কলটা শেষ হতেই কয়েক মুহূর্তের জন্য ঝিম মেরে রইলো ছফা, তারপরই কাজে নেমে পড়লো আবার। সারা দেশের সবগুলো সড়কের ট্রাফিক পুলিশকে জানিয়ে দিলো লাশবাহী কোনো অ্যাম্বুলেন্স যেখানে পাবে সেখানেই যেনো আটক করা হয়। সেই সাথে এ কথাটা বলতেও ভুলে গেলো না-ঐ গাড়িতে কোনো লাশ নেই, আছে দু-জন দুর্ধর্ষ মহিলা খুনি!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে পা বাড়ালো পুলিশের জিপটার দিকে। জাওয়াদের কী অবস্থা কে জানে। হাসপাতাল হয়ে বাসায় যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো, আর মনে মনে একটাই আশা করলো, ঢাকা থেকে বের হবার সময় কোনো চেক-পয়েন্টে যেনো ঐ অ্যাম্বুলেন্সটা ধরা পড়ে।
এ মুহূর্তে এরকম আশা করা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।
.
কলটা শেষ হতেই কয়েক মুহূর্তের জন্য ঝিম মেরে রইলো ছফা, তারপরই কাজে নেমে পড়লো আবার। সারা দেশের সবগুলো সড়কের ট্রাফিক পুলিশকে জানিয়ে দিলো লাশবাহী কোনো অ্যাম্বুলেন্স যেখানে পাবে সেখানেই যেনো আটক করা হয়। সেই সাথে এ কথাটা বলতেও ভুলে গেলো না-ঐ গাড়িতে কোনো লাশ নেই, আছে দু-জন দুর্ধর্ষ মহিলা খুনি!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে পা বাড়ালো পুলিশের জিপটার দিকে। জাওয়াদের কী অবস্থা কে জানে। হাসপাতাল হয়ে বাসায় যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো, আর মনে মনে একটাই আশা করলো, ঢাকা থেকে বের হবার সময় কোনো চেক-পয়েন্টে যেনো ঐ অ্যাম্বুলেন্সটা ধরা পড়ে।
এ মুহূর্তে এরকম আশা করা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।
.
উপসংহার
চারপাশে সবুজ আর সবুজ। একটু দূরে দূরেই আছে ছোটোখাটো কিছু জলাশয়। এরকম অসংখ্য জলাশয়ে পরিপূর্ণ ফুলতলা নামে পরিচিত এই উপজেলাটি। এর উত্তর-পূর্ব দিকে বয়ে গেছে ভৈরব নামের একটি নদী।
কলকাতা ছাড়ার পর এটাই হয়ে উঠেছে মুশকানের ঠিকানা। জায়গাটার প্রতি তার মমত্ববোধ তৈরি হয়ে গেছে। এখানে আবারো ফিরে আসতে পেরে খুব খুশি সে। বুক ভরে নিশ্বাস নিলো তাজা বাতাসে।
গতকাল এখান থেকে ঢাকায় চলে যাবার পর, এক পর্যায়ে তার আশঙ্কা হচ্ছিলো, সুস্মিতাকে সম্ভবত মুক্ত করা সম্ভব হবে না। সেজন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুতও হয়ে গেছিলো সে, কিন্তু যেমনটা বলা হয়-সাহসীদের পক্ষেই থাকে ভাগ্য-সেটাই আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। ডাক্তারের দেয়া মূল্যবান তথ্যটি একেবারে সময়মতো পেয়ে যায় সে। একটু দেরি হলেই সুস্মিতার যে কী হতো কে জানে!
