আয়া এসে দরজা খুলে দেয়। মাঝবয়সী আয়া। মাথায় ওর লম্বা ঘোমটা টানা। সাহেবের চোখাচোখি হতে চায় না মরি মা।
লম্বা লম্বা পা ফেলে ড্রইং রুম পার হয়ে ওপর তলায় উঠে যায় আতিক চৌধুরী। তারপর শোবার ঘরে নক করে জোরে জোরে। বার বার।
ধরা পড়ে গেছ তোমরা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে আতিক, এত বড় ট্রেজারি এত জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতা।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সোবহান। অবিন্যস্ত ওর মাথার চুল। কপালে ঘামের কণা। হিমেল হাওয়ায় বটপাতা যেমন করে কাপে, তেমনি কাঁপছে সায়মা। ভয়ে মুখ রফের মত শাদা হয়ে গেছে। শাড়িটা গুছিয়ে নিতেও ভুলে গেছে। ব্লাউজের নিচে অৰ্বাস নেই। পিঠের বোম খোলা।
বিচারকের মতো গম্ভীর কণ্ঠস্বর আতিকের, ‘কেমন চমৎকার মিথ্যা’ গল্প ফাঁদলে তুমি, সোবহান ভাই বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেছে। আমি একা একা বোরড় হচ্ছি।
সায়মার দিকে না ফিরেই বলে গেল, ‘এরপর তো আর আমাদের একসঙ্গে ধ্ব করা চলে না। এত বড় স্ক্যান্ডালের পর। এ লোকটাকে আমি চাকরি দিয়েছি নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়েছি। আর সে কিনা’ ঘৃণায় নাক শিটকায় আতিক চৌধুরী।
সারা ঘরময় থমথমে নীরবতা। অস্থিরভাবে পায়চারি করছে আতিক।দেয়ালের ঘড়িটা একটানা শব্দ করে যাচ্ছে টিক টিক টিক। সময় এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত তালে।
মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সোবহান। হাত দিয়ে চুল ঠিক করে। তারপর আস্তে আস্তে বলে, আপনি ঠিকই বলেছেন, এরপর এক সঙ্গে ঘর করতে পারবেন না আপনি সায়মাকে নিয়ে ওকে আমি ভালবাসি। ওকে আমি নিয়ে যেতে চাই। ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।
একটু থেকে টেনে বলে, এ কলঙ্কের আঁচ একটুও আপনার গায়ে লাগবে না। ধ্ব দায়দায়িত্ব আমার আর সায়মার। সব স্ক্যান্ডাল মাথায় নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে চাই। এগুতে চাই। বলতে বলতে সায়মার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সোবহান। ওর গা ঘেঁষে।
হ্যাঁ, চলে যাও। তোমরা, আজই এক্ষুণি। ডাইভোর্সের ফরমালিটি আমি কালই সেরে ফেলব। আরও দ্রুত পায়চারি করছে আতিক চৌধুরী। রাগে দগদগে ঘায়ের মতো লাল হয়ে উঠেছে ওর চোখ দুটো।
.
আজ আর টেবিলের ওপর পা দুটোদুলে ঝুলন্ত বাদুড় হয়ে বসেনি আতিক চৌধুরী। লোদা হয়ে বসেছে টিল্টিং চেয়ারটা?। পায়ে আগের মতই চকচকে ব্যালি সু। দারুণ রিলা ওর চোখমুখ। টেলিফোন ডায়েল করে আস্তে আস্তে।
হ্যালো, ফাওজিয়া, আমি আতিক। …..এ কয়টা দিন ব্যস্ত ছিলাম। তাই ফোন করতে পারিনি। হাঁ চলে গেছে ওরা…..জানি না কোথায় উঠেছে…হয়তো সোবহানের দেশের বাড়িতে…আজ এসো সন্ধ্যার পর….বাসা তো খালি…আর কেউ নেই…ঠিক দাঁড়ানো পাবে আমাকে দরজার সামনে….আরে বাবা, ছয়টা মাস তো সময় দাও….নইলে লোকে আমাদের সন্দেহ করবে…হ্যাঁ, উইথ এ ক্লীন সেট…..।
ফোনটা নামিয়ে রেখে বলে আতিক, গুড।