গুলশানসহ এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে অসংখ্য বিদেশি দূতাবাস আর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অফিসসহ বিদেশি নাগরিকদের বসবাস রয়েছে, সেখানকার রাস্তার সিসিক্যামগুলো অবশ্যই সচল থাকবে-যেমনটি শহরের অন্য অংশে থাকে না। ডিএমপি’র ক্যামেরায় গাড়ির ফুটেজ পেলেও বৃষ্টির কারণে প্লেট-নাম্বারটা স্পষ্ট বোঝা যায়নি। তবে ছফা তাদেরকে বলে দিয়েছে, সময়ের হিসেব করে গাড়িটাকে ট্র্যাক করে যেতে। জাওয়াদের কানে ইয়ারফোন লাগানো আছে, ডিএমপি’র কন্ট্রোল রুমের সাথে কানেক্টেড আছে সে। কিছুক্ষণ পর পর সেখান থেকে আপডেট দেয়া হচ্ছে তাকে। তাদের থেকে তথ্য পেয়েই ছফারা চলে এসেছে গুলশান দুই নম্বর থেকে বারিধারার লেকের পাশ দিয়ে যাওয়া ইউনাইটেড ন্যাশন রোড হিসেবে পরিচিত জায়গাটিতে। সেখান থেকে বারিধারার এগারো নাম্বার রোডে।
কিন্তু ছফার একটাই আশঙ্কা মনে, যেকোনো মুহূর্তে ডিএমপি থেকে জানানো হবে, গাড়িটার কোনো খোঁজ পাচ্ছে না, কারণ অমুক রাস্তার পর তাদের সিসিক্যামগুলো বিকল হয়ে আছে। কিংবা সেখানে আদৌ কোনো সিসিক্যাম নেই!
“স্যার, আরো সামনে গেছে,” জাওয়াদ বললো।
তাদের বাইকটা এগারো নাম্বার রোডের পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলো। চার রাস্তার মোড়ের কাছে এসে বাইকটা থামালো সে। আরেকটু সামনে এগোলে প্রগতি সরণী, আর ডান থেকে বাঁয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সেটার নাম পার্ক রোড।
“ওকে,” ইয়ারফোনে কিছু শুনে বললো জাওয়াদ। “ডানে গেছে।” বলেই বাইকটা নিয়ে ডান দিকে ছুটে গেলো। কিছুটা পথ গিয়েই থামলো সে। “স্যার, অবশেষে গাড়িটার প্লেটনাম্বার স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, উত্তেজিত হয়ে বললো সহকারী। ইয়ারফোনে শুনে আবার বললো, “ঢাকা-ট ১১-২৫৭৭।”।
বাইক থেকে নেমে পড়লো ছফা। “ওদেরকে বলে দাও এই নাম্বারটা যেনো এক্ষুণি পুলিশ আর ট্রাফিকের সবগুলো পেট্রল টিমের কাছে সাকুলেট করে দেয়। ট্রাফিক কন্ট্রোলরুমেও জানিয়ে দিতে বলো!” ছফাও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে খবরটা শোনার পর। “গাড়িটা যেখানেই পাবে সেখানেই যেনো আটকে দেয়। ভয়ঙ্কর এক খুনি খুন করে এই গাড়িতে করে পালাচ্ছে।”
জাওয়াদ সেটাই করলো।
নির্জন রাস্তায় পায়চারী করছে ছফা। সিনিয়রের উত্তেজনা টের পেয়ে বাইকটা স্ট্যান্ড করে চলে এলো জাওয়াদ।
“স্যার, সিগারেট খাবেন?” সে ভালো করেই জানে, টেনশনের মুহূর্তে সিগারেট না খেলে তার বসের অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়।
“হুম,” সংক্ষেপেই বললো নুরে ছফা। একটা সিগারেটের বড্ড দরকার এখন। তার প্যাকেটটা অনেক আগেই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
পকেট থেকে প্যাকেট বের করে ছফার দিকে একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিলো। সিগারেটটা ঠোঁটে চেপে ধরতেই জাওয়াদ তার লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো তাতে। পর পর বেশ কয়েকটি লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো ছফা।
“ডিএমপি এতো দেরিতে আপডেট দিচ্ছে কেন?”
