“ওটাতে কল করুন, স্যার।” পিএস ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করে কানে চেপে ধরতেই তার চেহারায় আতঙ্ক ফুটে উঠলো। ভয়ার্ত অভিব্যক্তি নিয়ে তাকালো ছফার দিকে।
“ডিসকানেক্ট করে রেখেছে!”
ছফাকে তার ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে ফাঁকা ঘরটায় উদভ্রান্তের মতো পায়চারী করতে শুরু করে দিলো পিএস। এখন সেখানে একটি সোফা আর চেয়ার ছাড়া কিছু নেই। সুস্মিতা যে চেয়ারে বন্দী হয়ে ছিলো সেটার দিকে তাকালো তিক্তমুখে। ফাঁকা চেয়ারটা যেনো তাকে পরিহাস করছে!
তারপরই দৃশ্যটা দেখতে পেলো সে। চেয়ারের সামনে একটা দড়ি সাপের মতো পাক খেয়ে পড়ে আছে। এটা দিয়ে সুস্মিতার পা বেঁধে রাখা হয়েছিলো।
কিন্তু মেয়েটার হাত বেঁধে রাখা হয়েছিলো যে দড়িটা দিয়ে সেটা কোথায়?
ঘরের চারপাশে তাকালো।
“কি খুঁজছেন, স্যার?” কৌতূহলি হয়ে জানতে চাইলো ছফা।
“দড়িটা…নেই!”
“কীসের দড়ি?” বুঝতে পারলো না সে। দেখতে পেলো, একটা দড়ি পড়ে আছে চেয়ারের নীচে। “ঐ যে দড়িটা…?”
“কিন্তু আরেকটা কোথায়?” পিএস বললো। “মেয়েটার হাত-পা দুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিলো!” ছফা কিছু বলার আগেই আবার বললো সে, “আসলাম নেয়নি তো?” দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়লো তার কপালে।
“কিন্তু সে ওটা দিয়ে কী করবে?” ছফা বুঝতে না পেরে বললো।
আশেক মাহমুদের মনে একটা আশঙ্কা দ্রুত দানা বাঁধতে শুরু করেছে : আসলামের কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? না! এই ছেলে কখনও তার অবাধ্য হয়নি। সে ভালো করেই জানে, ঐ মেয়েটাকে কথামতো নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে না দিলে তার অসুস্থ বোনকে মেরে ফেলবে ঐ ডাইনি মহিলা।
পিএস স্থিরচোখে চেয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। “আসলাম কি মেয়েটাকে নিয়ে অন্য কিছু…”
“স্যার, আসলাম কেন এটা করবে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আশেক মাহমুদ মাথা দোলালো। “আপনি বুঝতে পারছেন না!”
এবার বুঝে গেলো নুরে ছফা। “কিন্তু আসলাম এটা কিভাবে করবে, ঐ মেয়েটা তো…” নিজে থেকেই থেমে গেলো। আজকে রাতে যেভাবে একের পর এক পাশার দান উল্টে যাচ্ছে, তাতে করে আসলাম যে সুস্মিতাকে কজায় রেখে মুশকানের সাথে কিছু করবে না সে নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। সমস্যাটা হলো গানম্যান আসলাম সম্ভবত দরজার বাইরে থেকে শুনতে পেয়েছে সুস্মিতার কাছ থেকে সিক্রেট অঙ্গটার কথা জানতে চেয়েছিলো পিএস।
রাগেক্ষোভে তাকালো পিএস। “ভুলটা আমারই হয়েছে!”
মাথা নেড়ে সায় দিলো ছফা। সে-ও জানে, যৌবন দীর্ঘস্থায়ী করা কিংবা চিরযৌবন লাভ করার আকাঙ্খর কাছে কোনো আনুগত্যই টেকার কথা নয়। কেএস খান এটা তিন বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলো-তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলো, কখনও যদি মুশকানকে কজায় নিতে পারে, ভুলেও যেনো তার কাছ থেকে সিক্রেট অঙ্গটার কথা জানতে না চায়।
“স্যার, আপনার বাসায় চলুন। জলদি!” কিছু একটা মনে পড়তেই তাড়া দিয়ে বললো ছফা।
পিএস হতভম্ব হয়ে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো তার দিকে। “ঐ ডাইনি এততক্ষণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে, ছফা!”
