হেই, আমি রয়েস। বাড়িতে আছ নাকি, হ্যারী?
রয়েস ফেয়ারচাইল্ড!
কিভাবে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে জানে না মোনা, হঠাৎ দেখল। সে চলে এসেছে বেডরুমে। হাতে এখনও হাতুড়িটা। স্রেফ জমে গেল মোনা। এ হাতুড়ির কারণে তো সেও মারা পড়বে!
হ্যারী?
মোনা বিদ্যুৎগতিতে হাতুড়িটা বালিশের নিচে চালনা দিল। রয়েস ফেয়ারচাইল্ড সম্ভবত ইউটিলিটি রুমের কাছে চলে এসেছে। জোর করে শক্তি সঞ্চার করল মোনা, বলল, আসছি, রয়েস। টলতে টলতে সে পা বাড়াল সামনে।
রয়েস ফেয়ারচাইল্ড লম্বা, সুদর্শন তরুণ। ওর এক মাথা ঝাঁকড়া কালো চুলের দিকে চাইলেই বুক কেমন শিরশির করে মোনার। রয়েসের সপ্রতিভ উপস্থিতি সব সময়ই তাকে মুগ্ধ করে। রয়েস এই মুহূর্তে ইউটিলিটি রুমের স্ক্রীন ডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাসছে। বিশালদেহী রয়েসের সামনে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হলো মোনর।
হাই, আন্তরিক গলায় ডাকল রয়েস।
আমি বাথরুমে ছিলাম। হাসার চেষ্টা করল মোনা। জল পড়ার শব্দে তোমার গলা প্রথমে শুনতে পাইনি।
আজ রাতে তুমি আর হ্যারী কোথাও যাবার প্ল্যান করেছ? জানতে চাইল রয়েস।
নাহ্, বলল সে। আমার আর প্ল্যান করে কোথাও যাওয়া হয় না। তবে সন্ধ্যাবেলায় ডাউন টাউনে যাব ভাবছি। কিছু কেনাকাটা করতে হবে। তারপর নাইটশোতে আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে ছবি দেখব।
এত ব্যাখ্যার দরকার ছিল না, রয়েসের হাসি আরেকটু প্রসারিত হলো। ভেবেছিলাম রাতে হ্যারীর সঙ্গে কার রেস দেখতে যাব।
কিন্তু, আমি তো…
রয়েস ফেয়ারচাইল্ড চকিতে একবার মোনার দ্বিধান্বিত মুখের দিকে তাকাল, লক্ষ করল মোনা কনভার্টিবলটার দিকে চেয়েই চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। হ্যারী তো বাসায় আছে, তাই না? বেটি বলল কিছুক্ষণ আগে নাকি ও বাসায় ফিরেছে। ভাবলাম একবার জিজ্ঞেস করেই যাই ও আমার সঙ্গে যাবে কি-না।
কিন্তু হ্যারী তো ওষুধের দোকানে গেছে, অম্লান বদনে মিথ্যে কথাটা বলল মোনা।
তাই? একটু থেমে রয়েস বলল, কিন্তু ওকে তো বেরুতে দেখলাম না। ঠিক আছে, ও এলে একবার আমার বাসায় নক করতে বোলো।
আ-আচ্ছা বলব। গলাটা হঠাই যেন বসে গেল মোনার। দাঁড়িয়ে পড়ল রয়েস।
এনিথিং রং, মোনা? জ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল সে।
দুর্বলভাবে এদিক ওদিক মাথা নাড়ল মোনা, উপযুক্ত শব্দ হাতড়াচ্ছে প্রাণপণে। আ-আমি…মানে আমার শরীরটা ঠিক ভাল ঠেকছে না। সুইমিং পুলে সাঁতার কেটে আসার পর থেকে খারাপ লাগছে। যাকগে, এটা এমন কোন ব্যাপার নয়। রয়েস, তুমি…যদি কিছু মনে না করে গ্যারেজের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে যাবে?
