অনেক সাহায্য করেছেন উনি, সরকারী অনুদানের ব্যবস্থাও করেছেন।”
“হুম,” মাথা নেড়ে বললো ছফা।
“কিন্তু আপনি কে, সেটা তো বললেন না?”
লোকটার দিকে স্থিরচোখে তাকালো ছফা। “আমি ঢাকা থেকে এসেছি…ঢাকার ডিবি অফিস থেকে। আমার নাম নুরে ছফা।”
কেয়ারটেকার একটু বিস্মিত হবার ভান করলো। “কিছু হয়েছে নাকি আমাদের এখানে?”
বাঁকাহাসি ফুটে উঠলো ছফার ঠোঁটে। “এ প্রশ্নের উত্তর তার কাছ থেকেই জেনে নেবেন, যিনি আপনাকে এখানে পাঠিয়েছেন আমাকে চোখে চোখে রাখার জন্য।”
.
অধ্যায় ২৪
মাস্টারের স্কুল থেকে সোজা নিজের হোটেল রুমে ফিরে এসেছে নুরে ছফা। হোটেল রুমের ছোট্ট ঘরটায় পায়চারী করার মতো জায়গা কমই আছে, তবুও সে পায়চারী করতে করতে একটা কথাই ভেবে যাচ্ছে-সুন্দরপুরে মাস্টার রমাকান্তকামারের ঘর থেকে কী পাওয়া যেতে পারে। সে নিশ্চিত, সেলফোন অবশ্যই আছে, তবে সঙ্গত কারণেই সেটা লুকিয়ে রাখেন।
মাস্টার এখন খুবই শক্তিশালী মানুষ। যদিও ক্ষমতার দাপট দেখান না, নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই নিমগ্ন থাকেন সব সময়, তারপরও তিনি যদি জেনে যান ছফা তার ঘরে চোর পাঠিয়েছিলো তাহলে হয়তো এমপির কাছে নালিশ দেবেন, তাই ছফাকে এ ব্যাপারে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। আতরকেও বলে দিয়েছে, খুব সাবধানে কাজটা করা দরকার।
এমন সময় দরজায় নক হলে ছফার ভাবনায় ছেদ পড়লো।
“আতর?”
“হ, স্যার।” দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠলো ইনফর্মার। তার কণ্ঠের খুশিখুশি ভাবটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
নুরে ছফা দরজা খুলে দিলে আতর আলী রুমে ঢুকে পড়লো। কোনো কিছু না বলে পকেট থেকে একটা কমদামি চায়নিজ মোবাইলফোন আর কিছু চিঠিপত্র বের করে আনলো সে।
“এই লন,” এমনভাবে দু-হাতে ধরে রাখলো ওগুলো যেনো দামি কোনো উপহার তুলে দিচ্ছে। “কইছিলাম না বলুই পিরবো।”
ছফা প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকালে ফোনটার দিকে। দ্রুত সেটা চালু করলো সে। উদগ্রীব হয়ে চেয়ে রইলো আতর আলী। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই হতাশা ভর করলো ছফার চোখেমুখে। রেগেমেগে ফোনটার পেছনের অংশ খুলে ফেললো।
“ধুর!” প্রচণ্ড রাগে বলে উঠলো সে।
“কী হইছে?” আতর কিছুই বুঝতে পারছে না। রবীন্দ্রনাথ দুই-৮
“এটার তো সিমই নেই!”
“সিম নাই?!” অবিশ্বাসে বলে উঠলো ইনফর্মার। “কন্ কি!”
ছফা কিছু বললো না।
“সিম না থাকলে কি কুননা কামে দিবো না এইটা?”
আতরের দিকে তাকালো নুরে ছফা। ফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টি, মানে আইএমইআই নাম্বার দিয়েও যে সিমের হদিস বের করা যায় সেটা এই স্বল্পশিক্ষিত ইনফর্মারকে বললেও বুঝবে না। তাছাড়া কাজটা করা একটু সময়সাপেক্ষ। সিম থাকলে অনেক সহজেই কল হিস্ট্রি বের করা যেতো।
সিম নেই দেখে আতর মুখ বেজার করে বসে আছে।
এখন একটা ব্যাপারে ছফা নিশ্চিত-রমাকান্তকামার নিজের মোবাইলফোনটা গোপন রাখেন, তারচেয়েও বড় কথা, সেই ফোনের সিম খুলে রাখেন নিরাপদ কোনো জায়গায়! ভদ্রলোক এতোটা সতর্ক কেন-এ প্রশ্নের জবাব তার কাছে আছে-কারো সাথে তার যোগাযোগের ব্যাপারটা যেনো ফাঁস না হয়ে যায় তাই সদা সতর্ক থাকেন। আর এরকম একজন মানুষই আছে-মুশকান জুবেরি!
