“কী রকম?” ভুরু কুঁচকে তাকালো ছফা।
অমায়িক হাসি দিলো কেএসকে। “আপনের তো হেলুসিনেশানও হইবার পারে, পারে না?”
ছফা একটুখানি বিষম খেলো যেনো। “হেলুসিনেশান?”
“অবাক হওনের কিছু নাই,” ছফাকে আশ্বস্ত করে চায়ে চুমুক দিলো সাবেক ডিবি অফিসার। “আপনের ধ্যান-জ্ঞান হইলো ঐ মহিলা, তারে তিনটা বছর ধইরা পাগলের মতো খুঁজছেন। এরকম সিচুয়েশনে হেলুসিনেশান তো হইবারই পারে।”
ছফা চায়ের কাপটা তুলে নিলো। “কিন্তু আমার মনে হয় না হেলুসিনেশান ছিলো ওটা।”
খোদাদাদ শাহবাজ খানকে দেখে মনে হলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। “সার্ভিসে জয়েন করার পর আমার তিন নম্বর কেসটা খুব ভুগাইছিলো, বুঝলেন?”
নুরে ছফা বুঝতে পারলো অতীত রোমন্থনের মেজাজে চলে গেছে মি. খান। জোর করে আগ্রহী হবার অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুললো চোখেমুখে।
“একটা মার্ডার কেস ছিলো। আমি খুব দ্রুত বাইর করতে পারছিলাম খুনটা কে করছে, কিন্তু সাসপেক্ট ততোক্ষনে পগাড় পার।”
ছফা কিছু বললো না। জানে, গল্পটা শেষ হয়নি। চায়ে চুমুক দিলো সে।
“এরপর কী হইলো জানেন?” জবাবের অপেক্ষা না করেই বললো আবার, “আমি যেইখানেই যাই ঐ ব্যাটারে খুঁজি। এক পর্যায়ে তারে দেখতেও শুরু করলাম!”
“দেখতে শুরু করলেন মানে?”
“এই ধরেন, মানুষজনের ভীড়ে, পথেঘাটে মনে হইতো তারে দেখছি।” একটু থেমে আবার বললো সে, “আসলে পুরাটাই ছিলো হেলুসিনেশন। এইটারে আপনে ডিশনও কইবার পারেন।”
কাঁধ তুলে আস্তে করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছফা। “হতে পারে ওটা হেলুসিনেশান। কিন্তু আমি আজকে সেজন্যে আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসিনি। আসলে, আপনার সাথে জরুরী একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছি, সেই সঙ্গে একটা জিনিসও দেখাতে এসেছি, স্যার।”
“কি জিনিস?” কৌতূহলি হয়ে উঠলো সাবেক ইনভেস্টিগেটর।
কোনো কথা না বলে চায়ের কাপটা রেখে পকেট থেকে একটা ছবি বের করে আনলো নুরে ছফা। “এই যে, স্যার।”
কেএস খান আগ্রহভরে ছবিটা হাতে তুলে নিয়ে দেখলো কয়েক মুহূর্ত। “মুশকান জুবেরির ছবি??” বিস্ময়ে বলে উঠলো সাবেক ডিবি অফিসার।
“জি, স্যার। এটাই মুশকান জুবেরি। অবশেষে তার ছবি আমি পেয়েছি।”
“কইত্থেন পাইলেন এই জিনিস?”
“একেবারেই অবিশ্বাস্য গল্প। আপনার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হবে।” ছফার মুখে রহস্যময় হাসি।
উদগ্রীব হয়ে চেয়ে রইলো খোদাদাদ শাহবাজ খান।
১০. কেএস খানের খোলা দরজা
অধ্যায় ১০
নুরে ছফা দাঁড়িয়ে আছে কেএস খানের খোলা দরজার সামনে।
তাকে দেখেই ফোনটা ক্রাডলের উপরে রেখে দিলো সাবেক ডিবি অফিসার। “আরে, ছফা যে,” এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। “আপনে যে আসবেন জানতাম না তো।”
নুরে ছফা ঘরের ভেতরে পা ফেললো। “আমি আপনার মোবাইলফোনে কল দিয়ে দেখি সেটা বন্ধ, তারপর ল্যান্ডফোনেও কল দিয়েছিলাম। আইনস্টাইন বললো, আপনি একটু বাইরে গেছেন হাটাহাটি করতে।”
“হ…রোজ বিকালে একটু হাটাহাটি করি পার্কে।”
“তাকে আমি বলেছিলাম, আমি আসছি…সে আপনাকে বলেনি?”