জাওয়াদ এর জবাব না দিয়ে ইয়ারফোনে বললো, “এনি আপডেট?” তার মুখটা কালো হয়ে গেলো। “পুরো রাস্তার সবগুলোই অচল?”
চমকে উঠলো ছফা।
“আচ্ছা, আরো সামনে দেখুন…হুম,” কথাটা বলেই সিনিয়রের দিকে তাকালো।
“কি হয়েছে?”
“এই পার্ক রোডের বাকি সিসিক্যামগুলো নাকি বিকল।”
হতাশ হয়ে পড়লো ছফা। একটু আগেই এরকম আশঙ্কা করেছিলো সে। সিগারেটে জোরে জোরে কয়েকটা টান দিলো।
এমন সময় জাওয়াদ আবার ইয়ারফোনে মনোযোগ দিলো। “হুম…বলেন…” মাথা দোলালো। “পার্কের মোড়েরটা?…তাই নাকি!”
ছফার ভুরু কুঁচকে গেলো।
মাথা নেড়ে সায় দিলো সহকারী, সিনিয়রের দিকে তাকালো সে। “স্যার, সামনে পার্কের যে মোড়টা আছে, তার ডানদিকে আট নাম্বার রোডটা চলে গেছে, ওখানকার সিসিক্যামে গাড়িটার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি!”
.
অধ্যায় ৯৯
ডিএমপির সিসিক্যামে গাড়িটার যে কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি তাতে ছফার হতাশ হবার কথা কিন্তু তার বদলে সে আশার আলো দেখতে পেলো।
জাওয়াদকে নিয়ে আরো সামনে এগিয়ে গেলো সে। যেতে যেতেই দেখলো পার্কের বাঁ দিকের প্রায় সব বাড়ির মেইনগেটেই সিসিক্যাম আছে।
“এখানে বাইকটা থামাও,” পেছন থেকে বললো ছফা, নেমে পড়লো সে। পার্কের বিপরীতে যতোগুলো বাড়ি আছে গুণে দেখলো। “দশ বারোটা।”
রাস্তাটা পূর্ব-পশ্চিমমুখি। ডিএমপির ফুটেজে দেখা গেছে, এই রাস্তায় গাড়িটা ঢুকেছে। কিন্তু পুরো রাস্তায় যেহেতু ডিএমপির কোনো ক্যামেরা কাজ করছে না তাই ছফা একেবারে পুবদিকের বাড়িটার সিসিক্যাম চেক করে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো।
ওই বাড়ির সিসিক্যামে গাড়িটার কোনো ফুটেজ না পেয়ে খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার মুখ। মানেটা তার কাছে পরিস্কার-এই দশ বারোটা বাড়ির যেকোনো একটাতে ঢুকে পড়েছে ঐ গাড়িটা!
“লোকাল থানায় ফোন করে একটা ব্যাকআপ টিম পাঠাতে বলল, দ্রুত!” জাওয়াদকে তাড়া দিলো সে।
ছেলেটা তাই করলো, তবে সরাসরি লোকাল থানায় ফোন করলো না সে। ডিমএমপি’কে জানিয়ে দিলো অনুরোধটি। পিএস আশেক মাহমুদের ডিএমপিকে আগেই বলে দিয়েছিলো, তাদেরকে সব ধরণের সহযোগীতা করার জন্য।
“কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে, স্যার।” জাওয়াদ বললো।
মাথা নেড়ে সায় দিলো ছফা। এ জায়গাটা তাকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে-রাস্তার ডান পাশে পার্ক, বাঁ-দিকে এক সারি আবাসিক ভবন। সংখ্যায় দশ বারোটা হবে। রাস্তার দু-পাশে বাড়ি থাকলে এই সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যেতো।