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে ধরতে ব্যর্থ হলো ডিবি অফিসার নুরে ছফা। নিশ্চয় রাগেক্ষোভে ফুঁসছে এখন। তবে একটা বিষয়ে তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে-ডিপি মল্লিক আর সুকুমার রঞ্জনের নিখোঁজের কথা জেনে গেছে সে। এমন কি, কলকাতায় আসকারের শ্বশুড়বাড়ির খোঁজও পেয়ে গেছে। আর গত রাতে যেভাবে তাদের সাময়িক আশ্রয়টিও প্রায় চিহ্নিত করে ফেলছিলো, সেটা ছিলো অবিশ্বাস্য। তার ধারণা, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটাও চিহ্নিত করতে পারবে ছফা। যদিও ঐ গাড়ির ড্রাইভার বড়জোর তাকে জানাতে পারবে, পুরনো ঢাকার জনসন রোডে তাদের দু জনকে নামিয়ে দিয়েছে সে। ছফা হয়তো এটা জানতে পেরে সাময়িক বিভ্রান্তির মধ্যেও পড়ে যাবে, তাদের আসল গন্তব্য কোথায় ছিলো সেটা বের করতে পারবে না সহজে।
জনসন রোডে তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলো ডাক্তারের আরেক বিশ্বস্ত কর্মচারী, সেখান থেকে তাদেরকে সদরঘাটের রকেট স্টিমারে তুলে দেয়া হয়। স্টিমার ছাড়ার কথা রাত পৌনে তিনটায়, তারা ওখানে পৌঁছায় তারও কয়েক মিনিট পর। কিন্তু রকেট স্টিমারের ঘাঁটে যখন ওরা পৌঁছালো তখনও বৃটিশ আমলের সেই চমৎকার স্টিমারটি নিজের নামের প্রতি চরম অবিচার করে নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিলো।
রাত সাড়ে তিনটার পর খুলনাগামী রকেট স্টিমারটি যাত্রা শুরু করলে হাফ ছেড়ে বাঁচে মুশকান। ছফা যে নদীপথটাকে হিসেবের মধ্যে রাখবে না, এ ব্যাপারে সে প্রায় নিশ্চিত ছিলো। আর সড়কের মতো নদীপথে চেক পয়েন্ট বলে কিছু থাকে না।
কেবিনে বসেই রুম সার্ভিসে অর্ডার দিয়ে কিছু খাবার আনিয়ে খেয়ে নেয় তারা। তারপর ক্লান্তিতে দুচোখে ঘুম নেমে আসে দু-জনেরই। ডাক্তারকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে, নিরাপদ চ্যানেলে জানানোর কথা, তারা ঠিকমতো পৌঁছে গেছে। ফোন করে তাকে জানাতে গেলে বিপদের সম্ভাবনা আছে। ডাক্তারের হাসপাতালের সমস্ত ফোন সম্ভবত টেপ করা হচ্ছে।
ভোরের দিকে ঘুম দিয়ে মুশকান আর সুস্মিতা জেগে ওঠে সকাল দশটার দিকে। এর কিছুক্ষণ পরই স্টিমারটা খুলনায় পৌঁছে যায়।
খুলনা শহর থেকে একটা ইজিবাইকে করে প্রায় উনিশ কিলোমিটার পাড়ি দেবার পর তারা পৌঁছায় ফুলতলা উপজেলায়। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা পাড়ি দিয়ে আসতে হয় দক্ষিণডিহি নামের এই প্রসিদ্ধ গ্রামটিতে। চারপাশে খুব বেশি মানুষের আবাস নেই, তবে জায়গাটা একদম নিরিবিলিও থাকে না, প্রতিদিনই কিছু উৎসাহি পর্যটকের দেখা মেলে।
“ওয়াও!” সুস্মিতাও দারুণ উচ্ছ্বসিত এমন একটি জায়গায় আসতে পেরে। আমরা এখানে থাকবো?”
“না। এখানে কেউ থাকে না,” মুশকান বললো। “আমরা থাকবো এই কমপ্লেক্সের বাইরে…ওই যে, ওখানে…” হলুদ রঙের পাকা দালানটির পশ্চিম দিকে ইঙ্গিত করলো সে। কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীরের বাইরে কিছু ঘরবাড়ি আছে। “এই কমপ্লেক্সের ভেতর দিয়ে গেলে শর্টকাটে যাওয়া যায়, তাই এখানে এসেছি।”