দেন গেট রেডি। মনে আছে চকোলেট রঙের গাড়ি WBG…
শেফালি, তোমার একটা ছোট্ট কাজ আছে। তারপর তোমার আমার, আমাদের সকলের মুক্তি। বিরাট ঐশ্বর্য! শালা গরিবি হাটাও।
কথায় কথায় উচ্ছ্বাস। আসল কথাটা বল না।
একটু পরে ওই হাইওয়ে দিয়ে একটা চকোলেট রঙের অ্যামবাসাডার আসবে। কেমন ফাইন। গাড়িটা হু-হু করে আসবে আর তুমি প্রাণের মায়া ছেড়ে গাড়িটার সামনে লাফিয়ে পড়ে হাত তুলে থামাবে। তারপর, তারপর…সুকুমার, চিন্তা করতে পারো রাশি রাশি টাকা, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, লক্ষ্মী মেয়ে শেফালি। ইস! তোমার চুলে কী আঠা! শ্যাম্পু করতে পারো না!
শোনো সুকুমার, তোমার মেয়ে যদি কাজটা ঠিকমতো করতে পারে ব্যস! কোথায় তোমার
উঞ্ছবৃত্তি! তুমি, আমি, আমরা টাকার গদিতে শুয়ে থাকব।
কিন্তু খবরদার প্ল্যানমাফিক কাজ না হলে—দুম।
সুব্রত চারটে আঠাশ। ওই দেখ দূরে।
সুকুমার, রাজি?
এজ্ঞে আপনারাই আমার মা-বাপ।
অসাধারণ! শেফালি রেডি।
ওই আসছে আসছে। সুব্রত রেডি! রেডি! সবাই রেডি!
আসছে টপ স্পিডে। ভয় নেই। শেফালি, থামতে ওকে হবেই।
এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়…
ইস। কী অসাধারণ। শালা চাপা দিয়ে বেরিয়ে গেল। ইস কী তাজা শরীর ছিল মেয়েটার। আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমি যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলুম—সুকুমার।
ইডিয়েট!—কী রক্ত, কী রক্ত!
সুকুমার, তোমার লাকটাই খারাপ। তোমার অভাব ঘোচাতে পারলুম না!
তোর অস্ত্র ফেলে দে। তোর একটা এম নেই। তুই তিন-তিনটে গুলি ছুঁড়লি অথচ টায়ারে একটাও লাগাতে পারলি না।
অসাধারণ। সুকুমারের চায়ের দামটা দিয়ে দে। ওর কথা বন্ধ হয়ে গেছে। আহা নিজের মেয়ে, তায় রোজগেরে মেয়ে, কিছু বেশি দিয়ে দিস।
কার মেয়ে ছিল কে জানে!
সুব্রত, ভেবে দেখেছিস কী সাংঘাতিক! ওরা কি ফিরে আসতে পারে? এই স্পট ওদের চিনতে অসুবিধে হবে না। শেফালির ডেডবডি হবে ওদের নিশানা।
তাহলে?
কী অসাধারণ ব্যাপার! তাহলে চল শেফালিকে আমরা লোপাট করে দিই।
কিন্তু ওই চাপ চাপ রক্ত। ষোলো বছরের মেয়ের ওই তাজা রক্ত!
অসাধারণ। আমার মাথাটা দেখেছিস? বিপদেও কী ক্লিয়ার! সুকুমার বালতি বালতি জল দিয়ে পরিষ্কার করবে।
ইউ সুকুমার, একটা সাদা কাপড় আছে? নেই। তবে তোমারটাই খোলো। কুইক। কটা বাজল? চারটে পঞ্চান্ন। সামনের চেক পোস্ট থেকে ওরা ফিরবে, আর মাত্র কয়েক মিনিট সময়।
খোল খোল খুলে নে ওর কাপড়। বিপদের সময় আবার লজ্জা।
কী আশ্চর্য! বিপদের সময় আর সেই সমস্ত চরম আনন্দের সময় আমরা কেবল নিঃসঙ্কোচে উলঙ্গ হতে পারি।
নে জড়িয়ে নে। গায়ে রক্ত লাগাসনি। তুলে নে। সুকুমার জল ঢালো। উঁহু দেখছ হাতে কী? নিষ্কৃতি নেই। ঢালো এক-দুই..ফাইন? দেখছিস পিচে রক্ত লাগে না।
মেয়েটা এখন হালকা হয়ে গেছে। কী ঠান্ডা। যদি বেঁচে থাকত কী অসাধারণ হত!
সামনে এগিয়ে চল। আর হাইওয়ে নয়। মাঠের রাস্তা ধর।
ওকে শুইয়ে দে এই সাঁকোর তলায়। অন্ধকার নামছে ধীরে ধীরে। বেচারা। মুক্তির সংগ্রামে মুক্তি পেয়ে গেল!
কী টাটকা শরীর ছিল এই একটু আগে। এখন মাটির কত কাছাকাছি। আমি ওকে একটা চুমু খেতে পারি!
হাইওয়ের ওপর দিয়ে আলোর সারি ছুটে চলেছে উত্তরে দক্ষিণে। যত রাত বাড়ছে তত আলো বাড়ছে, যত রাত বাড়ছে তত আলো বাড়ছে।