স্যার ম্যাথিউর ক্লার্ক দরজা খুলে ঘোষণা করল মি. বার্নার্ড ক্যাসন এবং মি. হিউ উইদারিংটন এসেছেন। দুজন একদম আলাদা স্বভাবের মানুষ, ওঁরা ভেতরে প্রবেশ করলে মনে মনে ভাবলেন স্যার ম্যাথিউ, তবে এ মামলায় উভয়েই তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
বার্নার্ড ক্যাসন পুরানো আমলের সলিসিটর ফর্মাল, শিষ্টাচারসম্পন্ন এবং সবসময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পটু। তিনি সারা বছর একইরকম সুট পরে থাকেন, পরিবর্তন হয় না কখনো। ম্যাথিউ প্রায়ই ভাবেন ভদ্রলোক সস্ত রি মার্কেট থেকে একইরকম আধডজন সুট কিনে রেখেছেন কি-না যা তিনি পালাক্রমে প্রতি সপ্তাহে পরিধান করেন।
তিনি তাঁর অর্ধচন্দ্রাকৃতির চশমার ওপর দিয়ে ক্যাসনের দিকে তাকালেন। আইনজীবীটির সরু গোঁফ এবং পরিপাটিভাবে আঁচড়ানো কেশ চেহারায় সেকেলে একটা ভাব এনে দিয়েছে যা অনেক প্রতিপক্ষকেই বোকা বানিয়ে দেয় যখন তাঁরা ভাবেন লোকটা দ্বিতীয় শ্রেণীর ব্রিটিশ নাগরিক। তবে স্যার ম্যাথিউ নিয়মিত ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভাগ্যিস তার বন্ধুটি কোনো পাবলিক স্পীকার নন, কারণ বার্নার্ড ব্যারিস্টার হলে আদালতে তাঁর বিপক্ষে দাঁড়ানোর স্বাদটি তিনি উপভোগ করতে পারতেন না।
ক্যাসনের এক কদম পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তার জুনিয়র কাউন্সেল হিউ উইদারিংটন। উইদারিংটন পৃথিবীতে আসার সময় সৃষ্টিকর্তা তার প্রতি খুব একটা হৃদ্যতা দেখাননি। কারণ ছেলেটার না আছে চেহারা না মস্তিষ্ক। ঈশ্বর ওকে যদি কোনো গুণ দিয়েও থাকেন, তাহলে তা এখনও আবিষ্কৃত বা প্রকাশিত হয়নি। বেশ কয়েকবার চেষ্টা-তদবিরের পরে উইদারিংটনকে বার এ সদস্যপদ দেয়া হয়েছে। এ মামলায় যখন উইদারিংটনের নাম জুনিয়র কাউন্সেল হিসেবে প্রস্তাব করা হয় তখন স্যার ম্যাথিউর ক্লার্কের কপালে ভাঁজ পড়েছিল, তবে প্রত্যুত্তরে স্যার ম্যাথিউ হাস্য করেছেন কেবল, কোনো ব্যাখ্যা প্রদানের প্রয়োজন বোধ করেননি।
আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন স্যার ম্যাথিউ, অ্যাশট্রেতে সিগারেটটার গলা টিপে মারলেন এবং উপস্থিত দুই অভ্যাগতকে ডেস্কের অপর পাশের খালি চেয়ারে বসার ইশারা করলেন। ওঁরা বসার পরে তিনি কথা বলতে শুরু করলেন।
আমার অফিসের আসার জন্য ধন্যবাদ, মি. ক্যাসন, বললেন তিনি। যদিও উভয়েই জানেন সলিসিটরটি বার এর সদস্যপদটি ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজ করেন না।
মাই প্লেজার, স্যার ম্যাথিউ, জবাবে বললেন বৃদ্ধ সলিসিটর। মৃদু বো করলেন দেখাতে এখনো তিনি পুরানো সৌজন্যবোধগুলো বজায় রেখেছেন।
আপনার বোধহয় হিউ উইদারিংটনের সঙ্গে পরিচয় নেই, সাদামাটা চেহারার তরুণ ব্যারিস্টারের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করলেন স্যার ম্যাথিউ। ও এ মামলায় আমাকে সাহায্য করছে।
