ঘর ভেসে যাবে।
না।
পানি ও ঘরে এসে পড়বে।
না।
নিঃশব্দে মুচড়ে হাত ছাড়িয়ে নেয় সামাদ। একবার শিরিন চোখ মেলে দ্যাখে, সামাদের মুখে তার নিজের কপালের ছায়া। সে ছায়ায় মুখটাকে দেখাচ্ছে মরা মানুষের খুলির মতো।
আবার সে চোখ মুখে দেখে সামাদ নেই।
শিরিন তখন উঠে দাঁড়ায়। পড়ে যেতে যেতে সামলে নেয় নিজেকে। তারপর ছেলেবেলায় প্রথম হাঁটার মতো টলমল পায়ে খাট ধরে, টেবিল ধরে, বেড়ার খুঁটি ধরে এগিয়ে যায় পাশের ঘরের দরোজার কাছে।
বিস্ফারিত দুচোখ মেলে শিরিন দ্যাখে, চৌকির ওপর হাঁটু জড়ো করে শুয়ে আছে রুবি। পাশে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়ে তার কোমরের দুপাশে কাতুকুতু দিচ্ছে সামাদ। মুখের ওপর বালিশ টেনে অদম্য হাসিটাকে চাপ দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে রুবি।
হঠাৎ তারা দুজনেই দ্যাখে শিরিনকে। সামাদ কয়েক মুহূর্ত স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে থেকে, আবার ঝুঁকে পড়ে কাতুকুতু দেয় রুবি। রুবি মুখের ওপর থেকে বালিশ পেলে বাধাবন্ধনহীন ঝর্ণার মতো হেসে ওঠে এবার।
তারপর আঙুল দিয়ে রুবি সামাদকে দেখায় দরোজার দিকে? দরোজা খোলা। শিরিন সেখানে নেই। শিরিন বিছানাতেও ফিরে যায়নি।
জানালা খুলে, হাত বাড়িয়ে জুই গাছের ডাল সরিয়ে বৃষ্টির ঘন একটা চাদর দেখা যায় শুধু। আর কিছু না।
যদি তারা দেখতে পেত, তাহলে দেখত, শিরিন সেই সন্ধ্যে থেকে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ভেতরে খাল পেরিয়ে, নদী পেরিয়ে, মাঠ পেরিয়ে বুকের ভেতরে আগুন নিয়ে এখন এমন একটা গ্রামের দিকে যাচ্ছে যেখানে আর কোনো শোক নেই।