“আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কখনও আমাদের কোনো কাস্টমারের বিরুদ্ধে কিছু করবো না-এটা সব সময় মাথায় রাখবেন।”
“জি, স্যার।”
“ঐ প্যাসেঞ্জার কী কারণে রিশিডিউল করা ফ্লাইট মিস করলেন সেটার ব্যাখ্যাও আমাদের খোঁজার দরকার নেই। আমরা আমাদের টিকেট বিক্রি করেছি, ফাইনের টাকা পেয়েছি, দ্যাটস ইট।”
চুপ মেরে রইলো রোমানা।
মঞ্জুর কাদের হাতঘড়ির দিকে তাকালো। “সময় হয়ে গেছে, বাসায় চলে যান।”
“জি, স্যার,” কথাটা বলে রোমানা পা বাড়ালো নিজের কিউবিকলের দিকে। ওখানে তার ব্যাগ-পার্স আছে।
“শুনুন?”
পেছনে থেকে বসের ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ালো সে।
“এখন থেকে ডিটেক্টিভ নভেল একটু কম পড়বেন, ওকে?”
অপারেশন হেড মাপা হাসি দিয়ে রোবটের মতো ঘুরে চলে গেলো।
এমন উপদেশ পেয়ে অপমাণিত বোধ করলো রোমানা। সেই অপমান হজম করে আবারো পা বাড়ালো কিউবিকলের দিকে। মনে মনে বললো সে, জি, স্যার, এখন থেকে কম কম বই পড়বো আর আপনার মতো রোবট হবার চেষ্টা করবো!
.
অধ্যায় ১০
নুরে ছফা দাঁড়িয়ে আছে কেএস খানের খোলা দরজার সামনে।
তাকে দেখেই ফোনটা ক্রাডলের উপরে রেখে দিলো সাবেক ডিবি অফিসার। “আরে, ছফা যে,” এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। “আপনে যে আসবেন জানতাম না তো।”
নুরে ছফা ঘরের ভেতরে পা ফেললো। “আমি আপনার মোবাইলফোনে কল দিয়ে দেখি সেটা বন্ধ, তারপর ল্যান্ডফোনেও কল দিয়েছিলাম। আইনস্টাইন বললো, আপনি একটু বাইরে গেছেন হাটাহাটি করতে।”
“হ…রোজ বিকালে একটু হাটাহাটি করি পার্কে।”
“তাকে আমি বলেছিলাম, আমি আসছি…সে আপনাকে বলেনি?”
হেসে ফেললো কেএসকে। “পোলাপান মানুষ, মনে হয় ভুইলা গেছে।” একটু থেমে আবার বললো, “বসেন।” নিজেও বসে গেলো সোফায়। “আজকে কি আপনার অফ ডিউটি?”
“না, স্যার…ছুটি পেয়েছি।”
কেএস খান বুঝতে পারলো না। তাদের পেশায় ছুটি নিয়েছি’ পরিচিত শব্দ কিন্তু ছুটি পেয়েছি,’ এটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। “আচ্ছা,” কোনো রকমে নিজের কৌতূহল দমিয়ে বললো সাবেক ডিবি অফিসার।
“ইয়াল্লা!” দরজার দিক থেকে একটা অল্প বয়েসী কণ্ঠ বলে উঠলে তারা দু-জন সেদিকে তাকালো।
আইনস্টাইন জিভে কামড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে একটা চায়ের ফ্লাস্ক।
“আমি ভুইল্যা গেছিলাম…স্যারে আমারে ফোনে কইছিলো আইবো।”
“থাক, তরে আর কিছু কইতে হইবো না। যা, দুই কাপ চা দে তাড়াতাড়ি।”
আইনস্টাইন দৌড়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যাবার সময় নুরে ছফার দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ হাসি দিয়ে গেলো। ছফাও হেসে আশ্বস্ত করলো তাকে।
“ছুটি পাইছেন মানে বুঝলাম না?” উৎসুক কেএসখান অবশেষে প্রশ্নটা করেই ফেললো।
নুরে ছফা গম্ভীর হয়ে গেলো কয়েক মুহূর্তের জন্য।
সাবেক ডিবি অফিসার ভাবলো, ছফা কোনো কারণে পানিশমেন্টের শিকার হয়েছে কিনা।
“আমাকে স্পেশাল ছুটি দেয়া হয়েছে, স্যার।”
সপ্রশ্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কেএস খান।
“মুশকান জুবেরিকে ট্র্যাক ডাউন করার জন্য।”
“এরজন্যই কি পয়লা বৈশাখে আপনে ছায়ানটের প্রোগ্রামে গেছিলেন?”
