হঠাৎ চমকে উঠলো সে। তার ফোনটা বাজছে!
পিএস?!
না। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে শুধরে দিলো। প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়ে ভুলেই গেছিলো, এই ফোনটা এখন সুস্মিতার কাছে আছে।
নাকি বেহাত হয়ে গেছে মেয়েটার কাছ থেকে? পিএসের ঐ লোক না তো?
একটা আশঙ্কা জেঁকে বসলেও কলটা রিসিভ করার আগে মনে মনে কেবল একটা প্রার্থনাই করলো সে : ফোনের ওপাশে যেনো সুস্মিতার কণ্ঠটাই শুনতে পায়!
.
অধ্যায় ৯৫
কিছুক্ষণ আগে, পিএসের গানম্যান যখন সুস্মিতাকে মুক্তি না দেবার কথা
জানালো তখন সে ভড়কে গেলেও তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলো, তার এমন কর্মকাণ্ডের ফলাফল কী হতে পারে। আসলাম সেটা এক ফুঙ্কারে উড়িয়ে দিয়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, মৃত্যুপথযাত্রি একজনের জীবন নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
তারপরও সাহস করে পিএসের ষাটাকে বলেছিলো সুস্মিতা : “ভালোয় ভালো যেমনটা বলেছি, আমাকে বনানীর পাঁচ নাম্বার রোডে নামিয়ে দে…তুই কোন্ মতলবে যে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস সেটা কিন্তু বুঝে গেছি!”
রিয়ার মিররে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিলো আসলাম। “কী বুঝে গেছিস?”
বাঁকা হাসি দিয়েছিলো সুস্মিতা। “আমাকে একা পেলে কী করতে চাস, ভেবেছিস আমি জানি না?”
কপট প্রশংসার অভিব্যক্তিতে ভুরু কপালে তোলে গানম্যান। “তাই নাকি!”
“কিন্তু তোর সেই আশা পূরণ হবে না মনে হচ্ছে! মুশকান কিন্তু এখনও ফোনে কানেক্টেড আছে…সব শুনতে পাচ্ছে!” কথাটা বলেই পাশে রাখা ফোনটার দিকে ইঙ্গিত করে সে।
এ কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় আসলাম। “তোর মুশকানকে বল, আমি তোকে ছাড়ছি না! আমার সাথে তাকে একটা লেনদেন করতে হবে।”
সুস্মিতা অবিশ্বাসে তাকায় গানম্যানের দিকে। তারপর হঠাৎ করেই স্মিত হাসি ফুটে ওঠে তার ঠোঁটে। “তাহলে কথাটা তুই নিজেই ওকে বল্!”
এ কথা শুনে সঙ্গত কারণেই সুস্মিতার পাশে রাখা ফোনটার দিকে তাকায় আসলাম।
মুচকি হেসে মাথা দোলায় মেয়েটি। তারপর আচমকা গাড়ির সামনের দিকে তাকিয়ে বলে, “ফোনে না, মুশকান তোর সাথে সশরীরে কথা বলার জন্য চলে এসেছে!…ঐ দেখ!”
কথাটা শুনে চমকে উঠে মেয়েটার দৃষ্টি অনুসরণ করে গাড়ির সামনের দিকে তাকায় আসলাম, সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারে নিজের ভুলটা।
রাস্তায় কেউ নেই!
ততোক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে! টের পায় তার গলায় কিছু একটা চেপে বসেছে! মুহূর্তে প্রবল জোরে হ্যাঁচকা টান খেয়ে পিছিয়ে যায় তার মাথাটা। হাত দিয়ে গলায় চেপে ধরা নাইলনের চিকন দড়িটা ধরার চেষ্টা করে সে, কিন্তু ততোক্ষণে দড়িটা দেবে গেছে তার গলায়! রিয়ার মিররে তাকিয়ে সুস্মিতাকে দেখতে পায় সে। মেয়েটা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে দু হাতে দড়ির দুই প্রান্ত ধরে টেনে যাচ্ছে, আর এ কাজে তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছে তার পা দুটো!
