মেসার্স ব্রহ্মচারী অ্যাণ্ড ব্রাদার-ইন-ল এই কোম্পানির ম্যানেজিং এজেন্সি লইতে স্বীকৃত হইয়াছেন—ইহা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। তাঁহারা লাভের উপর শতকরা দুই টাকা মাত্র কমিশন লইবেন, এবং যতদিন না–
অটলবাবু বলিলেন—’কমিশনের রেট অত কম ধরলেন কেন? দশ পার্সেন্ট অনায়াসে ফেলতে পারেন।’
গণ্ডেরি। কুছ দরকার নেই। শ্যামবাবুর পরবস্তি অপ্নেসে হোয়ে যাবে। কমিশনের ইদারা খোড়াই করেন।
এবং যতদিন না কমিশনে মাসিক ১০০০ টাকা পোষায়, ততদিন শেষোক্ত টাকা অ্যালওরেন্স রূপে পাইবেন।
গণ্ডেরি। শুনেন অটলবাবু, শুনেন। আপনি শ্যামবাবুকে কী শিখ্লাবেন?
হুগলী জেলার অন্তঃপাতা গোবিন্দপুর গ্রামে ঁসিদ্ধেশ্বরী দেবী বহু শতাব্দী যাবৎ প্রতিষ্ঠিত আছেন। দেবীমন্দির ও তৎসংলগ্ন দেবত্র সম্পত্তির স্বত্বাধিকারিণী শ্ৰীমতী নিস্তারিণী দেবী সম্প্রতি স্বপ্নাদেশ পাইয়াছেন যে উক্ত গোবিন্দপুর গ্রামে অধুনা সর্ব পীঠের সময় হইয়াছে এবং মাতা তাহার মাহাত্মের উপযোগী সুবহৎ মন্দিরে বাস করিতে ইচ্ছা করেন। মত নিস্তারিণী দেবী অবলা বিধায় এবং উক্ত দৈবাদেশ স্বয়ং পালন করিতে অপারগ বিধায়, উক্ত দেবত্ত সম্পত্তি মায় মন্দির বিগ্রহ জমি আওলাত আদি এই লিমিটেড কোম্পানিকে সমর্পণ করিতেছেন।
অটল। নিস্তারিণী দেবী আবার কোথা থেকে এলেন? সম্পত্তি তো আপনার বলেই জানতুম।
শ্যাম। উনি আমার লী। সেদিন তাঁর নামেই সব লেখাপড়া করে দিয়েছি। আমি এসব বৈষয়িক ব্যাপারে লিপ্ত থাকতে চাই না।
গণ্ডেরি। ভালা বন্দোবস্তু, কিয়েছেন। আপনেকো কোই দসবে না। নিস্তার্ণী দেবীকো কোন্ পহ্চানে। দাম কেতো লিচ্ছেন?
অতঃপর তীর্থপ্রতিষ্ঠা, মন্দিরনির্মাণ, দেবসেবাদি কোম্পানি কর্তৃক সম্পন্ন হইবে এবং এতদর্থে কোম্পানি মাত্র ১৫,০০০ টাকা পণে সমস্ত সম্পত্তি খরিদার্থে বায়না করিয়াছেন।
গণ্ডেলি। হদ্দ্ কিয়া শ্যামবাবু! জঙ্গল কি ভিতর পুরানা মন্দিল, উস্মে দো-চার শও ছুছুন্দর, ছটাক ভর জমীন, উস্পর দো-চার বাঁশ ঝাড়—বস্, ইসিকা দাম পন্দ্র হজার!
শ্যাম। কেন, অন্যায়টা কি হ’ল? স্বপ্নাদেশ, একান্ন পীঠ এক ঠাঁই, জাগ্রত দেবী—এসব বুঝি কিছু নয়? গুড-উইল হিসেবে পনের হাজার টাকা খুবই কম।
গণ্ডেলি। আচ্ছা। যদি কোই শেয়ারহোল্ডার হাইকোট মে দরখাস্ত পেশ করে—স্বপন-উপন সব ঝুট, ছক্লায়কে রূপয়া লিয়া—তব্?
