শিখার কাছে আমি অনেক দেহতত্ব শিখেছি। সে একটা দেহতত্বের স্কুল খুলেছে ইদানীং বেশ ভালো রোজগার, জমজমাট ব্যবসা।
ঘুরে ফিরে সেই এক কথা। শিখা, শিখা, শিখা।
ও শালা পাগল হয়ে যাবে, ডেফিনিট, কোনও সন্দেহ নেই।
সুকুমারের দোকানের একটা বৈশিষ্ট্য দেখলি বেশ নিঝঞ্চাট। কোনও খদ্দেরপত্তর নেই। ডেলি কপয়সা হয় তোমার?
এজ্ঞে আমাদের বিক্রি-টিক্রি সব রাতের বেলা। এদিকের এই স্টাইলের দোকানের এই রীতি।
বাবা, বলে কী রে? এ যেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সূর্য ডুবলেই ভিড় বাড়ে। ভেলপুরী উড়ছে, ফুচকা ফুটো হচ্ছে, আইসক্রিম জিভে গলছে, এলাহি ব্যাপার!
এদিকে রাতেই খদ্দের বাড়ে, কেন জানিস? যত দূরপাল্লার পাড়ির পথ বিশ্রাম, পান্থশালা।
সেই জিনিস পাওয়া যায় নাকি রে—সেই সর্বসুখপ্রদ ক্লান্তি হরণকারী, অতি মনোহর।
যায় যায়, ওইটাই তো আসল রোজগার।
সুকুমারবাবু একটু আসল মাল ছাড়বে?
কী যে বলেন বাবু এজ্ঞে।
সুকুমার, কেন বাবা টালবাহানা করছ। খদ্দের লক্ষ্মী, হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলতে আছে ম্যান?
দেখবি আমাদের কাছে কিছুতেই ভাঙবে না। সাধু সেজে যাবে। যেন কিছুই জানে না।
আসলে ও সব জানে। ব্যাটা মেয়েছেলেও সাপ্লাই করে, হয় পয়সা না হয় জোর এই দুটোর কাছে আত্মসমর্পণ করতে শিখেছে।
আমাদের কোনওটাই নেই, কী বল? আমরা চুকচুক করে ছোটছেলের মতো চা খাব কী বল? আমরা ওর এলেবেলে খদ্দের।
সুকুমার, ভালো কথায় বলছি ভণ্ডামি না করে তিন পাত্তর মাল ছাড়ো।
কী যে বলেন বাবু। বেশ তো বসে বসে চা খাচ্ছিলেন আর গল্প করছিলেন কী যে মাথায় ভূত চাপল।
ও বোধহয় আমাদের পুলিশের লোক ভেবেছে।
আরে দুর, এসব লাইনে পুলিশকে ওরা ভয় পায় না। আসলে জেদ। প্রচণ্ড জেদ। আমরাও ছাড়ব না, ও-ও দেবে না। কম শয়তান! ও একটা সার্কেলে ঘোরে। এসব হচ্ছে চক্রের ব্যাপার।
ভৈরব চক্র তাই না?
