“পহেলা বৈশাখে রমনায় গেছিলে?!” বিস্ময় আর অবিশ্বাসটা একেবারেই সঙ্গত। বিবাহিত জীবনে কখনও ইনভেস্টিগেটর স্বামী তাকে নিয়ে পহেলা বৈশাখে বের হয়নি। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে একটা মৃদু দীর্ঘশ্বাস শোনা গেলো। কয়েক মুহূর্তের নীরবতার পর অবশেষে খুবই স্রিয়মান কণ্ঠে জানতে চাইলো, “একা গেছিলে, নাকি…?”
কেএস খান কী বলবে ভেবে পেলো না। “ইয়ে মানে—”
“ওহ্…ভুলে গেছিলাম,” কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বলে উঠলো এবার। “জুবায়েরকে পড়াতে হবে…এখন রাখি।”
কলটা কেটে যাবার পরও কেএসকে উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলো জানালা দিয়ে। ঈর্ষা শব্দটি এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে না সে। এটার উৎপত্তির কারণ তার ভালো করেই জানা আছে, কিন্তু এর ব্যাপ্তি কতোটা জানে না। তবে জানে, আগামি দুয়েকদিন তাকে আর কল করবে না এই মহিলা। ঈর্ষা হলো আগুন, সেই আগুন স্তিমিত হতে একটু সময় লাগেই।
“স্লামালেকুম, স্যার।”
জাঁদরেল একটি কণ্ঠ বলে উঠলে কেএস খান অনেকটা চমকে তাকালো দরজার দিকে।
.
অধ্যায় ৯
“তুমি শিওর?” রিগ্যাল এয়ারলাইন্সের অপারেশন হেড মঞ্জুর কাদের ভুরু কুঁচকে আবারো জানতে চাইলো।
“জি, স্যার।” জবাব দিলো রোমানা।
তারা এখন দাঁড়িয়ে আছে ফ্রন্টডেস্ক থেকে একটু দূরে।
“মহিলা ফ্লাইট মিস করে আবার রিশিডিউল করে,” ডিবির সরবরাহ করা ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললো মঞ্জুর কাদের।
রোমানা বুঝতে পারলো না এটা প্রশ্ন কিনা, তারপরও মাথা নেড়ে সায় দিলো সে।
“ছবির এই মহিলাই ছিলো তাহলে?” মুখ তুলে তাকালো অপারেশন হেড। “তুমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর?”
রোমানা এবার ধন্দে পড়ে গেলো। হান্ড্রেড পার্সেন্ট শব্দটা তাকে সব সময়ই অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। জগতের কোনো কিছু সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যে টেকনিক্যালি ভুল এটা সে কর্মজীবনে প্রবেশ করেই বুঝে গেছে।
“না, মানে,..”
মঞ্জুর কাদের সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর কিভাবে হবো, স্যার?”
“কিভাবে হবেন মানে? আপনি না তাকে দেখেছেন?”
“দেখেছি কিন্তু ঐ মহিলার চোখ ছাড়া তো কিছু দেখিনি।”
“কি!” অবাক হলো অপারেশন হেড। “চোখ ছাড়া কিছু দেখেননি মানে!?”
“মহিলা হিজাব পরা ছিলো, স্যার,” তড়িঘড়ি ব্যাখ্যা দিলো রোমানা।
“হিজাব?” কপালে ভাঁজ পড়লো অপারেশন হেডের।
“জি, স্যার…শুধু চোখদুটো দেখা গেছে।”
গভীর করে দম নিয়ে মাথা দোলালো মঞ্জুর কাদের। আর তাতেই আপনি বুঝে গেলেন এটা সেই মহিলা?”
রোমানা ঢোঁক গিলল।
“শুধু একজোড়া চোখ দেখে?”
