“একটু আসছি,” ইচ্ছে করেই কফির কথা বললো না, বললে এই ছেলে সঙ্গে সঙ্গে বলে দেবে তার জন্যেও এক কাপ নিয়ে আসার জন্য তার মানে পুরো একশ’ টাকা গচ্চা। কী দরকার, এই ছেলে তো এখানে জয়েন করার পর থেকে খেয়েই যাচ্ছে, কখনও কি তার জন্য এক কাপ নিয়ে এসেছে?
রোমানা কিউবিকল থেকে বের হয়ে প্রথমেই কফি-বুথের দিকে গেলো, সে গেলো ওয়াশরুমের দিকে। সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই থমকে দাঁড়ালো। তাকে হাত নেড়ে ইশারা করছে তাদের এয়ারলাইন্সের কাস্টমার সার্ভিসের সুরভি নামের এক মেয়ে। তিনমাস হলো এখানে জয়েন করেছে, ফ্রন্টডেস্কে ডিউটি তার।
ফ্রন্টডেস্কের কাছে যেতেই সুরভি নিচুকণ্ঠে বললো, “আপা, একটু হেল্প করবেন?
রোমানা হাসিমুখে বললো, “কী ব্যাপার, বলো।”
“আপনি কি একটু ডেস্কে বসবেন? আমাকে ওয়াশরুমে যেতে হবে। কিন্তু ডেস্কে কেউ নেই এখন।”
“বাকিরা কোথায় গেছে?” অবাক হলো রোমানা। ডেস্কে সাধারণত তিনজন থাকে। এখানেও দু-জন ছেলে একজন মেয়ে।
“ওরা সিগারেট খেতে গেছে।”
“ওহ্।” ছেলেগুলো সুযোগ পেলেই যে এ কাজ করে। এয়ারপোর্টে সিগারেট খাওয়ার জন্য আলাদা জোন আছে, আর সেটা তাদের ডেস্ক থেকে। বেশ দূরে। সুতরাং, ছুটির আগে একটু ফাঁকা হয়ে এলে ধুমপায়ি এপ্লয়িরা হন্যে হয়ে ওঠে সিগারেট খাওয়ার জন্য। রোমানা কিছু না বলে ডেস্কের পেছনে চলে এলো। “তুমি যাও।”
“থ্যাঙ্ক ইউ, আপা,” চপল কিশোরীর মতো দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে ছুটে গেলো সুরভি।
ডেস্কে বসে এদিক ওদিক তাকালো রোমানা। আজকের জন্য তাদের। এয়ারওয়েজের সব ধরণের ফ্লাইট শেষ হয়ে গেছে। এখন পাততারি গোটানোর পালা। সবগুলো বেসরকারী এয়ারলাইন্সই একটু পর বন্ধ করে দেবে নিজেদের কাউন্টার আর ফ্রন্ট ডেস্ক।
আনমনে ডেস্কের দিকে চোখ যেতেই রোমানা কিছু একটা দেখতে পেয়ে কৌতূহলি হয়ে উঠলো।
একটা ফটোগ্রাফ।
ছবিটা হাতে নিতেই ভুরু কুঁচকে গেলো তার। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। এই ছবি এখানে কেন? এরকম ছবি সাধারণত পুলিশ আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দিয়ে যায়। কেন দিয়ে যায় এটা এখানে যারা কাজ করে তারা সবাই জানে।
ক্রিমিনাল! বিরোধী দলের পলিটিশিয়ান? নাকি জঙ্গি?
আপন মনেই কাঁধ তুললো সে। তার অবশ্য সেরকমই কিছু মনে হচ্ছে।
“এই ছবি এখানে কেন? কিসের জন্য?” সুরভি ওয়াশরুম থেকে ফিরে এলে কৌতূহলি হয়ে জানতে চাইলে রোমানা।
ছবিটা দেখে ভুরু কপালে তুললো সুরভি। “ওহ্…এটা…আর বলবেন না, ডিবির এক অফিসার এসে দিয়ে গেছে আজকে।”
“মহিলা জঙ্গি নাকি?”
