জয়ন্ত ॥ তা তো যাব, কিন্তু এই পুজো সংখ্যার চাপে টাইম করে উঠতে পারব কি না জানি না।
তরুণ ॥ ও সব শুনছি না। একটা সন্ধে দুটি ঘণ্টা তোর কাজের মধ্যে থেকে বার করে নিতে হবে।
জয়ন্ত ॥ কী বলছিস–এখন যে ক্রিকেট, তাই দেখা হল না টেলিভিশনে।
তরুণ ॥ ওয়ান-ডের খেলাটাও দেখিসনি?
জয় ॥ কোথায় আর দেখলাম।
তরুণ ॥ এঃ–খুব মিস করেছিস। এরম খেলা চট করে দেখা যায় না। তোর উপন্যাসের সাসপেন্স কোথায় লাগে।
তরুণ তার সিগারেট অ্যাশট্রেতে ফেলে দেয়।
তরুণ ॥ যাক গে–আমি আর তোর সময় নেব না।
জয়ন্ত ॥ লেখার কথাটা ভুলবি না তো?
তরুণ ॥ দেব লেখা–তবে পয়সা দিতে হবে কিন্তু। বন্ধু বলে হবে না।
জয়ন্ত ॥ তা দেবখন। তোর এক প্যাকেট সিগারেট হয়ে যাবে।
তরুণ ॥ আসি—
তরুণ দপ্তর থেকে বেরিয়ে যায়। জয়ন্ত তিনকড়িবাবুর দিকে ঘুরতে যাবে এমন সময় দপ্তরে আরেকজন প্রবেশ করেন। ইনি অর্ধেন্দু রায়। জয়ন্ত তাঁর দিকে ফেরে।
জয়ন্ত ॥ আপনার–?
অর্ধেন্দু ॥ আমি এসেছিলাম আপনাদের কাগজের চাঁদা দিতে–আমার ছেলেকে গ্রাহক করতে চাই। এই যে এই কাগজে আপনি পার্টিকুলার্স পাবেন, আর এই হল টাকা—
অর্ধেন্দু পকেট থেকে কাগজ আর টাকা বার করে জয়ন্তকে দেন। জয়ন্ত সেগুলো নেয়।
জয়ন্ত ॥ থ্যাঙ্কস–দাঁড়ান, আমি রসিদ দিয়ে দিচ্ছি। মুকুল।
পিছন দিকের ঘর থেকে একজন তরুণ বেরিয়ে আসে–দপ্তরের কর্মচারী মুকুল।
জয়ন্ত ॥ এঁকে একটা রসিদ করে দাও তো। এক বছরের চাঁদা। এই যে পার্টিকুলার্স।
জয়ন্তর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে মুকুল রসিদ লিখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। টাকাটা জয়ন্ত দেরাজ খুলে ভিতরে রেখে দেয়।
অর্ধেন্দু ॥ আপনাদের পত্রিকা ডাকে পাঠাতে হবে না–আমি প্রতি মাসে এসে হাতে করে নিয়ে যাব। এটা আমার কাজের জায়গার খুব কাছে পড়ে।
জয়ন্ত ॥ আপনি বসুন না।
অর্ধেন্দু ॥ ঠিক আছে। আসলে আমার ছেলে অনেকদিন থেকে ধরেছিল ওকে গ্রাহক করে দেবার জন্য।
জয়ন্ত ॥ বয়স কত?
অর্ধেন্দু। ॥ এই দশে পড়ল।
মুকুল রসিদ লিখে দেয়। সেটা নিয়ে অর্ধেন্দুবাবু বেরিয়ে যান। মুকুল পিছনের ঘরে চলে যাবার পর জয়ন্ত তিনকড়ির দিকে ঘোরে।
জয়ন্ত ॥ আপনি কি লেখা দিতে এসেছেন?
তিনকড়ি ॥ আজ্ঞে না।
জয়ন্ত ॥ তবে?
তিনকড়ি ॥ লেখা আমার আগেই দেওয়া আছে।
জয়ন্ত ॥ সেটা মনোনীত হয়েছে?
তিনকড়ি ॥ চিঠি এখনও পাইনি–তবে আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে হয়েছে।
জয়ন্ত ॥ তার মানে?
তিনকড়ি ॥ আমার আসল নাম তিনকড়ি ধাড়া, কিন্তু লেখায় নাম ছিল নবারুণ চট্টোপাধ্যায়।
জয়ন্তর চক্ষু চড়কগাছ।
জয়ন্ত ॥ বলেন কী?
তিনকড়ি ॥ আজ্ঞে হ্যাঁ।
জয়ন্ত ॥ ওই লাদাখের উপন্যাস আপনার লেখা?
তিনকড়ি ॥ আজ্ঞে হ্যাঁ–অনেক মেহনতের ফসল আমার। অনেক পড়াশুনা করতে হয়েছে ওটা লেখার জন্য।
জয়ন্ত ॥ কী আশ্চর্য–তা আপনি নবারুণ চট্টোপাধ্যায় না বলে তিনকড়ি ধাড়া বলতে গেলেন কেন? ওই নাম বললে কি কোনও ফল হয়?
তিনকড়ি ॥ তা অবশ্য ঠিক। ও নামে লেখা পাঠালে আপনি হয়তো সে লেখা পড়তেনই না। কিন্তু আপনার যখন লেখাটা ভাল লেগেছে, তখন আমি আমার নিজের নামই ব্যবহার করতে চাই। কারণ লেখা যদি ভাল লাগে তা হলে নামের কথা কেউ ভাববে না। আর ভেবে দেখলাম নামটা আমার পিতৃদত্ত নাম, আর পদবি আমার বংশের পদবি। নবারুণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়োজন হয়েছিল শুধু আপনাকে লেখাটা পড়াবার জন্য। এখন সেটার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।
জয়ন্ত ॥ দেখুন তো–আমি না জেনে আপনাকে এতক্ষণ বসিয়ে রাখলাম।
তিনকড়ি ॥ তাতে কী হয়েছে। সে না হয় এবার যখন আপনি আমার কাছে লেখার জন্য তাগাদা করতে যাবেন তখন আমি আপনাকে বসিয়ে রাখব। তা হলেই শোধবোধ হয়ে যাবে। দুজনে হাসিতে ফেটে পড়ে।
সন্দেশ, শারদীয় ১৪০১। রচনাকাল ২ অক্টোবর, ১৯৮৬