মাথা দোলালো ছফা। “না, স্যার। ছুটি আমি পেয়েছি আজকে।”
“ও।”
“ঐদিন গিয়েছিলাম এমনি। হঠাৎ করেই মনে হয়েছিলো মুশকান জুবেরি ওখানে থাকতে পারে।”
“বলেন কি?” অবাক হলো কেএস খান। “এইটা আপনের মনে হইলো কেন?”
কাঁধ তুললো ছফা। “তা তো জানি না। কেনজানি মনে হলো মহিলা ওখানে যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথের বিরাট বড় ভক্ত। তার মুখ থেকেই শুনেছিলাম, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নাকি কখনও মিস করেনি।”
“বুঝছি।” মাথা নেড়ে সায় দিলো সাবেক ডিবি অফিসার। “মজার ব্যাপার কি জানেন, স্যার? আমার ধারণা মোটেও মিথ্যে ছিলো
“মানে?!” ডিবির সাবেক অফিসারকে বিস্মিত দেখালো।
“ফেরার পথে ঐ মহিলাকে আমি এক ঝলক দেখেছি…শাহবাগের দিকে।”
“কি!”
“একটা প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলো…আমি ছিলাম রিক্সায়।”
গাল চুলকাতে শুরু করলো সাবেক ইনভেস্টিগেটর। “তারপর?”
“গাড়িটা ধরা সম্ভব হয়নি।”
“নম্বরটা দেখেন নাই? ওইটা ট্রেস করলে তো–”
“না, স্যার…ওটার কথা খেয়াল ছিলো না তখন,” উৎসুক কেএস খানকে মাঝপথে দমিয়ে দিলো ছফা।
“ওহ্,” একটু হতাশ হলো সাবেক ইনভেস্টিগেটর।
এমন সময় দু-কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো আইনস্টাইন।
“কীরে, আইজকাল তোর চা আনতে এতো দেরি হয় ক্যান?” জানতে চাইলো কেএস খান।
চায়ের কাপ দুটো সোফার সামনে কফি টেবিলের উপর রাখতে রাখতে জবাবদিহি করলো ছেলেটা, “নিচের দোকান থিকা তো এহন আর চা আনি না…ঐ হালারপুতে মুর্দালাশে যে চা-পাতা দেয় ওইগুলা সস্তায় কিইন্যা আনে…ওয়াক থু! চিন্তা করছেন কারবারটা!”
“তরে এইসব কথা কে কইলো?”
কেএসকের দিকে বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে তাকালো আইনস্টাইন। “ওই হালারপুতেরে আমি এক বেটার কাছ থিইক্যা চা কিনতে দেখছি…পাঁচ কেজি কিনলো মাত্র দুইশো ট্যাকা দিয়া। আপানেই কন, অরিজিনাল চা কি এতো সস্তা? তহনই আমি বুইজ্যা হালাইছি, হালারপুতে দুই নম্বরি করে।”
“আইজকাল দেহি কথায় কথায় হালারপুত কস্…ঘটনা কি?” কেএস খান ভুরু কপালে তুলে বললো।
জিভে কামড় দিলো পিচ্চিটা। একটু শরমিন্দা হয়েছে সে, আর কিছু না বলে চুপচাপ ঘর থেকে চলে গেলো।
“চা নেন, ছফা,” নিজের কাপটা নেবার আগে বললো কেএস খান। “আপনে তারে খুবই অল্প সময়ের জন্য দেখছেন,” কাপে চুমুক দিলো মি, খান। “এইটা তো রিলায়েবল হইতে পারে না…অন্য কিছুও হইবার পারে।”