অ্যাবসোলিউটলি।
কুড ইউ ট্রেস দ্যাট গাই?।
নাহ।লোকটা দাম নিয়েই হাওয়ার মতন মিলিয়ে গেছে। দুটো জারই কনফিসকেট করে নিয়ে এসেছি। আহমেদ খানের বাড়ির লোকজন নিশ্চয়ই আইডেন্টিফাই করতে পারবে জার দুটোকে।
সো, তোমার কথাই মনে হচ্ছে ঠিক।ওকে।প্লিজ প্রসিড টু ন্যাব দিজ মার্ডারার্স। ক্যাচ দেম অ্যান্ড হ্যাঙ্গ দেম। ইটস দ্য ডিউটি অফ হোয়াইট পিপল লাইক আস টু ব্রিং ল অ্যান্ড অর্ডার ইন দিস গড ফোরসেকেন প্লেস। যা সাহায্য চাইবে, পাবে। যখন চাইবে তখনই। উইশ ইউ বেস্ট অফ লাক।
থ্যাংক্স ক্যাপ্টেন।
ফিরে চলে আসছিলেন যুবকটি। পিছন থেকে ডেকে ওঠেন ক্যাপ্টেন ম্যালোনি। উঠে এসে যুবাপুরুষটির কাঁধে হাত রাখেন। সস্নেহে বলেন, দিজপিপল আর ডেঞ্জারাস, ভেরি ডেঞ্জারাস। বি এক্সট্রিমলি কশাস ডিয়ার।
ইয়েস ক্যাপ্টেন।
টেক কেয়ার অফ ইওরসেল্ফ স্লিম্যান। আই উইল ওয়েট ফর ইউ।
*********
বিলের থেকে ঠান্ডা হাওয়া গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে শুকনো শরীরটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যায়। পাতার সরসরানি আর মাটি কাটার ঝুপঝুপ আওয়াজ ছাড়া আর। কোনো আওয়াজও শোনা যায় না। নির্জন এই জঙ্গুলে জায়গায় বিন্দুমাত্র আলো নেই, তার ওপর অমাবস্যা। আজ মঙ্গলবারও বটে, মা ভবানীর পূজার প্রশস্ত দিন।
বড় শুভদিন আজ। যুক্তকর মাথায় ঠেকালেন দীর্ঘদেহী ব্রাহ্মণ।মা আজ এতগুলি বলি স্বীকার করেছেন। টাকাও যা পাওয়া গেছে, তা কেউ কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি, একলক্ষ টিপুশাহি খোর!
দুরে একটা পেঁচা ডেকে উঠল। বড় সুলক্ষণ, বড় সুলক্ষণ, অভীষ্ট সিদ্ধির পথে আজ বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবেন উনি। আজ রাতেই। তারপর আর একটি মাত্র সোপান বাকি, তারপরই…
অকস্মাৎ ঠাকুর ডাক শুনে সচকিত হন উনি। খোদাবক্স খাঁ সামনে দাঁড়িয়ে। নাহ, অনেক কাজ বাকি, সেগুলি দ্রুত শেষ করতে হবে। প্রথার বাইরে এক পাও চলার উপায় নেই, তাহলেই দলের ওপরে নেমে আসবে মা ভবানীর রুদ্ররোষ। দলের সর্দার। হিসেবে এই অনর্থ হতে দিতে পারেন না উনি।
মাটিতে সার বেঁধে শোয়ানো তেইশটি মৃতদেহ। প্রত্যেকের গলায় সিল্কের তৈরি পেলহুর ফঁসের দাগ।
বাকিরা কোথায় খোদাবক্স? বিচালি দেখেছ ঠিকঠাক জায়গায়? বেশ গভীর খুঁড়তে হবে কিন্তু। রাতও বেশি বাকি নেই আর। হাত চালাতে বলো সবাইকে।
ধাউর জমাদার, আর মোরাদুন কুর্মি বাকিদের নিয়ে কুরওয়া খুঁড়ছে মালিক। নাসির মাদারি সাদা রুমাল নিয়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে বিপদ দেখলে ফুরকদেনার জন্যে।
বেশ বেশ। কাসসি কার কাছে ছিল?
আমার কাছে ছিল মালিক। মন্তর পড়া কোদাল, আর কাউকে দিতে আছে?
