একজন অসুস্থ মহিলা, যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে, তার জীবন রক্ষার জন্যে নতি স্বীকার করে এই মেয়েকে ছেড়ে দেয়ার কোনো মানেই হয় না। মুশকান যদি পিএসের বোনকে হত্যাও করে, আসলাম তার একটা ব্যাখ্যা দিতে পারবে অনায়াসে-মেয়েটাকে সে ছেড়ে দিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু ঐ ডাইনি তার কথা রাখেনি!
আসলামের কোমরে গোঁজা আছে নাইন মিলিমিটারের একটি পিস্তল। পুরোপুরি লোডেড। এই মেয়েটার সাথে এখন মুশকান নামের ঐ ডাইনিটা কানেক্টেড আছে ফোনে। খেলাটা আবার উল্টে দেয়া যাবে। এই হালকা পলকা মেয়েটাকে নিজের কজায় নিয়ে নিতে পারলে মুশকানকে বাধ্য করতে পারবে ঐ সিক্রেটটা জেনে নিতে। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না সে জানে। কঠিন অত্যাচার করতে হবে একে। আর এটা করতে তার ভালোই লাগবে। ফোনে মুশকান সেই অত্যাচারের আওয়াজ শুনে ভড়কে যাবে। তারপরই আসলাম প্রস্তাব দেবে-মানুষের শরীরে কী এমন জিনিস আছে, যেটা খেলে যৌবন দীর্ঘায়িত করা যায়…আয়ু বাড়ানো যায়? মহিলা তর প্রস্তাবে রাজি হোক আর না হোক, মেয়েটাকে ইচ্ছেমতো ভোগ করতে পারবে সে।
সুনসান গুলশান অ্যাভিনু থেকে বামদিকের একটি রোডে ঢুকে পড়লো আসলাম। রাতের এ সময় ওটা আরো বেশি ফাঁকা আর জনমানবহীন থাকে।
“এদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?” পেছনের সিট থেকে বলে উঠলো সুস্মিতা।
“শটকাটে যাচ্ছি।” বললো আসলাম। মেয়েটা যে ভয় কাটানোর জন্য তুই-তোকারি করছে বুঝতে পারলো।
“উল্টাপাল্টা কিছু করার কথা চিন্তা করবি না, গাণ্ডু!”
মুচকি হাসি দিলো আসলাম। একটু পর সে কী করবে এই মেয়ের কোনো ধারণাই নেই।
“উল্টাপাল্টা কিছু করেছিস তো, তোর বসের বোনকে শেষ করে দেবে মুশকান।”
রিয়ার মিরর দিয়ে তাকালো, কিছু বলতে গিয়েও বললো না। গভীর করে দম নিয়ে নিলো। একটু সামনেই নির্জন একটি রাস্তা আছে-রাতের এ সময়ে ওটা একদম ভুতুড়ে হয়ে যায়। আবাসিক এলাকা সত্ত্বেও গুলশানের অন্যান্য অংশের মতো এই রাস্তাটার দু-পাশে প্রায় সবগুলো বাড়িই অফিস আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে, রাত নয়টা দশটার পর থেকে জনমানবহীন হয়ে পড়ে।
হঠাৎ করে একটা গান ভেসে আসতেই চমকে উঠলো আসলাম।
“চাই গো আমি তোমারে চাই
তোমায় আমি চাই…”
অবিশ্বাসে রিয়ার মিরর দিয়ে তাকালো সে। অবাক হয়ে দেখলো, মেয়েটা গান গাইছে গুণ গুণ করে!
“এই কথাটি সদাই মনে বলতে যেনো পাই
আর যা-কিছু বাসনাতে…ঘুরে বেড়াই দিনে রাতে…”
মেয়েটাকে এখন দেখে মনে হচ্ছে, মাথা আউলে গেছে। কিংবা ভয় থেকে মুক্তি পাবার জন্যে গান ধরেছে!
