গাল চুলকাতে শুরু করলো সাবেক ইনভেস্টিগেটর। “তারপর?”
“গাড়িটা ধরা সম্ভব হয়নি।”
“নম্বরটা দেখেন নাই? ওইটা ট্রেস করলে তো–”
“না, স্যার…ওটার কথা খেয়াল ছিলো না তখন,” উৎসুক কেএস খানকে মাঝপথে দমিয়ে দিলো ছফা।
“ওহ্,” একটু হতাশ হলো সাবেক ইনভেস্টিগেটর।
এমন সময় দু-কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো আইনস্টাইন।
“কীরে, আইজকাল তোর চা আনতে এতো দেরি হয় ক্যান?” জানতে চাইলো কেএস খান।
চায়ের কাপ দুটো সোফার সামনে কফি টেবিলের উপর রাখতে রাখতে জবাবদিহি করলো ছেলেটা, “নিচের দোকান থিকা তো এহন আর চা আনি না…ঐ হালারপুতে মুর্দালাশে যে চা-পাতা দেয় ওইগুলা সস্তায় কিইন্যা আনে…ওয়াক থু! চিন্তা করছেন কারবারটা!”
“তরে এইসব কথা কে কইলো?”
কেএসকের দিকে বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে তাকালো আইনস্টাইন। “ওই হালারপুতেরে আমি এক বেটার কাছ থিইক্যা চা কিনতে দেখছি…পাঁচ কেজি কিনলো মাত্র দুইশো ট্যাকা দিয়া। আপানেই কন, অরিজিনাল চা কি এতো সস্তা? তহনই আমি বুইজ্যা হালাইছি, হালারপুতে দুই নম্বরি করে।”
“আইজকাল দেহি কথায় কথায় হালারপুত কস্…ঘটনা কি?” কেএস খান ভুরু কপালে তুলে বললো।
জিভে কামড় দিলো পিচ্চিটা। একটু শরমিন্দা হয়েছে সে, আর কিছু না বলে চুপচাপ ঘর থেকে চলে গেলো।
“চা নেন, ছফা,” নিজের কাপটা নেবার আগে বললো কেএস খান। “আপনে তারে খুবই অল্প সময়ের জন্য দেখছেন,” কাপে চুমুক দিলো মি, খান। “এইটা তো রিলায়েবল হইতে পারে না…অন্য কিছুও হইবার পারে।”
“কী রকম?” ভুরু কুঁচকে তাকালো ছফা।
অমায়িক হাসি দিলো কেএসকে। “আপনের তো হেলুসিনেশানও হইবার পারে, পারে না?”
ছফা একটুখানি বিষম খেলো যেনো। “হেলুসিনেশান?”
“অবাক হওনের কিছু নাই,” ছফাকে আশ্বস্ত করে চায়ে চুমুক দিলো সাবেক ডিবি অফিসার। “আপনের ধ্যান-জ্ঞান হইলো ঐ মহিলা, তারে তিনটা বছর ধইরা পাগলের মতো খুঁজছেন। এরকম সিচুয়েশনে হেলুসিনেশান তো হইবারই পারে।”
ছফা চায়ের কাপটা তুলে নিলো। “কিন্তু আমার মনে হয় না হেলুসিনেশান ছিলো ওটা।”
খোদাদাদ শাহবাজ খানকে দেখে মনে হলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। “সার্ভিসে জয়েন করার পর আমার তিন নম্বর কেসটা খুব ভুগাইছিলো, বুঝলেন?”
নুরে ছফা বুঝতে পারলো অতীত রোমন্থনের মেজাজে চলে গেছে মি. খান। জোর করে আগ্রহী হবার অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুললো চোখেমুখে।
“একটা মার্ডার কেস ছিলো। আমি খুব দ্রুত বাইর করতে পারছিলাম খুনটা কে করছে, কিন্তু সাসপেক্ট ততোক্ষনে পগাড় পার।”
ছফা কিছু বললো না। জানে, গল্পটা শেষ হয়নি। চায়ে চুমুক দিলো সে।
“এরপর কী হইলো জানেন?” জবাবের অপেক্ষা না করেই বললো আবার, “আমি যেইখানেই যাই ঐ ব্যাটারে খুঁজি। এক পর্যায়ে তারে দেখতেও শুরু করলাম!”