ভালো। তাড়াতাড়ি করতে বলো।
চিন্তা না কিজিয়ে মালিক। ওরা এই কাজে দুরুস্ত। বেশক খানদানি লোক ওরা এ কাজে। নাউরিয়া বয়েস থেকে এইসব দেখে দেখে আর করে করে এসব কাজে এরা ভারী মাহির।
ভালো হলেই ভালো।
এমন চিসা শিকার আর কবে মিলবে মালিক, হি হি হি। যা পেয়েছি, আধা জিন্দেগি কেটে যাবে আমাদের। মা ভবানীর কিরিয়া।
সুবন হারসুকাকে দুটো খোর বেশি দিও খোদাবক্স। এমন দুরুস্ত তিলহাই কমই দেখেছি। সেই ভোপাল থেকে খবর পেয়ে দৌড়ে এসে জানাল বলেই তো এত বড় দাওটা মারতে পারলাম। তাড়াতাড়ি করো, ঠিক বাইশটা কুরওয়া খুঁড়বে। বেশি না। হাত পায়ের জোড় ভেঙে দিয়েছ তো? নইলে আবার দেহ পচে ফুলে উঠে…
গুস্তাখি মাফ মালিক। কিন্তু লাশ তো…
তেইশটা বলার আগেই ব্রাহ্মণের চোখে চোখ পড়ে যায় খোদাবক্সের। অন্ধকারেও ধকধক করে জ্বলে ওঠে সেই চোখ। কঠিন কণ্ঠে আদেশ ভেসে আসে,
যা বলছি তাই করো খোদাবক্স। আর তাড়াতাড়ি করো।
দ্রুত সন্ত্রস্তপদে ফিরে আসতে আসতে ভয়ে ত্রাসে ঘেমে ওঠে খোদাবক্স খাঁ। এই লোকটির মধ্যে কী আছে বোঝাতে পারবে না ও, কিন্তু চোখে চোখ রাখলে একটা সিরসিরে শীতল অনুভূতি হয়। একটা ভয়জড়িত অস্বস্তি। কম কথা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের এই ব্রাহ্মণটির মধ্যে একটা অদেখা শীতল নিষ্ঠুরতা আছে, যা শুধুমাত্র ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ছাড়া ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।
তিন সন আগে হঠাৎ করে ভুকো জমাদারের ঘরে ইনি এসে উপস্থিত। ভকোতই তখন ছিল দলের সর্দার।যেমন সাহস ছিল ভুকোতের তেমনই ছিল বুদ্ধি। গাঁয়ের কেউ। জানতে পারেনি ভুকোতের দলের আসল কাজ কী। বারিষ কা মৌসুম শেষ হল কী ভুকোত তার দলবলসমেত বেরিয়ে পড়ত। পডৌসিরা জানতো যে এরা কাজের খোঁজে দূরগাঁও যাচ্ছে। তারপর কয়েক মাস পরে পয়সা কামাই হলে ফিরে আসবে।বিবির জন্যে আনবে নতুন শাড়ি আর কুমকুমের বিন্দি। বালবাচ্চার জন্যে আনবে নতুন কাপড় আর খেলনা। তারপর পঞ্চায়েতের বড় বারগত পেঢ়টির নিচে বসে গাঁওবুড়োদের সঙ্গে হুঁকো। খেতে খেতে গাঁওদেশের আজব সব কিস্যা শোনাবে। আর পাঁচটা বাহারগাঁওতে কাজ করতে যাওয়া মরদ যেমন হয় আর কী। কিন্তু ভুকোতের দল দূরদেশে গিয়ে রোজগার করা আর পাঁচটা দেহাতি মরদদের দলের থেকে আলাদা ছিল।
একদম আলাদা।
শরতের শুরুতে, কোনো এক শনি বা মঙ্গলবার দেখে, যাত্রা শুরুর আগে এক এক করে খোদাবক্স, ধাউর, মোরাদুন, সুবন, ছুটনিয়া, এরা ভুকোতের বাড়ি এসে জড়ো হত। দরজা বন্ধ করে শুরু হত বিশেষ উপচার। খুঁড়ে তুলে আনা হত বিশেষ মন্ত্রপূত কোদাল, কাসসি। তাকে পুজো করে চিনির জল, ঘোল আর দেশি মদ দিয়ে ধুয়ে, সাতবার আগুনে সেঁকে, সিঁদুরের সাত ফোঁটা লাগিয়ে শুদ্ধ করে সেই মন্ত্রপূত কোদাল তুলে। দেওয়া হত বিশেষ কারও হাতে।