তাঁর যে-কবিতাটি সবার আগে নিজের নামে বেরিয়েছিলো, সেটির নাম ‘হিন্দুমেলার উপহার’। এর আগে তাঁর নিজের নামে কোনো লেখা বের হয় নি। তার যে-বইটি সবার আগে ছাপা হয়, সেটির নাম কবিকাহিনী। বইটি বেরিয়েছিলো ১৮৭৮ অব্দে। তবে এটি তাঁর লেখা প্রথম বই নয়। এ-বই বের হবার দু-বছর আগে তিনি লিখেছিলেন বনফুল নামে একটি কবিতার বই। বনফুল রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রথম বই। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন অনেক অনেক বই, সব বইয়ের নাম আমিও জানি না। তিনি লিখেছিলেন সব রকমের লেখা : কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান, প্রবন্ধ, নাটক, কাব্যনাটক, ভ্রমণকাহিনী, পাঠ্যবই, সমালোচনা, ব্যঙ্গরচনা, ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি সবকিছু লিখেছেন তিনি। সবদিকেই তাঁর সার্থকতা সকলের চেয়ে বেশি। তাঁর প্রতিভা আমাদের বিস্ময়। তিনি পৃথিবীর এক প্রধান রোম্যান্টিক কবি। তিনিই সবার আগে এশীয়দের মধ্যে লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। ১৯১৩ অব্দে। নোবেল পুরস্কার তাঁর মতো প্রতিভার জন্যে বড়ো কিছু নয়; তবে এটি পাওয়া বেশ ভালো হয়েছে তাঁর ও বাঙলা সাহিত্যের জন্যে। নইলে হয়তো বাঙালি বুঝতে পারতো না তিনি কতো বড়ো কবি!
রবীন্দ্রনাথের সম্বন্ধে তোমরা অনেক কিছুই জানো। যা জানো না, তা হয়তো জেনে ফেলবে আগামীকাল। তাই আমি তাঁর সম্বন্ধে–বলা যায়–কিছুই বলব না। ইচ্ছে করলে তার সম্বন্ধে অনেক কিছু তোমরা জানতে পারবে যে-কোনো পাঠাগারে গিয়ে। তোমরা পড়তে পারো প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা তার বিশাল জীবনীবই। বইটি চার খণ্ডে। বইটির নাম রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য প্রবেশক। বইটিকে সংক্ষেপে বলা হয় রবীন্দ্রজীবনী। এটি বিরাট বই; দেখলেই যদি ভয় লাগে, তবে পড়তে পারো প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়েরই লেখা আরেকটি বই, নাম রবীন্দ্রজীবনকথা। বেশি মোটা নয় বইটি, বেশ সরলভাবে লেখা। আমি শুধু রবীন্দ্রনাথের লেখা অধিকাংশ বইয়ের নাম জানিয়ে দিচ্ছি।
কবিতা
কবিকাহিনী (১৮৭৮), বনফুল (১৮৮০), ভগ্নহৃদয় (১৮৮১), সন্ধ্যাসঙ্গীত (১৮৮২), ছবি ও গান (১৮৮৪), শৈশব সঙ্গীত (১৮৮৪), ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (১৮৮৪), কড়ি ও কোমল (১৮৮৬), মানসী (১৮৯০), চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২), সোনার তরী (১৮৯৪), নদী (১৮৯৬), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কণিকা (১৮৯৯), কথা (১৯০০), কল্পনা (১৯০০), ক্ষণিকা (১৯০০), নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), শিশু (১৯০৯), গীতাঞ্জলি (১৯১০), স্মরণ (১৯১৪), বলাকা (১৯১৬), পলাতকা (১৯১৮), শিশু ভোলানাথ (১৯২২), পূরবী (১৯২৫), লেখন (১৯২৭), মহুয়া (১৯২৯), বনবাণী (১৯৩১), পরিশেষ (১৯৩২), পুনশ্চ (১৯৩২), বিচিত্রিতা (১৯৩৩), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), বীথিকা (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬), শ্যামলী (১৯৩৬), খাপছাড়া (১৯৩৭), ছড়ার ছবি (১৯৩৭), প্রান্তিক (১৯৩৮), সেঁজুতি (১৯৩৮), প্রহাসিনী (১৯৩৯), আকাশপ্রদীপ (১৯৩৯), নবজাতক (১৯৪০), সানাই (১৯৪০), রোগশয্যায় (১৯৪০), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১), ছড়া (১৯৪১), শেষলেখা (১৯৪১),
স্ফুলিঙ্গ (১৯৪৫), বৈকালী (১৯৫১), চিত্রবিচিত্র (১৯৫৪)।
কাব্যনাট্য গীতিনাট্য ও নাটক প্রহসন
বাল্মীকিপ্রতিভা (১৮৮১), কালমৃগয়া (১৮৮২), মায়ার খেলা (১৮৮৮), রাজা ও রাণী (১৮৮৯), বিসর্জন (১৮৯০), রুদ্রচণ্ড (১৮৮১), প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪), নলিনী (১৮৮৪), গোড়ায় গলদ (১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭), হাস্যকৌতুক (১৯০৭), ব্যঙ্গকৌতুক (১৯০৭), শারদোৎসব (১৯০৮), প্রায়শ্চিত্ত (১৯০৯), রাজা (১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), মালিনী (১৯১২), বিদায় অভিশাপ (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাঙ্গুনী (১৯১৬), গুরু (১৯১৮), অরূপরতন (১৯২০), ঋণশোধ (১৯২২), বসন্ত (১৯২৩), গৃহপ্রবেশ (১৯২৫), চিরকুমার সভা (১৯২৬), শোধবোধ (১৯২৬), নটীর পূজা (১৯২৬), রক্তকরবী (১৯২৬), ঋতুরঙ্গ (১৯২৭), শেষরক্ষা (১৯২৮), পরিত্রাণ (১৯২৯), তপতী (১৯২৯), নবীন (১৯৩১), কালের যাত্রা (১৯৩২), চণ্ডালিকা (১৯৩৩), তাসের দেশ (১৯৩৩), বাঁশরী (১৯৩৩), শ্রবণগাথা (১৯৩৪), নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬), চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্য (১৯৩৮), শ্যামা (১৯৩৯)।
উপন্যাস
করুণা (অসমাপ্ত, ১৮৭৭), বৌঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাড়ুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নিবন্ধ (১৯০৪), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুইবোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪), চার অধ্যায় (১৯৩৪)।
গল্প
ছোটগল্প (১৮৯৪), বিচিত্র গল্প (১৮৯৪), কথা চতুষ্টয় (১৮৯৪), গল্পদশক (১৮৯৫), কর্মফল (১৯০৩), গল্প চারিটি (১৯১২), গল্পসপ্তক (১৯১৬), পয়লা নম্বর (১৯২০), সে (১৯৩৭), তিনসঙ্গী (১৯৪০)। গল্পসল্প (১৯৪১)।
ভ্রমণকাহিনী
য়ুরোপপ্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপযাত্রীর ডায়ারি (প্রথম খণ্ড ১৮৯১, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৯৩), জাপান যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (১৯০৮), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), জাপানে পারস্যে (১৯৩৬), পথে ও পথের প্রান্তে (১৯৩৮), পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)।
ভাষা ও সাহিত্যসমালোচনা
সমালোচনা (১৮৮৮), প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭), লোকসাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্য (১৯০৭), আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭), শিক্ষা (১৯০৮), শব্দতত্ত্ব (১৯০৯), ছন্দ (১৯৩৬), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬), বাংলাভাষা-পরিচয় (১৯৩৮), সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩)।