সাব্বির খানঃ বাংলাদেশ থেকে জামাতের মৌলবাদী রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। আপনি কি বলেন?
হুমায়ুন আহমেদঃ আমি কোন রাজনীতি বন্ধ করার পক্ষপাতি না। “সারভাইভ্যাল ফর দ্য ফিটেস্ট”। যে ফিটেস্ট, সে সারভাইভ করবে। যে আন-ফিট সে সারভাইভ করবে না। রাজনীতি বন্ধ করে কিন্তু একটা জিনিস বন্ধ করতে পারবে না।
সাব্বির খানঃ বাংলাদেশ থেকে মৌলবাদ বিতাড়নের উপায় কি বলে আপনি মনে করেন?
হুমায়ুন আহমেদঃ বাঙ্গালীদের শিক্ষিত হতে হবে। এখানে মাদ্রাসা শিক্ষা নয়, আমি সাধারন বিজ্ঞান শিক্ষার কথা বলছি। যদি সাধারন শিক্ষায় বাংলাদেশীরা শিক্ষিত হয়, তাহলে বাংলার মাটিতে মৌলবাদীদের চিহ্ন থাকবে না। অশিক্ষিতকেই একজন মৌলবাদীর পক্ষে ভুল বোঝানো সম্ভব। ধর্মীয় শিক্ষার জন্যতো আমার ঘরই যথেষ্ঠ। মাদ্রাসায় গিয়ে পড়তে হবে কেন। আমাদের যদি যেতে হয়, তাহলে সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেয়েই আমাদের শিক্ষা গ্রহন করতে হবে।
সাব্বির খানঃআপনার কি মনে হয় ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে?
হুমায়ুন আহমেদঃ অবশ্যই হবে।
সাব্বির খানঃ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে কথিত মাইনাস-টুর যে ফর্মূলা, এব্যাপারে আপনার অভিমত কি?
হুমায়ুন আহমেদঃ এই সরকারের আগে দেশের যে অবস্থা হয়েছিল, তাতে দেশের সাধারন মানুষই বলতো দুই নেত্রীকে বাদ দিয়ে দেশ পরিচালনার কথা। এটা এই সরকারের কোন কথা নয়। এটা বাংলাদেশের মানুষেরই কথা। আমাদের দেশে অসংখ্য জোকস (কৌতুক) আছে এই দুই নেত্রীকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে। আর আমরা হচ্ছি কি… আমরা এন্টি এস্টাবলিশমেন্ট। যখনই এই সরকারের এক বছর পূর্তি হল এবং তারা কিছুটা এস্টাবলিশ হলো, তখনই আমরা এন্টি- এস্টাবলিশমেন্টের ধাঁচে কথা বলা শুরু করলাম। অথচ এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার কি ছিল? নাথিং!
সাব্বির খানঃ বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ?
হুমায়ুন আহমেদঃ তারা যথা সম্ভব সংবিধান মেনে চলছেন বলে আমার বিশ্বাস।
সাব্বির খানঃ বর্তমানে দুই নেত্রীর একজন জেলে, আর অন্যজন চিকিৎসার জন্য বাইরে। এব্যাপারে আপনার অভিমত কি?
হুমায়ুন আহমেদঃ তারা যদি দোষী হয়, তাহলে তাদের সাজা হওয়া উচিত। আর যদি দোষী না হয়, তাহলে তাদের বিচারের মাধ্যমে জেল থেকে বের হয়ে আসা উচিত।
সাব্বির খানঃ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারকে দেখা গেছে মৌলবাদীদের সাথে আঁতাত করে। কেন তারা মৌলবাদের সংগে আঁতাত করে?
হুমায়ুন আহমেদঃ আঁতাতটা হয় মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। দেখেছেন না, আওয়ামী লীগ কিভাবে খেলাফত আন্দোলনের সাথে পাঁচ দফার চুক্তি করেছিল। কেন করেছিল? মৌলবাদীদের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে। বিএনপিতো মৌলবাদীদের সাথে আঁতাত করবেই। কারন তারা সেই ধরনেরই রাজনীতি করে। কিন্তু যেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নেতৃ্ত্ব দিয়েছে, জনগন কি অন্তত তাদের কাছ থেকে এই রাজনীতি আশা করে?
সাব্বির খানঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে এই সরকার কেন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
হুমায়ুন আহমেদঃ এই সরকারই প্রথম যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে কথা বলেছে। এর আগে আর কোন সরকার এই ব্যাপারে কথা বলেনি। এমন কি আওয়ামী লীগ সরকারও না। তবে আমার ধারনা, বর্তমান সরকার বিদায়ের আগে এব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদায় নেবে।
সাব্বির খানঃ আপনার কি চান যে এই সরকার নিজ উদ্যোগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্র্যাইবুনাল গঠন করুক?
হুমায়ুন আহমেদঃ অবশ্যই চাই। কারন এটা সরকারেরই দায়িত্ব এদের বিচার করা। এরকম অন্যান্য দেশেও হয়েছে এবং হচ্ছে।
সাব্বির খানঃ আপনি এখন সুইডেনে। বাংলাদেশের তসলিমা নাসরিনের সাথে কি আপনার যোগাযোগ হয়েছে?
হুমায়ুন আহমেদঃ না হয়নি।
সাব্বির খানঃ কিছুদিন আগে আমেরিকায় এক অনুষ্ঠানে পশ্চিম বঙ্গের কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তসলিমাকে একজন বিতর্কিত লেখিকা বলেছেন। আপনি কি এই ব্যাপারে একমত?
হুমায়ুন আহমেদঃ হ্যাঁ, আমার মনে হয় উঁনি একজন বিতর্কিত লেখিকা। কারন ওঁনার লেখা দিয়ে উনি নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করেছেন। তবে তসলিমা নাসরিন যে নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আছেন, সেজন্য আমি খারাপ বোধ করি। কারন একজন লেখক তার মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার রাখে। তসলিমাকে দেশে ফিরতে দেয়া উচিত।
সাব্বির খানঃ আপনি কি কোন রাজনৈতিক বা দার্শনিক মতবাদের প্রতি অনুগত?
হুমায়ুন আহমেদঃ যে কোন লেখকে জন্য রাজনৈতিক বা দার্শনিক মতবাদের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা ক্ষতিকর। কারন তার লেখা কোন সাহিত্য হবেনা, সেটা হবে একটা মূখপত্র। আনুগত্য স্বীকার করার মত কোন সমস্যার মধ্যে আমি পড়িনি। কারন যে সব দর্শনের কথা বলা হচ্ছে, তার বেশির ভাগইতো আমার নিজের। আর আমি লেখালেখি করি প্রথমত আমার নিজের আনন্দের জন্য। সে আনন্দের ভাগ যদি পাঠকরা পায়, তাহলেতো গুড এনাফ। লেখক হিসেবে মতবাদ প্রচার করার দায়-দায়িত্ব আমার না।
সাব্বির খানঃ বাংলাদেশের লেখকরা কি স্বাধীন?
হুমায়ুন আহমেদঃ হ্যাঁ, বাংলাদেশের লেখকরা স্বাধীন।