ম্যাথিউ। ঘরময় চক্কর শেষে নিজের চেয়ারে ফিরে এসেছেন। ওই খামারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মাত্র একজনের –এক পোস্টম্যানের। গায়ের আর কারও খামারের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকাই নিষেধ ছিল। তিনি তাঁর নোটের আরেকটি পৃষ্ঠা ওল্টালেন।
এ কারণেই হয়তো কারও পক্ষে খামারে ঢুকে ব্যাঙ্কসকে হত্যা করা ছিল সহজ, আলটপকা বলে উঠল উইদারিংটন।
জুনিয়রের দিকে বিস্ময় মিশ্রিত দৃষ্টি দিয়ে না তাকিয়ে পারলেন না স্যার ম্যাথিউ। ছেলেটা যে এখানে আছে তিনি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট, মন্তব্য করলেন তিনি। তারপর বলে চললেন, পরবর্তী যে সমস্যাটির আমরা মুখোমুখি হবে তা হলো আপনার মক্কেলের দাবি তাঁর স্বামী তাঁকে গরম ফ্রাইং প্যান দিয়ে আঘাত করার দরুণ তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। বেশ সুবিধাজনক ব্যাখ্যা, মি. ক্যাসন, কী বলেন?
আমার মক্কেলের মুখের এক পাশে সেই ক্ষত চিহ্ন এখনো পরিষ্কার রয়েছে, বললেন ক্যাসন। আর ডাক্তাররা বলেছেন তিনি সত্যি অন্ধ হয়ে গেছেন।
বিচারক এবং কাউন্সেলদের কাছে অনুযোগ করার চেয়ে ঢের সহজ ডাক্তারদেরকে বোঝানো, মি. ক্যাসন, ফাইলের আরেকটি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বললেন স্যার ম্যাথিউ। নেক্সট, লাশের স্যাম্পল যখন পরীক্ষা করা হয়–সৃষ্টিকর্তা জানেন এমন কঠিন কাজটি কে করে–রক্তে প্রচুর পরিমাণে স্ট্রিকনিনের আলামত মিলেছে যে বিষ খেলে একটা হাতিও কুপোকাত হয়ে যাবে।
এটি শুধুমাত্র ক্রাউন হাসপাতালের প্যাথলজিস্টদের মতামত, বললেন মি. ক্যাসন।
এবং আদালতে একটি বিষয় খণ্ডন করা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে যাবে, বললেন স্যার ম্যাথিউ, কারণ প্রসিকিউশনের কাউন্সেল মিসেস ব্যাঙ্কসকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন তিনি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে কেন রিডিংয়ে এক অ্যাগ্রিকালচারাল সাপ্লায়ারের কাছে গিয়েছিলেন চার গ্রাম স্ট্রিকনিন কিনতে। আমি কাউন্সেলের জায়গায় থাকলে অবশ্যই এ প্রশ্নটি বারবার জিজ্ঞেস করতাম।
হয়তো বা, নোটে চোখ বুলাতে বুলাতে বললেন ক্যাসন, তবে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন খামারে ইঁদুরের উৎপাত খুব বেড়ে গিয়েছিল। ওগুলো মুরগি মেরে ফেলছিল। মিসেস ব্যাঙ্কস ভয় পেয়েছিলেন ইঁদুরগুলো ফার্মের অন্যান্য প্রাণীগুলোর না আবার ক্ষতি করে। তিনি তাঁর নয় বছর বয়সী শিশু সন্তানটিকে নিয়েও চিন্তায় ছিলেন।
ও, হ্যাঁ, রুপার্ট। কিন্তু ও তো ওইসময় বোর্ডিং স্কুলে ছিল, নয় কি? বিরতি দিলেন স্যার ম্যাথিউ।
মি. ক্যাসন, আমার সমস্যাটি অতি সাধারণ। তিনি বন্ধ করলেন ফাইল। আমি আসলে ভদ্রমহিলাকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
ক্যাসনের একটি ভুরু উত্তোলিত হলো।
মিসেস ব্যাঙ্কস অত্যন্ত ধূর্ত একজন নারী। তিনি ইতিমধ্যে অনেককেই তার এ অবিশাস্য গল্প শুনিয়ে বোকা বানিয়েছেন। তবে মি. ক্যাসন, আপনাকে বলে রাখছি, উনি আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না।
কিন্তু আমরা কী করতে পারি, স্যার ম্যাথিউ, যদি মিসেস ব্যাঙ্কস তাঁর এ কেসে গোঁ ধরে থাকেন এবং তাঁর পক্ষে আমাদেরকে মামলাটি লড়তে অনুরোধ করেন? জিজ্ঞেস করলেন ক্যাসন।
আবার চেয়ার ছাড়লেন স্যার ম্যাথিউ এবং নিঃশব্দে পায়চারি করতে লাগলেন। শেষে সলিসিটরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন। তবে আশা করছি ভদ্রমহিলাটিকে মানুষহত্যার জন্য গিল্টি হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থনে কৈফিয়ত দিতে রাজি করাতে পারব। তাহলে আমরা যে কোনো জুরির সহানুভূতি অর্জনে সমর্থ হব, বিশেষ করে যে ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে তা জুরিরা শোনার পরে। শুনানী চলাকালীন নারীবাদী কোনো সংগঠনও আদালতে তাঁর পক্ষ নিতে পারে। কোনো বিচারক তাঁকে কঠোর কোনো সাজা দেয়ার চেষ্টা করলে প্রতিটি খবরের কাগজ সেই বিচারকের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগবে। তাঁকে অভিযুক্ত করা হবে উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং লিঙ্গ বৈষম্যকারী হিসেবে। তখন মিসেস ব্যাঙ্কসকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে দুই দিনও সময় লাগবে না। না, মি. ক্যাসন, ওনাকে গিল্টি প্লি তে রাজি করাতে হবে।