বাঁকাহাসি ফুটে উঠলো আসলামের ঠোঁটে।
“মিথ্যা সে-সব মিথ্যা ওগো
তোমায় আমি চাই…”
আমিও তোকে চাই! পিএসের গানম্যান বলে উঠলো মনে মনে। তাকে মানতেই হলো, মেয়েটার কণ্ঠ বেশ ভালো, গায়ও চমৎকার। নির্জন রাস্তাটায় ঢুকেই বামদিকে ফুটপাত ঘেষে গাড়িটা থামিয়ে দিলো সে।
“অ্যাই, গাড়ি থামিয়েছিস কেন!” গান থামিয়ে এবার আঁৎকে উঠলো মেয়েটি।
হ্যান্ডগিয়ারটা টেনে দিলো আসলাম। ডানদিকের ড্রাইভিং ডোরের কাঁচটা তুলে দিলো সুইচ টিপে। রিয়ার মিরর দিয়ে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটাকে। অবাক করার মতো বিষয় হলো, সুস্মিতা হঠাৎ করেই চুপসে গেছে। তার মধ্যে সুতীব্র ভয় জেঁকে বসেছে সম্ভবত।
“কোনো রকম চালাকি করলে কিন্তু তোর বসের বোন মারা যাবে, তাকে আরো একবার সাবধান করে দিলো।
“ওই মহিলা এমনিতেই মরবে,” বাঁকা হাসি দিয়ে বললো আসলাম। “কয়েকটা দিন আগে মরলেই ভালো…কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে।”
.
অধ্যায় ৯২
জেবুন্নেসা নামে হাউজ নার্স মেয়েটি পাশের ঘরে চুপচাপ বসে আছে। মুশকান তাকে আর তার রোগীর সেবা দান নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেছে একটু আগে-একেবারে ইন্সপেক্টরদের মতো। তারপর মেয়েটার মোবাইলফোন দেখতে চাইলে বিনাপ্রতিবাদে নিজের ফোনটা তাকে দিয়ে দেয়। ফোন চালু আছে দেখতে পেয়ে কপট রাগ দেখিয়েছিলো সে।
“তোমাকে কি তোমার ডিপার্টমেন্ট বলে দেয়নি, ডিউটির সময় ফোন বন্ধ রাখার জন্য?”।
“জি…বলেছিলো তো,” কাচুমাচু খেয়ে বলেছিলো মেয়েটি।
“তাহলে তুমি বন্ধ রাখোনি কেন?”
“আ-আমার পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা আছে…ছোটোবোনের কাছে থাকে, ওর খোঁজ নিতে ফোনটা চালু রাখি। কিন্তু মিউট করে রাখি…ভাইব্রেশনও অফ করা থাকে…চেক করে দেখেন।”
মাথা দুলিয়েছিলো মুশকান। “এরকম এক্সকিউজ দেবে না আর। ডিউটিতে থাকার সময় অলওয়েজ ফোন অফ করে রাখবে, ঠিক আছে?”
মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলো মেয়েটি।
এরপর নার্সের ফোন আর ইয়ারফোনটা নিয়ে পাশের ঘরে চলে যায় মুশকান। ফোনের সাথে ইয়ারফোন কানেক্ট করে কানে গুঁজে দিয়ে ডায়াল করে পিএসের নাম্বারে, তাকে জানিয়ে দেয়, সুস্মিতাকে ছেড়ে না দিলে তার বোনকে মেরে ফেলা হবে। ক্ষমতাধর লোকটার নার্ভ গুঁড়িয়ে দেবার জন্য তার অসুস্থ বোনের একটা ছবি তুলেও পাঠায়। রান্নাঘর থেকে একটা কিচেন নাইফ নিয়ে ঘুমন্ত রোগীর গলার কাছে ধরে ছবিটা তোলে সে।
ডাক্তার আসকারই পিএসের নাম্বারটা তাকে দিয়েছিলো হাসপাতালের ফাইল থেকে। ভদ্রলোককে কল করার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার ফোনের সাথে কানেক্টেড আছে সে। কিছুক্ষণ আগে পিএস তার কথামতো সুস্মিতার কাছে হস্তান্তর করেছে ঐ ফোনটা। তাকে এখন গাড়িতে করে জায়গামতো পৌঁছে দেবে পিএসের এক লোক। তবে সুস্মিতা পুরোপুরি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কলটা কাটবে না।