“কি হয়েছে?” ঘরের বাইরে এসে জানতে চাইলো ছফা। ইচ্ছে করেই স্যার সম্বোধন করলো না। “ফোনটা কি মুশকান করেছে?”
আসলাম অবিশ্বাসে চেয়ে রইলো। তার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।
গভীর করে শ্বাস নিয়ে বিমর্ষ মুখে তাকালো আশেক মাহমুদ। “ঐ ডাইনি আমার বোনকে জিম্মি করেছে।”
“ঐ মহিলা কিভাবে আপনার অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকলো?!” ছফার কাছে সত্যি বিস্ময়কর ঠেকছে এটা। সুরক্ষিত অ্যাপার্টমেন্টে থাকে আশেক মাহমুদ। নীচের মেইনগেটের দারোয়ানের কাছে গেস্টকে পরিচয় দিতে হয়, তারপর দারোয়ান ইন্টারকমে জানায় অ্যালোটিকে-ওখান থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেলেই কেবল ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। ছফা যতোটুকু জানে, পিএসের অ্যাপার্টমেন্টে কমপক্ষে দু-তিনজন কাজের লোক আছে। একজন কুক আর অন্য দু-জন বাজার করা, ঘরদোর মোছার কাজ করে।
ঠোঁট ওল্টালো পিএস। “আমার কোনো ধারণাই নেই।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বললো, “তবে যেভাবেই হোক সে ঢুকে পড়েছে!”
“আপনি নিশ্চিত হলেন কী করে?”
“হাউজনার্সের ফোন থেকে কল দিয়েছে, প্রমাণ হিসেবে আমার ফোনে একটা এমএমএসও পাঠিয়েছে…আমার বোনের একটা ছবি!”
মুশকান যে ছবিটা পাঠিয়েছে সেটা খুবই ভয়ঙ্কর, গা শিউরে ওঠার মতো : তার বোন আই-মাস্ক লাগিয়ে শুয়ে আছে, আর মেয়েলী একটা হাত ঠিক তার গলার কাছে ধরে রেখেছে কিচেন নাইফ!
পিএস আসলামের দিকে তাকালো। “ঐ মেয়েটা যেখানে নেমে যেতে চাইবে সেখানেই নামিয়ে দিও। উল্টাপাল্টা কিছু কোরো না, ঠিক আছে?”
অবাক হয়ে চেয়ে রইলো গানম্যান।
“স্যার, একটা কথা বলি?” ছফা কিছু বলতে চাইলো।
সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো আশেক মাহমুদ।
“আসলামের বদলে আমি যাই? আমি ওই মেয়েটাকে–”
হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলো পিএস। “না। আসলামই যাক। মুশকান আপনাকে চেনে। তাছাড়া…”
“তাছাড়া কি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো আশেক মাহমুদ। “কিছু না। আসলামই যাবে।” চূড়ান্ত রায় দেবার মতো করে বললো সে।
পিএসের মনোভাব বুঝতে পারলো ছফা। এ কাজে তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ভাবছে, সে হয়তো কথামতো কাজ করবে না, মুশকানের পিছু নেবে। সত্যি বলতে, ছফার উদ্দেশ্য সেরকমই।
“তাড়াতাড়ি যাও। সময় মাত্র দশ মিনিট,” ম্রিয়মান কণ্ঠে আসলামকে তাড়া দিলো আশেক মাহমুদ, তবে সেই ভঙ্গুর কণ্ঠে চেপে থাকা ক্রোধটা ঠিকই প্রকাশ পেলো।
গানম্যানের চেহারায় তিক্ত অভিব্যক্তি ফুটে উঠলো, একান্ত অনিচ্ছায় ঘরের ভেতরে চলে গেলো সে।
মুশকান জুবেরি দশ মিনিট সময় বেধে দিয়েছে! নুরে ছফা যারপরনাই অবাক। বুঝতে পারলো, ফোন কলটা এখনও কেটে দেয়া হয়নি! সেই একই চালাকি, একই কৌশল-কলটা ড্রপ করা যাবে না। ঘটনাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখার চমৎকার কৌশল!
