পিএসের গাড়িটা যেদিকে মুখ করা সে দিকটায় আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলো। “ওই দিকে, স্যার।”
“গাড়িতে করে নাকি পায়ে হেঁটে?”
“হাইট্যাই তো গেলো দেখলাম।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো ছফা। “আশেক মাহমুদের অ্যাপার্টমেন্টে কল দাও।”
অবাক হয়ে ইন্টারকমটা তুলে নিলো দারোয়ান। সে বুঝতে পারছে না, ক্ষমতাধর পিএস তার গাড়ি নিয়ে সরাসরি এই ভবনে না ঢুকে নিজের ফ্ল্যাটে কল দিচ্ছে কেন। যাই হোক, কয়েক বার রিং হবার পর ওপাশ থেকে কেউ ধরলো ইন্টারকমটা। “নেন, কথা বলনে, স্যার…” ছফার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
“হ্যালো, আমি ডিবি থেকে বলছি…আপনি কে বলছেন?” জিজ্ঞেস করলো সে।
“আমি জেবুন্নেসা…হাউজনার্স।” মেয়েটা একদমই ভড়কে গেছে।
“একটু আগে একজন মহিলা এসেছিলো?”
“জি, স্যার।”
“তাকে অ্যাপার্টমেন্টে কে ঢুকতে দিয়েছে?”
“ইয়ে মানে,” আমতা আমতা করলো মেয়েটি। “আমিই, স্যার।”
“আপনি তাকে কেন ঢুকতে দিলেন?”
“উনি হসপিস সার্ভিস ইন্সপেকশন করতে এসেছিলেন।”
কথাটার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না ছফা। “কী সার্ভিস, বললেন?”
মেয়েটা তাকে সংক্ষেপে জানালো বিষয়টা। সব শুনে থ বনে গেলো সে। মুশকান জুবেরির কৌশলটা এরকম অভিনব হবে ধারণাও করতে পারেনি। কিন্তু এতো দ্রুত কিভাবে এটা করলে বুঝতে পারছে না।
“আশেকসাহেবের বোনের কী অবস্থা এখন?”
“ঐ ম্যাডাম চলে যাওয়ার পর থেকেই পেশেন্ট পাগলের মতো আবোল তাবোল বকছেন, স্যার। বার বার মুশকান নামের একজনের কথা বলছেন…কিছুই বুঝতে পারছি না।”
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি, মনে মনে বলে উঠলো ছফা। “ঠিক আছে।” বলেই ইন্টারকমটা রেখে দিলো। পিএসের অ্যাপার্টমেন্টটা এখন নিরাপদ-মুশকান সেখানে নেই।
উপুড় হয়ে প্যাসেঞ্জার সিটের কাঁচ নামানো দরজা দিয়ে উঁকি মেরে পিএসকে বললো, “স্যার, মুশকান জুবেরি একটু আগে চলে গেছে। আপনার বোনের কিছু হয়নি। আজকে রাতে আপনি আপনার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আর বের হবেন না, কাউকে ঢুকতেও দেবেন না। আমি আপনার সাথে যোগাযোগ রাখবো,” পকেট থেকে নিজের ভিজিটিং কার্ডটা বের করে পিএসকে দিয়ে বললো, “এই নাম্বারে কল দেবেন একটু পর, আপনার সাহায্যের দরকার আছে আমার।”
পিএস খুবই অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। “আপনি কী করবেন? কিছুই তো বুঝতে পারছি না!”
“মুশকানকে ট্র্যাক করবো।”
“কিভাবে?”।
ছফা তাকে আশ্বস্ত করে বললো, “আমার উপরে ভরসা রাখুন,” বলেই দারোয়ানকে গেট খুলে দিতে বলে আশেক মাহমুদের ড্রাইভারকে ইশারা। করলো গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ার জন্য।
পিএসের অ্যাপার্টমেন্টের মেইনগেটটা বন্ধ হয়ে গেলে ছফা গভীর করে দম নিয়ে নিলো। তার সহকারী জাওয়াদ থাকে বাড়ায়, বাইক নিয়ে এখানে চলে আসতে দশ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। যেকোনো সময়ই ছেলেটা চলে আসবে। তবে তার জন্য অপেক্ষা না করে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে আশেপাশে তাকালো। এক দুজোড়া চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব কিন্তু অসংখ্য চোখ ফাঁকি দেয়া অসম্ভব।
মুশকান, তুমি কোনো না কোনো চোখে তো ধরা পড়েছেই!
.
অধ্যায় ৯৪
পিএসের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তড়িঘড়ি বের হয়েই মুশকান দেখতে পায় বৃষ্টি পড়ছে। একটু দূরে, কয়েকটি ভবনের পরই অপেক্ষা করছে ঐ গাড়িটা।
পুরনো ঢাকা থেকে উবারে করে গুলশানে আসার পথেই হসপিসের তথ্যটা পাবার পর দ্রুত পরিকল্পনাটা করেছিলো। ডাক্তারকে বলেছিলো, একটা প্রাইভেটকার আর বিশ্বস্ত ড্রাইভার দরকার তার, সেই সাথে ডাক্তারদের একটি অ্যাপ্রোন।
পুরনো ঢাকা থেকে গুলশানে যাবার পথেই ডাক্তার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন সেটা। উবারের গাড়িটা গুলশানের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় এসে ছেড়ে দেয় সে, তারপর উঠে পড়ে আসকারের পাঠানো গাড়িতে, ওটা দিয়েই চলে আসে আশেক মাহমুদের অ্যাপার্টমেন্টের কাছে।
এখন পিএসের অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে অনেকটা পথ সামনে গিয়ে ঐ গাড়িতে উঠে বসেছে। সুস্মিতাকে নির্দিষ্ট একটি রাস্তায় নামিয়ে দেবার কথা, সেখান থেকে এই গাড়িতে করে তাকে তুলে নেবে মুশকান-কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কিছু একটা গড়বর হয়ে গেছে! সুস্মিতার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে পিএসের ঐ লোকটা বলেছিলো, সে একটা লেনদেন করতে চায় তার সাথে। এর পরই ধস্তাধস্তির শব্দ শুনেছে। কিছুক্ষণ পর তাকে ভড়কে দিয়ে সুস্মিতার ফোনটাও বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার ভেতর থেকে। আরেকটু সতর্কতার সাথে কাজ করা দরকার ছিলো। পিএসের লোকটার বদলে নুরে ছফাকে দিয়ে সুস্মিতাকে নির্দিষ্ট পথে নামিয়ে দেবার চিন্তাটা বাতিল করে দিয়েছিলো এই ভেবে যে, নাছোড়বান্দা ছফা এ কাজের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। মাঝপথে সে হয়তো বাগড়া দেবে। পিএসের কথার অবাধ্য হয়ে মুশকানকে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে সে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার হিসেবে ভুল হয়ে গেছে।
নিজেকে ধাতস্থ করে নেবার চেষ্টা করলো মুশকান। সুস্মিতার নাম্বারে আবারো কল দিলো। নাম্বারটা এখনও বন্ধ আছে। মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু হলে তাকে কল দিতো ঐ লোক-কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা করেনি। মুশকান আর ভাবতে পারলো না। গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিজের নার্ভকে শান্ত রাখতে চাইলো। আজকে রাতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি সে। বলতে গেলে, সাধ্যের বাইরে গিয়ে সব কিছু করেছে। এরপরও যদি শেষটায় এসে খারাপ কিছু ঘটে যায়, তার কীই বা করার থাকবে।