মাস্টারের মোবাইলফোনটার ব্যাটারির পেছনে থাকা আইএমইআই নাম্বারটার ছবি তুলে রাখলো নিজের মোবাইলফোনের ক্যামেরায়। তারপর যে চিঠিগুলো বল্টু চুরি করে এনেছে সেগুলোর দিকে নজর দিলো সে। একটু নেড়েচেড়েই বুঝতে পারলো, সবগুলো অফিশিয়াল চিঠি। খামের উপরে প্রেরক আর প্রাপকের জায়গায় বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা দেখে সেগুলো আর ঘেঁটে দেখার ইচ্ছে করলো না। নতুন স্কুল আর লাইব্রেরি দেবার মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকারী আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তির সাথে চিঠিপত্র আদান প্রদান করেছেন মাস্টার।
“মনে লয় মাস্টর টের পায়া গেছে, অবশেষে বিজ্ঞের মতো বললো আতর আলী।
“উনি কিভাবে টের পাবেন?” ছফা বিরক্ত হয়ে বললেও তার কাছে এখন মনে হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথে প্রথম দিন দেখা হয়ে যাওয়াটাই ভুল হয়ে গেছে। তার উচিত হয়নি ওখানে যাওয়া। কে জানতো, মাস্টার ঐ সময় লাইব্রেরিতে থাকেন।
“হে অনেক বড় পণ্ডিত,” ব্যাখ্যা করতে শুরু করলো ইনফর্মার। “সব কিছু আগে থেইক্যা বুইজ্যা ফালায়। মাথা তো না যে কমপিটার।”
ছফা কিছু বললো না। মাস্টার যে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন একজন মানুষ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফোনের ব্যাটারিটা আবার লাগিয়ে নিলো সে।
“এখন তাড়াতাড়ি এগুলো জায়গামতো রেখে আসা দরকার।”
মোবাইল ফোনসহ চিঠিপত্রগুলো ইনফর্মারের দিকে বাড়িয়ে দিলো ছফা। এমন সময় দুটো খাম পড়ে গেলো মেঝেতে। যেই না ও দুটো। তুলতে যাবে আতর তখনই ছফার নজরে কিছু একটা ধরা পড়লো-দুটো খামের মাঝখানে ছোট্ট একটা চিরকুট আছে। উপুড় হয়ে নিজেই চিরকুটটা তুলে নিলো। অন্য চিঠিগুলোর খামে ভরা থাকলেও এটার কোনো খাম নেই। বাকিগুলো কম্পিউটারে টাইপ করা হলেও চিরকুটটা হাতেলেখা। লেখাটা বেশ সুন্দর। মনোযোগ দিয়ে পড়লো সেটা :
সম্পদ-সম্পত্তি খারাপ মানুষের হাতে পড়লে দশের ক্ষতি, দেশের ক্ষতি। ভালো মানুষের হাতে পড়লে মহৎ কিছুর জন্ম হয়। আপনি এ সম্পত্তি নিয়ে কি করবেন সে নিয়ে আমার মধ্যে কোনো সংশয় নেই। শুধু ছোট্ট একটি অনুরোধ, রবীন্দ্রনাথকে চমৎকার একটি লাইব্রেরি বানাবেন। বইয়ের চেয়ে শক্তিশালী খাবার এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি! ওই লাইব্রেরিটা যদি রবীন্দ্রনাথের নামে হয় তাহলে আমি ভীষণ খুশি হবো। একটা কথা মনে রাখবেন, এটা আমি আপনাকে দেইনি। রাশেদ জুবেরি তার জীবন বাঁচানোর জন্য আপনার কাছে চিরটাকালই কৃতজ্ঞ ছিলো। সে হয়তো মুখ ফুটে সেটা কখনও বলতে পারেনি।