বাথরুমের দরজায় টোকা মারলে সমীরণ। সামান্য দরজা ফাঁক করে বেরিয়ে এলো চুড়ি পরা একটা হাত। বৌদির থেকেও অনেক বেশি ফর্সা হাতটা।
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সমীরণ রুদ্ধ নিশ্বাসে ঘামতে লাগলো।
মিনিট খানেক পরে, দরজা খুলে সবুজ ডোরাকাটা শাড়ি জড়িয়ে মুখটা আড়াল করে বেরিয়ে এলো মেয়েটি। মুখ আড়াল করলেও চমকে উঠলো সমীরণ। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। কল্পনাই করা যায় না, মেয়েটি তিন তলার ঊর্মি!
হাজার রকম প্রশ্ন মনের মধ্যে জট পাকিয়ে উঠলো। তিনতলার ঊর্মি এ সময়ে বন্ধ বাথরুমে এলো কি করে? মেয়েটির শাড়ি কোথায়? মুখ ঢাকা দিয়ে পালালো কেন?
কান্নায় ভরা মুখ নিচু করে, জড়ানো পায়ে ঊর্মি খালি পায়েই ছুটলো নিজেদের ফ্ল্যাটের দিকে।
ঘর্মাক্ত সমীরণ স্তম্ভিত হয়ে ঊর্মির চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো।
বাইরে একপাটি আর বাথরুমে একপাটি মেয়েদের স্লিপার। অফিসের জামাপ্যান্ট তখনও গায়ে। সর্বাঙ্গে ঘাম। একটি কুমারী মেয়ে….পরনে শাড়ি নেই..সমীরণ আর ভাবতে পারলে না….।
কতক্ষণ যে এইভাবে কেটেছে খেয়াল নেই..। মাথা ঝিম ঝিম করছে। যেন এক জটিল রহস্য।
হঠাৎ খুট করে ল্যা-কি খোলার শব্দ। সামনে বৌদি। বৌদির দৃষ্টি নিমেষে রূপান্তরিত হল দুষ্টুমির হাসিতে।
—এ কি ঠাকুরপো! চুল উসকো খুসকো…সারা গায়ে ঘাম…জুতো ভোলা, কিন্তু পায়ে মোজা? তারপরেই দেখলে দু জায়গায় এক জোড়া মেয়েদের স্লিপার?
বৌদি মুখে কাপড় চাপা দিয়ে হেসে উঠলো…বল না ভাই ঠাকুরপো….মেয়েটি কোথায়? ভয় নেই। আমি তোমার ঘরে ঢুকবো না….।
হঠাৎ তিন তলা থেকে রুমা বৌদি এসে হাজির। মহিলা তির্যক হেসে চোখে চোখ রেখে কি যেন বলতে চাইলো। শেষে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল তিন তলায়।
জানলার বারে থেকে ইশারায় দেখিয়ে মুচকি হাসলে রুমা বৌদি। বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ঊর্মি।
অবাক বিস্ময়ে অনিমা দেখলে ঊর্মির পরনে অমিমারই সবুজ ডোরা কাটা শাড়িটা।
রুমা বৌদি চুপি চুপি বললে—তখন বেলা প্রায় সাড়ে দশটা। গোলাপি রং এর ছাপা শাড়িটা পরে ঊর্মি গেল আড্ডা মারতে। ফিরে এসে কলেজ যাবে। এদিকে বারোটা বাজলো। একটা বাজলো….হঠাৎ খালি পায়ে ছুটে এসে মেয়ে সেই যে বালিশে মুখ গুঁজে পড়লো..এখনও ঐ।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বললে, এদিকে গোলাপি ছাপা শাড়ির বদলে তোর ঐ সবুজ ডোরাকাটা শাড়িটা গায়ে কোনো রকমে জড়ানো…..।
–বলিস কি রে! আর বাপের বাড়ি থেকে ফিরে আমি কি দেখলুম জানিস? নির্জন ফ্ল্যাটে ঠাকুরপোর চুল উসকোখুসকো….মুখে কথা নেই সারা দেহে ঘাম….জামা প্যান্ট ঘামে জবজব করছে…..।
ভুরু কাঁপয়ে রুমা বৌদি বললে—তাহলে ব্যাপারটা বুঝতেই পারছিস?
—তা আর বুঝতে বাকি আছে? গত পুজোর সময় থেকেই আমি সন্দেহ করেছিলাম, তবে বিয়ের আগেই যে ঐটুকু মেয়ে ফুলশয্যা বাধিয়ে বসবে সেটা ভাবি নি।
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে হাসিতে ফেটে পড়লো।
*****
মুখ নিচু করে ঊর্মি হাঁটছিল কলেজের দিকে। লম্বা পা ফেলে সমীরণ এসে দাঁড়ালো পাশে।
ঊর্মি চলার গতি কমালো। চলতে চলতে সমীরণ বললে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না?
–না। বললেই মনে হবে….সত্যি কথা গোপন করার চেষ্টা করছি। ঊর্মির চোখ দুটো ছলছল করে এলো।—নির্যাতনের রম খেসাত দিতে হয়েছে তোমাকে…..তার অসহায় সাক্ষী কেবলমাত্র….আমি….।
তোমার অনুমান সত্যি। তবে সে মুহূর্তে জীবনে দুজন সৎ পুরুষের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। এক জনের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। আর একজন…সুদর্শন….।
সমীরণ অবাক হয়ে চাইলো ঊর্মির দিকে।
—দুজন সৎ পুরুষ!
—মেয়ে হয়ে দুজনকেই সারাজীবন মনে রাখবো।
চোখের জল আঁচলে ঢাকা দিলে ঊর্মি।
এদিক ওদিক চেয়ে ঊর্মির হাত দুটো ধরলে সমীরণ। একমাত্র আমিই তোমাকে জানি ঊর্মি। সমীরণই ঊর্মির চোখ দুটো মুছিয়ে দিলে।