আসলামের সিটের পেছনে পা দুটো ঠেকিয়ে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ধনুকের মতো বাঁকা শরীরটাকে সোজা করার চেষ্টা করতে থাকে সুস্মিতা। তার শরীর যতো সোজা হচ্ছিলো আসলামের গলার ফাঁস ততোই চেপে বসতে শুরু করেছিলো। দু-হাতে গলা থেকে দড়িটা ধরে টানার চেষ্টা করে যায় সে, কিন্তু সুস্মিতা আরো জোরে হ্যাঁচকা টান দিতেই সেটা বেশি করে দেবে যায় তার গলায়। ড্রাইভিং সিটের হেডরেস্টটার কারণে বেকায়দায় পড়ে যায় আসলামের মাথাটা। আতঙ্কের সাথেই সে টের পায়, তার গলার চামড়া কেটে নাইলনের দড়িটা দেবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাস। মেয়েটা দু-হাত আগেপিছে করে প্রবল শক্তি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলার চেষ্টা করতে শুরু করছে!
“তোকে আমি অপচয় করবো না…গাণ্ডু?” দাঁতমুখ খিচে বলে সুস্মিতা। “পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করবো!”
কথাগুলো খুব বেশি ভীতিকর শোনায় আসলামের কাছে। মেয়েটা কী বলতে চাইছে-বুঝতে পারে না সে। কিন্তু এর পরের কথাটা শুনে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যায়।
“খাওয়ার জন্য তুই একদম উপযুক্ত!”
কথাটা শুনে গানম্যানের দুচোখ যেনো বিস্ফারিত হবার উপক্রম হয়। তীব্র গোঙানি দেয় সে।
একটা পা সিটের পেছন থেকে একটু তুলে হেডরেস্টের পেছনে ঠেকায় সুস্মিতা, তারপর দড়িতে আরো জোরে টান দেয়। বাঁকা হয়ে থাকা শরীরটা পুরোপুরি সোজা করে ফেলে। অস্কুট কিন্তু জান্তব গোঙানি বের হয়ে আসে মেয়েটার ভেতর থেকে। সেই গোঙানির সঙ্গি হয় মাহবুব আসলামের ভোঁতা আর্তনাদটি।
অন্তিম সময়ে তার মনে পড়ে যায় তার কোমরে গোঁজা আছে নাইন মিলিমিটারের একটি পিস্তল! কিন্তু ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, সে-ও তার গলায় ফাঁস হয়ে থাকা দড়িটা দু-হাতে টেনে ধরতে মরিয়া তখন। ভালো করেই জানতো, একটা হাত ছেড়ে দিলেই দড়িটা আরো জোরে চেপে বসবে তার গলায়। তারপরও বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে দড়িটা ছেড়ে বাম হাত দিয়ে কোমর হারাতে শুরু করে উদভ্রান্তের মতো। সঙ্গে সঙ্গে টের পায়, সুস্মিতা আবারো তার দু-হাত আগেপিছে করে গলা কাটতে শুরু করে দিয়েছে! এবার আরো জোরে জোরে!
রিয়ার মিররে তাকায় আসলাম, দেখতে পায় তার গলা কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে!
কোমরের পিস্তলটার নাগাল পেতেই দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে। বাতাস না পেয়ে তার ফুসফুস ফেঁটে যেতে চাইছিলো যেনো। কাঁপতে থাকা হাতে তবুও পিস্তলটা কোমর থেকে নিতে পারে সে, কিন্তু দড়িতে আরেকটা হ্যাঁচকা টান পড়তেই হাত থেকে ছুটে যায় অস্ত্রটা! সিটের উপর হারানোর চেষ্টা করলেও নাগাল পায় না আর। অস্ত্রটার আশা বাদ দিয়ে আবারো দড়িটা ধরে ফেলে দু-হাতে। আতঙ্কের সাথেই রিয়ার মিররে দেখতে পায়, রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার গলা আর বুক। শ্বাসনালী কেটে ভোস ভোস শব্দ হচ্ছে।