অটল। সে একটা কথা বটে, কিন্তু এই সব আধিদৈবিক ব্যাপার বোধ হয় অরিজিনাল সাইডের জুরিসডিকশনে পড়ে না। আইন বলে-caveat emptor, অর্থাৎ ক্রেতা সাবধান! সম্পত্তি কেনবার সময় যাচাই কর নি কেন? যা হোক, একবার expert opinion নেব।
শীঘ্রই নূতন দেবালয় আরম্ভ হইবে। তৎসংলন প্রশস্ত নাটমন্দির, নহবতখানা, ভোগশালা, ভাণ্ডার প্রতি আনুষঙ্গিক গৃহাদিও থাকিবে। আপাততঃ দশ হাজার যাত্রীর উপযুক্ত অতিথিশালা নির্মিত হইবে। শেয়ারহোল্ডারগণ বিনা খরচায় সেখানে সপরিবারে বাস করিতে পারিবেন। হাট বাজার যাত্রা থিয়েটার বায়োস্কোপ ও অন্যান্য আমোদ-প্রমোদের আয়োজন যথেষ্ট থাকিবে। যাঁহারা দৈবাদেশ বা ঔষধ-প্রাপ্তির জন্য হত্যা দিবেন তাঁহাদের জন্য বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা থাকিবে। মোট কথা, তীর্থযাত্রী আকর্ষণ করিবার সর্বপ্রকার উপায়ই অবলম্বিত হইবে। স্বয়ং শ্রীমৎ শ্যামানন্দ ব্রহ্মচারী ঁসেবার ভার লইবেন।
যাত্রিগণের নিকট হইতে যে দর্শনী ও প্রণামী আদায় হইবে, তাহা ভিন্ন আরও নানা উপায়ে অর্থাগম হইবে। দোকান হাট বাজার অতিথিশালা মহাপ্রসাদ বিক্রয় প্রভৃতি হইতে প্রচুর আয় হইবে। এতদভিন্ন by-product recoveryর ব্যবস্থা থাকবে। সেবার ফল হইতে সুগন্ধি তৈল প্রস্তুত হইবে এবং প্রসাদী বিল্বপত্র মাদুলীতে ভরিয়া বিক্রীত হইবে। চরণামৃতও বোতলে প্যাক করা হইবে। বলির জন্য নিহত ছাগলসমূহের চর্ম ট্যান করিয়া উৎকৃষ্ট কিড-স্কিন প্রস্তুত হইবে এবং বহুমূল্যে বিলাতে চালান যাইবে। হাড় হইতে বোতাম হইবে। কিছুই ফেলা যাইবে না।
গণ্ডেরি। বকড়ি মারবেন? হামি ইস্মে নেহি, রামজী কিরিয়া। হামার নাম কাটিয়ে দিন।
শ্যাম। আপনি তো আর নিজে বলি দিচ্ছেন না। আচ্ছা, না হয় কুমড়ো-বলির ব্যবস্থা করা যাবে।
অটল। কুমড়োর চামড়া তো ট্যান হবে না। আয় কমে যাবে। কিহে বৈজ্ঞানিক, কুমড়োর খোসার একটা গতি করতে পার?
বিপিন। কস্টিক পটাশ দিয়ে বয়েল করলে বোধ হয় ভেজিটেবল শু হতে পারে। এক্সপেরিমেন্ট করে দেখব।
গণ্ডেরি। জো খুশি করো। হমার কি আছে। আমি ঘোড় রোজ বাদ আপনা শেয়ার বিলকুল বেচে দিব।
হিসাব করিয়া দেখা হইয়াছে যে কোম্পানির বাৎসরিক লাভ অন্ততঃ ১২ লক্ষ টাকা হইবে এবং অনায়াসে ১০০ পারসেন্ট ডিভিডেন্ট দেওয়া যাইবে। ৩০ হাজার শেয়ারের আবেদন পাইলে অ্যালটমেন্ট হইবে। সত্বর শেয়ারের জন্য আবেদন করুন। বিলম্বে এই সুবর্ণ সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবেন।
গণ্ডেরি। লিখে লিন—ঢাই লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়ে গেছে। আমি এক লাখ লিব, বাকী দেড় লাখ শ্যামবাবু বিপিনবাবু অটলবাবু সমান হিস্সা লিবেন।
শ্যাম। পাগল আর কি! আমি আর বিপিন কোথা থেকে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ হাজার বার করব? আপনারা না হয় বড়লোক আছেন।
গণ্ডেলি। হামি-শালা রূপয়া ডালবো আর তুমি লোগ মৌজ করবে? সো হোবে না। সবকা ঝোঁখি লেনা পড়েগা। শ্যামবাবু মতলব সমঝলেন না? টাকা কোই দিব না। সব হাওলাতী থাকবে। মেনেজিং এজিণ্ট মহাজন হোবে।