উইদারিংটন নার্ভাস ভঙ্গিতে ব্রেস্ট পকেটে রাখা সিল্কের রুমালটি স্পর্শ করল।
না, মি. উইদারিংটনের সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচয়ের সৌভাগ্য হয়নি, করিডরে কেবলই দেখা হলো, বললেন ক্যাসন। আপনি এ মামলাটি নিয়েছেন বলে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছে, স্যার ম্যাথিউ।
বন্ধুর ফরমালিটিতে হাসলেন ম্যাথিউ। তিনি জানেন জুনিয়র কাউন্সেল উপস্থিত থাকাকালীন বার্নার্ড কখনোই তাকে তার ডাক নামে ডাকার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না। আপনার সঙ্গে আবার কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি বলে আমি খুবই খুশি, মি. ক্যাসন। যদিও এ মামলায় আপনি আমাকে একরকম চ্যালেঞ্জের মুখেই ফেলেছেন।
খেজুরে আলাপ শেষ, বৃদ্ধ সলিসিটর তার জরাজীর্ণ গ্লাডস্টোন ব্যাগ থেকে বাদামী রঙের একটি ফাইল বের করলেন। আপনার সাথে শেষবার দেখা হওয়ার পরে আমার ক্লায়েন্টের সঙ্গে আরেকবার কথা হয়েছে। তিনি ফাইলটি খুললেন, আপনার মতামত তাঁকে জানিয়েছি। তবে মিসেস ব্যাঙ্কস নট গিল্টির আবেদন করতে বদ্ধপরিকর।
তিনি তাহলে এখনো নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবি করছেন?
জি, স্যার ম্যাথিউ। মিসেস ব্যাঙ্কস জোর দিয়ে বলছেন তিনি খুনটি করেননি কারণ স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তাঁর স্বামী তাকে অন্ধ করে দেন। আর স্বামীর মৃত্যুর সময় তিনি স্থানীয় হাসপাতালে রোগিণী হিসেবে ভর্তি ছিলেন।
মৃত্যুর সময়টি নিয়ে প্যাথলজিস্টের রিপোর্ট অস্পষ্ট, পুরানো বন্ধুকে স্মরণ করিয়ে দিলেন স্যার ম্যাথিউ। লাশ আবিষ্কার হয়েছে বেশ কয়েকদিন পরে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মিসেস ব্যাঙ্কসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চব্বিশ কিংবা আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই হত্যাকাণ্ডটি সাধিত হয়।
আমিও ওদের রিপোর্ট পড়েছি, স্যার ম্যাথিউ, বললেন ক্যাসন। এবং এর তথ্য উপাত্তগুলো মিসেস ব্যাঙ্কসকে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি বারবার বলছেন এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই, এবং জুরিরা নাকি এ কথা বিশ্বাসও করবেন। বিশেষ করে যখন স্যার ম্যাথিউ রবার্টস আমার ডিফেন্ডার হিসেবে আছেন, ঠিক এ কথাগুলোই তিনি বলেছিলেন যদুর মনে পড়ে। হেসে যোগ করলেন তিনি।
শুনে আমি বিমোহিত হতে পারলাম না, আরেকটি সিগারেট ধরালেন স্যার ম্যাথিউ।
আপনি ভিক্টোরিয়াকে কথা দিয়েছিলেন– এক মুহূর্তের জন্য বর্ম নামিয়ে ফেললেন সলিসিটর। তবে ওই একবারই বললেন কথাটা।
তো তাঁকে কনভিন্স করার একটাই সুযোগ আছে আমার। বন্ধুর মন্তব্য গ্রাহ্যে আনলেন না স্যার ম্যাথিউ।