“স্যার, একজন প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট মিস্ করার পর রিশিডিউল করলো, তারপর সেটাও মিস্ করলো ইচ্ছেকৃতভাবে। ভদ্রমহিলাকে আমি ফ্লাইটের কিছুক্ষণ আগেও লাউঞ্জে ওয়েট করতে দেখেছি।”
“এ থেকেই আপনি ধরে নিলেন এই মহিলা কোনো ক্রিমিনাল না হয়ে যায় না…ডিবি যার ছবি দিয়ে গেছে এটা সে-ই হবে?”
মাথা নেড়ে সায় দিলো রোমানা। তাছাড়া আমি মহিলার চোখদুটো ভালো করে দেখেছি, আমার কিউবিকলের খুব কাছেই বসেই ছিলো…ছবির এই মহিলার মতোই, স্যার। তার অদ্ভুত আচরণের ব্যাপারটা কনসিডার করলে একটা বিষয়ই মাথায় আসে আর সেটা-”
“আপনি আসলে ঐ মহিলার এই ব্যাপারটাকে সন্দেহজনক হিসেবে দেখেছেন,” কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বললো অপারেশন চিফ। “তাই তো?”
“জি, স্যার।”
“কিন্তু উনার ফ্লাইট মিস্ করার আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, এটা ভেবে দেখেছেন কি?”
বসের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রোমানা।
মঞ্জুর কাদের বুকে দু-হাত ভাঁজ করে গম্ভীর হয়ে বললো, “মনে করুন, একেবারে শেষ সময়ে মহিলার পরিবারে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, ভদ্রমহিলা ফোন পেয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরকমটা কি হতে পারে না?”
রোমানা মাথা নেড়ে সায় দিতে বাধ্য হলো। অপারেশন হেডের সৃজনশীলতায় মুগ্ধ সে। এটার সম্ভাবনা আছে, তবে তার কাছে মনে হচ্ছে সেই সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। “স্যার, আমি আরো জানতে পেরেছি, ডিবি অফিসার যখন এসেছিলো তার কিছুক্ষণ পরই ঐ ফ্লাইটটা ছেড়ে যায়। তার মানে, মহিলা নিশ্চয় ঐ অফিসারকে দেখে ভয় পেয়ে কেটে পড়েছে।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো মঞ্জুর কাদের। “বুঝলাম, আপনার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু আপনি-আমি কেউই পুরোপুরি নিশ্চিত নই। নিশ্চিত না হয়ে সন্দেহের উপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের কোনো কাস্টমারকে ঝামেলায় ফেলতে পারি না। বোঝা গেলো আমার কথাটা?”
চুপসে গেলো রোমানা। “জি, স্যার।”
“ওরা একটা ছবি দিয়ে গেছে…” বলতে লাগলো অপারেশন হেড। “…আমাদের ফ্রন্টডেস্ক যদি ঐ ছবির সাথে মিল আছে এমন কাউকে প্যাসেঞ্জার হিসেবে পেতে তাহলে আমরা ওদেরকে জানাতাম। কিন্তু আপনি দেখেছেন একজোড়া চোখ…তার সাথে পর পর দু-বার ফ্লাইট মিস্ করার ঘটনাটা জুড়ে দিয়ে মনে করছেন এই ছবির মহিলাই ঐ প্যাসেঞ্জার হতে পারে। দ্যাটস নট এনাফ টু রিপোর্ট ইট।”
“জি, স্যার,” বিমর্ষ মুখে বললো রোমানা।
“মনে রাখবেন, আমাদের কাছে সবার আগে আমাদের কাস্টমার, ওই সব ল-ইনফোর্সমেন্টের রিকোয়েস্ট না। ওকে?”
মাথা নেড়ে সায় দিলো সেলস এক্সিকিউটিভ। আসল কথাটা এবার তার কাছে পরিস্কার। খালি চোখে দেখলে কপোরেট দুনিয়ার আসল দেবতা হলো টাকা, কিন্তু সেটা আকাশ থেকে টুপ করে পড়ে না, ওগুলো আসে কাস্টমারের পকেট থেকে! সুতরাং এখানে আসল দেবতা তারাই।