কাঁধ তুললো মেয়েটা। “আমাদেরকে তো কিছুই বলেনি। তবে মনে হচ্ছে, কোনো ক্রিমিনাল।”
“ক্রিমিনাল!” অবাক হলো রোমানা। “কি করেছে?”
“কী আর হবে, হয়তো খুনটুন করেছে। টেররিস্ট কানেকশানও থাকতে পারে। আজকাল তো বেশির ভাগ কেস এমনই হচ্ছে।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো রোমানা। জঙ্গি-সন্ত্রাসী নিয়েই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজকাল এয়ারপোর্টে বেশি আসে, এরকম ছবি দিয়ে যায় বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোতে।
“আবার পলিটিশিয়ানও হতে পারে,” বললো সুরভি।
রোমানা অবশ্য সেরকম কিছু মনে করছে না। যদিও আজকাল এরকমটি প্রায়ই হচ্ছে-অমুক পলিটিশিয়ান যেনো এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন ক্রশ করতে না পারে, তমুক এলে যেনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়-এরকম আদেশ-নির্দেশ হরদম দেয়া হচ্ছে।
নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো সে। “আজকে দুপুরে এক লেডি প্যাসেঞ্জার অদ্ভুত আচরণ করেছিলো, বুঝলে?”
“কি রকম?” সুরভি আগ্রহ দেখালো।
“মহিলা সকাল দশটার ফ্লাইট মিস্ করে জ্যামের কারণে, পরে ফিফটি পার্সেন্ট ফাইন দিয়ে টিকেটটা রিশিডিউল করিয়ে নেয় পরের ফ্লাইটের জন্যে, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কী জানো?” সুরভির কাছ থেকে কোনো জবাবের অপেক্ষা না করেই বললো, “মহিলা ঐ ফ্লাইটটাও মিস্ করে। অথচ আমি তাকে ফ্লাইটের কিছুক্ষণ আগেও দেখেছি লাউঞ্জে বসে থাকতে।”
“বলেন কি!” অবাক হলো সুরভি। “আপনি শিওর, মহিলা ফ্লাইট মিস্ করেছে?”
মাথা নেড়ে সায় দিলো রোমানা। “ফ্লাইট ছাড়ার পনেরো-বিশ মিনিট আগে আমাকে ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে জানানো হয়েছিলো আমি যেনো ফোন করে ক্লায়েন্টকে ইনফর্ম করি। আমি তাকে ফোন করার পর পেয়েও যাই…কিন্তু মহিলা যখনই শুনতে পেলো আমি এয়ারলাইন্স থেকে কল করেছি তখনই লাইনটা কেটে দিলো।”
সুরভি অবাক হলো কথাটা শুনে। “এটা কেন করলো ভদ্রমহিলা…আজব তো!”
ঠোঁট ওল্টালো রোমানা। “আসলেই আজব। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে কি জানো, এই ছবির মহিলাই ছিলো ওই প্যাসেঞ্জার।”
সুরভির চোখদুটো গোল গোল হয়ে গেলো।
“সম্ভবত লাউঞ্জে ওয়েট করার সময় ডিবি অফিসারকে দেখে সটকে পড়েছে।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো সুরভি। “তা হতে পারে।”
“আমি নিশ্চিত, এটাই হয়েছে, রোমানা জোর দিয়ে বললো।
“তাহলে কি আপনি বসূকে জানিয়ে দেবেন এটা?”
“হুম। জানানো তো দরকার, তাই না?”
.
অধ্যায় ৮
তিন দিন ধরে সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নিজের মোবাইলফোনটা পাচ্ছে না খোদাদাদ শাহবাজ খান। ঠিকভাবে মনেও করতে পারছে না, শেষবার ফোনটা কবে কখন ব্যবহার করেছিলো। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত, আগের বারের মতো প্রশিক্ষিত কোনো পিগমি বানর ঘরে ঢুকে চুরি করে নিয়ে যায়নি।