করাপ্ট শালা। পরগাছা প্যারাসাইট। দেখছিস না পথের ধারে গ্রাম ঘেঁষে বসে আছে। গ্রামের সুবিধে নিচ্ছে আর শহরের পাপগুলো এখানে আমদানি করছে। প্রু আউট দ্য হাইওয়ে তুই এদের দেখবি।
ঠিক বলেছিস। মাঠের মানুষ ঘন ঘন চা খায় না। তারা আঁজলা ভরে বিশুদ্ধ জল খায় তেষ্টার সময়। এসব হল মর্ডান ভাইসেস। বেটা শয়তানের দোসর।
ব্লাডারে চোলাই মাল আসে, আর ওই নিরীহ সরল লোকগুলো এর ফাঁদে পা দিচ্ছে।
আবার মুখে কত বড় বড় বুলি। লড়াই, মুক্তি সংগ্রাম।
আসলে লোভের বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রাম। অসাধারণ সংগ্রাম।
সুকুমার, সুকুমারই তো বললে, নাকি? সুকুমার, বেশি সাধুগিরি ফলিও না। ঝট করে তিন পাত্তর ঢেলে ফেলো বাবা, কেমন।
এজ্ঞে সেই যে আপনাদের এক গোঁ। তিনটে চা দেব বাবু, বেশ মোটা করে দুধ দিয়ে।
শালা ন্যাকা সেজে পার পাবে! নিকালো আভি নিকালো মাল।
এই সুব্রত, সুব্রত ছেড়ে দে, মরে যাবে বেটা।
ছেড়ে দেব, আগে বের করুক মাল। শালা আগেই কবুল করুক যে ও নরকের পথে ব্যবসা করছে।
সুব্রত দাঁড়া, দাঁড়া, অন্য রাস্তায় এর স্বীকারোক্তি আদায় করতে হবে।
কী যে করিস সামান্য ব্যাপারে। ওই দেখ মেয়েটার মুখ কীরকম কাঁদো-কাঁদো করুণ হয়ে গেছে।
ও-ও তো ওই শয়তানের দোসর। দেখছিস না ওর চোখে-মুখে পাপের ছায়া। মোটেইইনোসেন্ট নয়, রাতের বেলায় ওর চেহারাই অন্যরকম দাঁড়ায়।
এইবার দেখ কোনওরকম বলপ্রয়োগ নয়, কীরকম সুর-সুর করে সব বলে দেবে। এটি বাছাধন খেলনা পিস্তল নয় আসল কোল্ট।
একটা লক্ষ্যভেদ করে শালার পিলে চমকে দে না।
বেশ ওই ছবিটা টার্গেট, কী বলিস। মা কালীর ছবি ঝুলিয়ে যত অনাচার তাই না? ওয়ান টু থ্রি… বিউটিফুল! কাঁচগুলো ভেঙে দুধের ডেকচিতে পড়ল।
বাবা সুকুমার এবার কবুল করো।
এজ্ঞে কিছু মাল তো রাখতেই হয়। নানারকম খদ্দের তো আসেই। এই যেমন আপনারা।
চোপ শালা, টিটকিরি! খুলি উড়িয়ে দেব।
কোথায় আছে?
এজ্ঞে ওই জালার ভেতরে।
সুব্রত দেখে আয় তো।
ওরি ফাদার! আগুন বোতল—সব মাকালী মার্কা।
সুকুমার, আর কিছু? রাতে আর কী কী হয়? তোমার মেয়ে?
এজ্ঞে ওকে তো দোকানেই থাকতে হয়। কে আর আমাকে সাহায্যে করবে? একলা লোক। কত রকমের খদ্দের।
কী শয়তান! ওই ফুলের মতো মেয়েকে দিয়ে ব্যবসা!
দে না বেটার ভবলীলা সাঙ্গ করে। তারপর চল মেয়েটাকে নিয়ে যাই। ওকে বাঁচতে দে। ওকে ওর মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে।
কার জন্যে ভাবছিস? ওই দেখ শয়তানের বাচ্চা শয়তানই হয়। ওই দেখ লোহার রড তুলেছে। সাবধান সুব্রত। ফায়ার!
কী হল খুকি? এদিকে এসো। এসো এদিকে। ফেলে দাও রড! এই তো লক্ষ্মী মেয়ে!
এজ্ঞে বাবু দোকানের পেছনে একটা ঘর আছে। একে একে ওকে নিয়ে যেতে পারেন বা সকলে একসঙ্গেও যেতে পারেন।
এই তো বাবা সুকুমার কবুল করেছ। একেই বলে জীবনসংগ্রাম—কী বল! মুক্তি সংগ্রাম নাকি! বিবেকের হাত থেকে মুক্তি—শাবাশ।
কী নাম তোমার?
শেফালি।–অসাধারণ। যাও ওখানে চুপটি করে বোসো। তোমাকে আমরা এই লজ্জার জীবন থেকে মুক্তি দেব।
তা সুকুমার রোজগারপাতি কেমন হয়?
এজ্ঞে খুবই সামান্য, গরিব লোক বাবু।
আবার মিথ্যে কথা? তুমি তো বাবা মাটির মানুষ নও। তুমি তো বাবা নিজের শ্রমে রোজগার করো না। তুমিও তো সোনার হরিণ খুঁজছ বাছাধন।
সুব্রত টাইম ইজ আপ। সময় দেখো। ঠিক চারটে বেজে কুড়ি মিনিট তাইনা?