“এটা আমিও জানি, স্যার।”
সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো পিএস।
“কিন্তু সে কোথায় গেছে, কিভাবে গেছে সেটা বের করা যাবে। দেরি করলে সেই সুযোগটাও হারাববা।”
.
অধ্যায় ৯১
যে গাড়িতে করে সুস্মিতা আর শ্যামলকে অপহরণ করা হয়েছিলো, সেই একই গাড়িতে করে আসলাম এখন সুস্মিতাকে পৌঁছে দিচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে-বনানীর দশ নম্বর রোডে। এইমাত্র মুশকান তাকে ফোন করে এটা বলে দিয়েছে।
গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছে সুস্মিতা। রিয়ার মিরর দিয়ে বার বার তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে আসলাম। রাগেক্ষোভে তার চেহারাটা বিকৃত হয়ে আছে। যেনো এক্ষুণি ছিঁড়ে খুবলে খাবে।
কিন্তু সুস্মিতা জানে, তার এই রাগ-ক্ষোভ নিছক আস্ফালন। লোকটা পোষা কুকুর, প্রভুর হুকুম ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। আর এখন তার প্রভু নিজেই বেড়াল হয়ে গেছে!
মুশকানের সাথে এখনও কানেক্টেড থাকা ফোনটা সিটের পাশে রেখে নিজের হাতদুটোর দিকে তাকালো সুস্মিতা। দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার কারণে তার নরম চামড়া কিছুটা কেটে গেছে। খুব ব্যথা করছে সেখানটায়। রক্ত চলাচলও বন্ধ ছিলো অনেকক্ষণ। তাই এ হাত দিয়ে ও-হাতে মেসেজ করতে শুরু করলো সে।
রিয়ার মিরর দিয়ে আসলাম দৃশ্যটা পুরোপুরি দেখতে পেলো না, কারণ সুস্মিতা তার কোলের উপর হাতদুটো রেখে মেসেজ করে যাচ্ছে। চোখেমুখে সন্দেহ ফুটে উঠলো পিএসের গানম্যানের। “কী করছিস?” ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো।
রিয়ার মিররে তাকালো সুস্মিতা, আসলামের চোখে চোখ রেখে হাতদুটো মুখের সামনে তুলে ধরলো। “দেখ গা…কী করেছিস আমার হাতদুটোর!” রেগেমেগে অভিযোগের সুরে বললো সে।
অনেক কষ্টে রাগ দমন করলো পিএসের গানম্যান। রিয়ার মিরর থেকে চোখ সরিয়ে গাড়ি চালানোর দিকে মনোযোগ দিলো সে। তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে। জীবন নিয়ে ফিরতে পারবি কিনা সেটা আগে ভেবে দেখু! হাত নিয়ে যতো চিন্তা! মনে মনে বললো সে। ডানপাশের খোলা উইন্ডো দিয়ে থুতু ফেললো ঘৃণাভরে।
পিএস যখন তাকে বললো মেয়েটাকে নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দিতে, আসলাম সেটা মেনে নিতে পারেনি। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় একটা চিন্তার উদ্রেক হয়-এই মেয়েটাকে জায়গামতো পৌঁছে দিলেও তো মুশকান জুবেরি নামের ঐ ডাইনিটা পিএসের বোনকে হত্যা করতে পারে, পারে না? কাজশেষে ওই মহিলা এটা করবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে? একটু আগে পিএস নিজেই এমন আশঙ্কার কথা বলেছিলো ছফাকে যখন মুশকান তার সিনিয়রকে জিম্মি করেছিলো।