অবশ্যই দেব।
মানে বলছিলাম কি, হ্যারীও নেই, আমি বাসায় একা। দরজাটা বন্ধ থাকলেও একটু কম চিন্তা থাকে।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। বলল রয়েস ফেয়ারচাইল্ড।
হ্যারীকে আমার কথা বলতে ভুলো না।
ভুলব না।
গ্যারেজের দরজা বন্ধ হবার শব্দ শুনল মোনা, গা ছেড়ে দিল স্ক্রীন ডোরের কবটে। ওর বুক ধুকধুক শব্দ করছে, পায়ে কোন জোর নেই। গ্যারেজের দরজা বন্ধ করার যুক্তিটা নিতান্তই খেলো ছিল, বুঝতে পারে। মোনা। কিন্তু এই মুহূর্তে নিরাপদে কাজ সারা তার খুবই প্রয়োজন
এখন দ্রুত কাজগুলো করতে হবে মোনাকে। রয়েস আবারও আসতে পারে। ইস্, আজ রাতেই কেন হ্যারীকে নিয়ে রেস দেখার ভূত চাপল ওর মাথায়?
শিউরে উঠল মোনা, ঝোলানো লম্বা কম্বলটার এক প্রান্ত খামচে ধরল। তারপর দৌড়ে গেল বাথরুমে। ছোটখাট হ্যারীর গায়ে এত ওজন! বাথরুম থেকে ওকে টেনে তুলতে জান বেরিয়ে গেল মোনার। ধপাস করে লাশটা মেঝেতে ফেলল ও, দুটো তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছল তারপর একটা কম্বলে মৃত হ্যারীকে পেঁচাল। জামাকাপড়গুলো এক জায়গায় জড়ো করল। প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে টাকা গুনল মোনা। মাত্র তেইশ। ডলার। টাকাগুলো নিয়ে ওয়ালেটটা যথাস্থানে রেখে দিল সে।
আবার ঘামতে শুরু করেছে মোনা। কিন্তু এখন আগের মতো আর দুর্বল লাগছে না। ধীরে ধীরে হারানো শক্তি ফিরে পাচ্ছে সে। কম্বলে মোড়ানো হ্যারীর লাশটা টানতে টানতে গ্যারেজে নিয়ে এল মোনা। গাড়ির পেছনের ট্রাঙ্ক খুলল চাবি দিয়ে। কিন্তু এখন ওকে ভেতরে ঢোকাবে কী করে? গোটা লাশ দুহাতে তোলার শক্তি নেই মোনার। ভয়ানক ভারী হ্যারীর শরীর।
প্রথমে হ্যারীর পা দুটো ধরল মোনা, বাম্পারের ওপর রাখল। লাশটা ডিঙিয়ে ওর পেছন চলে এসে সে ঝুঁকল, দুহাতের বেড়িতে শক্ত করে কোমর ধরে টান দিল। মেঝে ছেড়ে শুন্যে উঠে গেল হ্যারী, কিন্তু নিতম্ব বেঁধে গেল ট্রাঙ্কের কোনায়। থেতলানো মাথাটা বিশ্রীভাবে ঝুলছে। ঘাড়ের পেছনে হাত নিয়ে এল মোনা, মাথাটা সোজা করে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দিল ভেতরে। ট্রাঙ্কের এক কোনায় বসার ভঙ্গিতে স্থির হয়ে থাকল নিষ্প্রাণ দেহটা। হড় হড় করে ওকে সামনের দিকে টান দিতেই ভাঁজ হয়ে পড়ে গেল হ্যারী।
ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে মোনার, যেন কয়েক মাইল পথ দৌড় এসেছে। ছেঁড়া জামাকাপড়গুলো দিয়ে লাশটাকে ঢাকল সে, বন্ধ করল ট্রাঙ্ক। তারপর কম্বলটা আবার ইউটিলিটি রুমের মেঝেতে বিছাল। জিনিসটা ভিজে গেছে, কিন্তু শুকিয়ে যাবে শিগগিরই। এখন আর কোন কাজ নেই। এখন কাজ শুধু কালক্ষেপণ।
অপেক্ষার মুহূর্তগুলো ভারী কষ্টের, যন্ত্রণাদায়ক। মোনা ভাবতে থাকে ফেঁসে যাবার সম্ভাবনা কতটুকু। কিন্তু জোর করে অশুভ চিন্তাগুলো মন থেকে দূর করে দেয় সে। বেহুদা টেনশনে ভুগছে সে। সাজানো প্ল্যানের মধ্যে সামান্য ছন্দপতন ঘটিয়েছে কেবল রয়েস ফেয়ারচাইল্ডের আকস্মিক আবির্ভাব। কিন্তু তার কারণে পরিকল্পনাটি একেবারে মাঠে মারা যাবে না।