স্থিরচোখে চেয়ে রইলো মুশকান। “তুমি ভালো করেই জানো আমি কী বলতে চাচ্ছি।”
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলো আসকারের মেয়ে। তারপর যেনো হার মানলো এমন অভিব্যক্তি ফুটে উঠলো তার চোখেমুখে। “ওকে অপচয় করাটা কি ঠিক হতো?!”
মুশকানের কপালে ভাঁজ পড়লো।
“কতো কষ্ট করে ওটা কালেক্ট করেছি, জানো? গাড়ির কাঁচ ভেঙে–“
“চুপ করো!” দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো মুশকান। তারপরই কিছু একটা মনে পড়ে গেলো তার। কিন্তু তুমি কী করে এটা জানলে!?”
রহস্যময় হাসি দিলো সুস্মিতা, কিন্তু কিছুই বললো না। যেভাবে প্রথম বার ভেন্ট্রিলেটর দিয়ে তার বাপাই আর মুশকানকে ডিনার করতে দেখেছিলো, ওদের কথা শুনে ফেলেছিলো, ঠিক একইভাবে সুকুমারের ডেডবডি থেকে সিক্রেট অগ্যানটা নেবার দৃশ্যও দেখেছিলো সে।
প্রশ্নের জবাব না পেয়ে গভীর করে নিশ্বাস নিয়ে আবারো জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো মুশকান। যেভাবেই হোক, মেয়েটা জেনে গেছে সিক্রেট অগানটার কথা। আর এটার পরিণাম কী হতে পারে ভেবে পেলো না সে।
“যাহ্!” এমন সময় সুস্মিতা অনেকটা আঁৎকে উঠে বললো।
চমকে তাকালো মুশকান। “কি হয়েছে?”
“তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে ওটা তো ফেলে এসেছি ওই বাড়িতে!” আফসোসের সুরে বললো।
সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো মুশকান তারপর আক্ষেপে মাথা দোলালো। তাকে মোটেও চিন্তিত দেখালো না।
“এখন কী হবে?” চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটিয়ে তুললো আসকারের মেয়ে। “তুমি ভাবতেও পারবে না, কতো কষ্ট করে ওটা কালেক্ট করেছিলাম!”
“আমি ওটার গন্ধ পাচ্ছি!” কথাটা বলে অ্যাম্বুলেন্সের ছোট্ট উইন্ডো দিয়ে আবারো বাইরে তাকালো সে। “ওটা তোমার পার্সেই আছে।”
বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো সুস্মিতা। তারপর জিভে কামড় দিয়ে বললো, “সরি!”
তার দিকে ফিরেও তাকালো না মুশকান।
.
অধ্যায় ১০১
নুরে ছফার ইচ্ছে করছে সাদারঙের প্রাইভেটকারটা যে চালাচ্ছে তার বুক গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিতে। রাগে তার শরীর কাঁপছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেলো সে।
প্যাসেঞ্জার সিটে কেউ নেই!
তাকে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। গাড়িটা যে চালাচ্ছে সে বার বার বলছে, রাত-বিরাতে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েছে ভেবে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলো। এছাড়া তার আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না।
লোকটার কথা বিশ্বাস করার কোন কারণই নেই। তাকে জেরা করা হবে, গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাবার আদেশ দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের জিপে করে সে রওনা দেয় ঐ বাড়ির উদ্দেশে, যেখান থেকে এই গাড়িটা
বের হয়েছে। যদিও জানতো, ওখানে গিয়ে কিছুই পাবে না। এতোক্ষণে। তাদের সবাইকে বোকা বানিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে মুশকান জুবেরি।
আবারও!
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ছফার ভেতর থেকে। কিছুক্ষণ পরই চলে এলো পার্ক রোডের ঐ বাড়িটার সামনে। জিপ থেকে নেমে বাড়িটার দিকে চেয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। দারোয়ান আর কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, কিন্তু হুট করেই তার মাথায় অন্য একটা চিন্তা চলে এলো। জেরাটেরা বাদ দিয়ে নজর দিলো আশেপাশের বাড়িগুলোর দিকে। এখানকার প্রায় সবগুলো বাড়ির মেইনগেটেই সিসিক্যাম দেখতে পেলো সে। মুশকান যে বাড়িতে অবস্থান করছিলো তার পাশের বাড়িতে নক করলো সঙ্গে করে পুলিশ নিয়ে। বাড়ির দারোয়ান সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলো, ঢুলু ঢুলু চোখে অবাক হয়ে তাকালো তাদের দিকে।
“এইখানে ইউএনসিএইচআরের–”
হাত তুলে দারোয়ানের ফাঁপড়বাজি থামিয়ে দিলো ছফা। তাকে বললো, মেইনগেটের সিসিক্যামটা দেখতে চায়, আর কিছু না। বিরক্ত হলেও দারোয়ান তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দিলো।
পনেরো মিনিট পর ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো ছফা।
একটা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স!
এই বাড়ির মেইনগেটের সিসিক্যাম ফুটেজে দেখেছে, তারা সাদা রঙের প্রাইভেটকারটার পেছনে ছুটে যেতেই মুশকান আর সুস্মিতা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরই অরিয়েন্ট হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স চলে যায় সেদিকে। যদিও তাদেরকে সেই অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে দেখেনি, তারপরও ছফার বুঝতে বাকি রইলো না।
দাঁতে দাঁত পিষে আকাশের দিকে তাকালো। ভোরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্ষয়িষ্ণু রাত। ঢাকা থেকে বের হবার সবগুলো পয়েন্টে গাড়িটার নাম্বার জানিয়ে দেয়া উচিত। মোবাইলফোনটা বের করে কল করতে যাবে এমন সময় রিংটোন বেজে উঠলো। ল্যান্ডফোন থেকে পিএস আশেক মাহমুদ কল দিয়েছেন।
“স্যার?”
“আসলামকে ঐ মেয়েটা…” বিমর্ষ কণ্ঠে বললো আশেক মাহমুদ, তার গলা ধরা এলো। “…মেরে ফেলেছে!”
“কি?!” যারপরনাই বিস্মিত হলো ছফা। যে লোকের সাথে সে অস্ত্র হাতে পেরে ওঠেনি, তাকে কিনা হালকা-পলকা এক মেয়ে খালি হাতে মেরে ফেললো!
পিএস আরো জানালো, পুলিশ গুলশান অ্যাভিনিউর নির্জন রাস্তায় আগুনে ভস্মীভূত একটি গাড়ির কথা জানতে পায়, ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে সেখানে দ্রুত ছুটে যায় তারা। নাম্বারপ্লেট সার্চ দিয়ে তারা জানতে পারে, ওটা পিএস আশেক মাহমুদের গাড়ি। ড্রাইভিং সিটে একজনের ভস্মীভূত দেহও খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।
গাড়িটা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে! ছফার বিস্ময় যেনো কাটেই না।
পিএস আরো জানালো, তার অসুস্থ বোন প্রলাপ বকছে মুশকান জুবেরি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে চলে যাবার পর থেকেই। বোনের শরীর ভীষণ খারাপ। ডাক্তারকে খবর দেয়া হয়েছে। ছফাকে সাবধানে থাকার কথা বলে ফোন রাখে আশেক মাহমুদ।