হেসে ফেললো কেএসকে। “পোলাপান মানুষ, মনে হয় ভুইলা গেছে।” একটু থেমে আবার বললো, “বসেন।” নিজেও বসে গেলো সোফায়। “আজকে কি আপনার অফ ডিউটি?”
“না, স্যার…ছুটি পেয়েছি।”
কেএস খান বুঝতে পারলো না। তাদের পেশায় ছুটি নিয়েছি’ পরিচিত শব্দ কিন্তু ছুটি পেয়েছি,’ এটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। “আচ্ছা,” কোনো রকমে নিজের কৌতূহল দমিয়ে বললো সাবেক ডিবি অফিসার।
“ইয়াল্লা!” দরজার দিক থেকে একটা অল্প বয়েসী কণ্ঠ বলে উঠলে তারা দু-জন সেদিকে তাকালো।
আইনস্টাইন জিভে কামড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে একটা চায়ের ফ্লাস্ক।
“আমি ভুইল্যা গেছিলাম…স্যারে আমারে ফোনে কইছিলো আইবো।”
“থাক, তরে আর কিছু কইতে হইবো না। যা, দুই কাপ চা দে তাড়াতাড়ি।”
আইনস্টাইন দৌড়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যাবার সময় নুরে ছফার দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ হাসি দিয়ে গেলো। ছফাও হেসে আশ্বস্ত করলো তাকে।
“ছুটি পাইছেন মানে বুঝলাম না?” উৎসুক কেএসখান অবশেষে প্রশ্নটা করেই ফেললো।
নুরে ছফা গম্ভীর হয়ে গেলো কয়েক মুহূর্তের জন্য।
সাবেক ডিবি অফিসার ভাবলো, ছফা কোনো কারণে পানিশমেন্টের শিকার হয়েছে কিনা।
“আমাকে স্পেশাল ছুটি দেয়া হয়েছে, স্যার।”
সপ্রশ্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কেএস খান।
“মুশকান জুবেরিকে ট্র্যাক ডাউন করার জন্য।”
“এরজন্যই কি পয়লা বৈশাখে আপনে ছায়ানটের প্রোগ্রামে গেছিলেন?”
মাথা দোলালো ছফা। “না, স্যার। ছুটি আমি পেয়েছি আজকে।”
“ও।”
“ঐদিন গিয়েছিলাম এমনি। হঠাৎ করেই মনে হয়েছিলো মুশকান জুবেরি ওখানে থাকতে পারে।”
“বলেন কি?” অবাক হলো কেএস খান। “এইটা আপনের মনে হইলো কেন?”
কাঁধ তুললো ছফা। “তা তো জানি না। কেনজানি মনে হলো মহিলা ওখানে যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথের বিরাট বড় ভক্ত। তার মুখ থেকেই শুনেছিলাম, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নাকি কখনও মিস করেনি।”
“বুঝছি।” মাথা নেড়ে সায় দিলো সাবেক ডিবি অফিসার। “মজার ব্যাপার কি জানেন, স্যার? আমার ধারণা মোটেও মিথ্যে ছিলো
“মানে?!” ডিবির সাবেক অফিসারকে বিস্মিত দেখালো।
“ফেরার পথে ঐ মহিলাকে আমি এক ঝলক দেখেছি…শাহবাগের দিকে।”
“কি!”
“একটা প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলো…আমি ছিলাম রিক্সায়।”