“দেখতে শুরু করলেন মানে?”
“এই ধরেন, মানুষজনের ভীড়ে, পথেঘাটে মনে হইতো তারে দেখছি।” একটু থেমে আবার বললো সে, “আসলে পুরাটাই ছিলো হেলুসিনেশন। এইটারে আপনে ডিশনও কইবার পারেন।”
কাঁধ তুলে আস্তে করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছফা। “হতে পারে ওটা হেলুসিনেশান। কিন্তু আমি আজকে সেজন্যে আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসিনি। আসলে, আপনার সাথে জরুরী একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছি, সেই সঙ্গে একটা জিনিসও দেখাতে এসেছি, স্যার।”
“কি জিনিস?” কৌতূহলি হয়ে উঠলো সাবেক ইনভেস্টিগেটর।
কোনো কথা না বলে চায়ের কাপটা রেখে পকেট থেকে একটা ছবি বের করে আনলো নুরে ছফা। “এই যে, স্যার।”
কেএস খান আগ্রহভরে ছবিটা হাতে তুলে নিয়ে দেখলো কয়েক মুহূর্ত। “মুশকান জুবেরির ছবি??” বিস্ময়ে বলে উঠলো সাবেক ডিবি অফিসার।
“জি, স্যার। এটাই মুশকান জুবেরি। অবশেষে তার ছবি আমি পেয়েছি।”
“কইত্থেন পাইলেন এই জিনিস?”
“একেবারেই অবিশ্বাস্য গল্প। আপনার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হবে।” ছফার মুখে রহস্যময় হাসি।
উদগ্রীব হয়ে চেয়ে রইলো খোদাদাদ শাহবাজ খান।
.
অধ্যায় ১১
“তাজ্জব ব্যাপার!”
নুরে ছফার কাছ থেকে সবটা শুনে বললেন কেএস খান।
বিশাল কাকতালীয় ঘটনাই বটে! মুশকান জুবেরির এক ভিক্টিম, হাসিবের মরণাপন্ন মা আবিষ্কার করেছে সতুর দশকের মাঝামাঝিতে আমেরিকায় যখন স্বামীর সঙ্গে থাকতো তখন তাদের প্রতিবেশী ছিলো মুশকান।
কেএস খানের বিস্ময়ের ঘোর যেনো কাটছেই না। “পুরাই ড্রামা?”
মাথা নেড়ে সায় দিলো ছফা। এ ব্যাপারে তার মনেও কোনো সন্দেহ নেই। “আশেক মাহমুদ এখন চাচ্ছেন আমি যেনো আবার নতুন করে কেসটা নিয়ে কাজ করি।”
মুশকানের ছবিটা একহাতে ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে কেএস খান।
“উনার বোন আর বেশি দিন বাঁচবে না। সম্ভবত উনি চাইছেন এই সময়ের মধ্যে আমি যেনো মুশকানকে ধরার ব্যবস্থা করি। এরজন্যে আমাকে সব ধরণের সাহায্য করবেন।”
ছবিটার দিকে তাকিয়েই বললো মি. খান, “এইভাবে টাইম-ফ্রেম কইরা দিলে কিন্তু ইনভেস্টিগেশন করাটা খুব টাফ হয়া যায়। তাছাড়া, আবেগ টাবেগ দিয়া কোনো ইনভেস্টিগেশন করাও ঠিক না। ভদ্রলোক ইমোশনাল হয়া গেছে।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো নুরে ছফা। “ঠিক বলেছেন, স্যার। কিন্তু আমি এই সুযোগটা নেবো।”
ছফার দিকে তাকালো কেএস খান। “কিছু মনে কইরেন না, একটা কথা বলি।”
“জি, স্যার…বলেন?”