এমন সময় সুস্মিতা তার পার্স আর পিএসের ফোনটা কানে চেপেই ঘর থেকে বের হয়ে এলো আসলামের সাথে। মেয়েটা চলে যাবার সময় একবার ছফার দিকে চকিতে তাকালো, তারপর দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো নীচে।
ওরা চলে যেতেই পিএসকে বললো ছফা, “কিছুই বুঝতে পারছি না, এটা কিভাবে সম্ভব হলো!”
কাঁধ তুললো আশেক মাহমুদ। “আমার মাথায়ও কিছু ঢুকছে না। ঐ ডাইনি আমার ফ্ল্যাটে কী করে ঢুকলো!”
“আপনি পুলিশকে ফোন করে জানিয়ে-”
হাত তুলে ছফাকে থামিয়ে দিলো পিএস। “সেই সময় নেই আমার হাতে। এই ঝুঁকিটা আমি নিতে পারবো না।” আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো সে, “মাত্র দশ মিনিট সময় দিয়েছে ঐ ডাইনিটা…কল কেটে দিলেই…”
পিএস কথাটা শেষ না করলেও ছফার বুঝে নিতে অসুবিধা হলো না। পরিহাসের হাসি দিতে গিয়েও দিলো না সে। একটু আগে যখন তার প্রিয়জন কেএস খান আর আইনস্টাইনের মতো মাসুম এক বাচ্চাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলো, তখন তাদের জীবনের কোনো পরোয়া করেনি এই লোক, কিন্তু নিজের মৃত্যুপথযাত্রি বোনের জন্য এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করেনি, সঙ্গে সঙ্গে মুশকানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেছে।
ছফা টের পেলো পিএস তার কাঁধে হাত রেখেছে।
“আমি…সরি,” আস্তে করে বললো আশেক মাহমুদ, প্যান্টের পকেট থেকে ছফার পিস্তলটা বের করে তার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
অস্ত্রটা নিজের কোমরে গুঁজে নিলো ছফা, সঙ্গে সঙ্গে ফিরে পেলো। আত্মবিশ্বাস। সেই সাথে খুলে গেলো জট পাকানো চিন্তাভাবনার গিটটাও। “আমার ফোনটা দিয়ে পুলিশকে ইনফর্ম করে বলি আপনার অ্যাপার্টমেন্টে–”
“না।” কথার মাঝখানে থামিয়ে দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলো পিএস। “এতো কম সময়ে কিছুই করা যাবে না। আমি আমার বোনকে…” তার গলা ধরে এলো। “আমি এটা করতে পারি না, মাথা দোলালো আশেক মাহমুদ। “বুবু আমার মায়ের মতো!”
হতোদ্যম হয়ে পড়লো ছফা। সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা মাথায় আসতেই বললো সে, “কিন্তু স্যার, মুশকান জুবেরি যে তার কথা রাখবে সেটার কি নিশ্চয়তা আছে?”
পিএস কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলো ছফার দিকে। একটু আগে বলা তার নিজের যুক্তিটাই যেনো দিচ্ছে ডিবি অফিসার। কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঢুকে পড়লো ঘরের ভেতর। ছফাও তার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকলো।
“আপনি আপনার অ্যাপার্টমেন্টে ফোন করে জেনে নিন সব ঠিক আছে কিনা।”
“আমার ফোনটা ওই মেয়ের কাছে।”
“তাহলে আমার ফোন থেকে কল করুন, নিজের ফোনটা বাড়িয়ে দিলো সে।
“ঐ হাউজনার্সের ফোন নাম্বারটা আমার মুখস্ত নেই, কিন্তু বাসার ল্যান্ডফোনের নাম্বারটা মনে আছে।”