তিনি আর্তনাদ করে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
.
২০১৬। জুলাই। আফগানিস্তান।
প্রধান সমস্যাটা হচ্ছে ফার্স্ট ফ্লোরে ওঠা, সেটা স্কুলের ম্যাপ দেখামাত্র বুঝলেন মার্টিনহো। ইতিমধ্যে ছয় ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি পাতলা ভিজিকম ডিভাইসটা খুলে লোকেশন দেখে নিয়েছেন তিনি ও তাঁর বারোজন খুনে কম্যান্ডো। জিনিসটা কোনো নতুন স্পেশাল মেটেরিয়ালে তৈরি, একটা পাতলা প্যাডের মতন, যেটা বামবাহুতে জড়িয়ে রাখা যায়, প্রয়োজনে খুলে স্লেটের মতন আকারেও নিয়ে আসা যায়। ল্যামেগো থেকে এর মধ্যেই ইউ এস-এর ল্যাংলেতে বার্তা পাঠানো হয়ে গেছে। তারই ফলাফল হিসেবে কাছাকাছির মধ্যে থাকা দুটি ড্রোন উড়ে এসেছে ওঁদের সাহায্যার্থে।
গ্রাউন্ড লেভেলে কেউ নেই। ওরা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে গেছে ফাস্ট ফ্লোরে। পেছন দিকে একটা দরজা আছে বটে, কিন্তু তার ওধারে যে সিঁড়িটা আছে, সেটা সোজা উঠে গেছে ফাস্ট ফ্লোরে এবং তার সামনে অবশ্যই যে একজন গার্ড আছে সেটা অনুমান। করার জন্যে কোনো পুরস্কার নেই।
প্রথমে পরিকল্পনাটা মনে মনে ছকে নিলেন মার্টিনেজ। একটু আগে লেফটেন্যান্ট আব্দুল করিমির কোডেড মেসেজ পেয়েছেন তিনি, টেররিস্টদের অ্যাটেনশন ড্র করার জন্যে স্কুলের সামনের দিকে মহড়া চলছে, খুব।
সময় কম, সাত মিনিট কেটে গেছে অলরেডি। ওপরে উঠবে কী করে রেঞ্জার্সরা? কোনো টেকনিকাল ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করার প্রশ্নই ওঠে না, বিন্দুমাত্র আওয়াজ করা। মানে শুধু এদের নয়, শিশুদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলা।
প্রত্যেক রেঞ্জার্স তাদের ব্যাগ থেকে একটা করে দেড় ফুট লম্বা পাইপ বার করল প্রথমে, সেগুলো পরস্পর জোড়া যায়। স্পেশাল মিলিটারি গ্রেড ফাইবারের তৈরি ঘাতসহ এবং নমনীয় এই পাইপগুলো বিভিন্ন কাজে লাগে, যেমন ব্লো পাইপ হিসেবে, অথবা অ্যাসল্ট রাইফেলের সামনে ফিট করে লং রেঞ্জ রাইফেল হিসেবে ব্যবহার করতে, অথবা শুধুমাত্র পোল বা লম্বা দণ্ড হিসেবে, এই যেমন এখন ব্যবহার করা হবে।
ফটাফট তেরো পিস ফাইবার পাইপ জোড়া লাগিয়ে একটা লম্বা শক্তপোক্ত কিন্তু নমনীয় পোল তৈরি হয়ে যেতেই একজন তার একপ্রান্ত দুহাতে ডানদিকে কোমরের কাছে ধরে দেওয়ালের কাছে দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াল। পোলের অন্য দিকটা দুজন রেঞ্জার্স ধরে রইল।
এরপর যেটা ঘটল সেটা স্রেফ ম্যাজিক। প্রথম রেঞ্জার্স পোলটাকে শক্ত করে ধরে খাড়া দেওয়ালে প্রথম পা রেখেই খুব দ্রুত দ্বিতীয় পা রাখল, পোলের অন্য প্রান্ত অন্য দুই রেঞ্জার্স চেপে ধরে কৌণিক ভাবে চাপ দিয়ে যেতে লাগল। প্রথম রেঞ্জার্স স্রেফ নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুযায়ী সেই পোলটাকে ধরে সমতলে হাঁটার মত করেই খাড়া দেওয়াল বেয়ে তরতর করে হেঁটে উঠে দোতলার বারান্দায় পৌঁছেই বারান্দার পাঁচিলের নীচে মাথা নিচু করে অদৃশ্য হয়ে গেল। লিখতে যতক্ষণ লাগল, তার অনেক কম সময়ে ঘটে গেল এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটা; বড়জোর পনেরো থেকে কুড়ি সেকেন্ড।
পরের তিন মিনিটের মধ্যে মার্টিনেজ সহ বারোজন রেঞ্জার্স, পৌঁছে গেল দোতলায়। একজন রয়ে গেল নীচেই, ছায়ার সঙ্গে মিশে, সাক্ষাৎ মৃত্যুদূতের মতন।
দোতলায় পৌঁছেই পরিস্থিতিটা সরেজমিনে বুঝে নিলেন মার্টিনেজ। বারান্দাটা দুদিকে ছড়িয়ে গিয়ে বাঁক নিয়েছে সামনের দিকে। ভিজিকমে একবার ম্যাপটা দেখে নিলেন মার্টিনেজ।এই বারান্দাটা পুরো স্কুলের ফাস্ট ফ্লোরকে ঘিরে রেখেছে। সামনের দিকে একের পর এক ক্লাসরুম। আর যেখানে বারান্দাটা সামনের দিকে বাঁক নিয়েছে, সেদিক দিয়ে দুটো সিঁড়ি নেমে গেছে নীচে। তার মানে পেছনের দরজার সামনের সিঁড়িটা ল্যান্ডিং ফ্লোরে এসে মিশেছে। ওইখান থেকে দুটো সিঁড়ি সামনের প্রধান দরজার দিকে গিয়ে মিশেছে। আর মাঝের সিঁড়িটা এসেছে পেছনের দিকে।
ঠিক এগারো সেকেন্ড লাগল বাকি এগারোজন রেঞ্জার্সকে বুঝিয়ে দিয়ে কী করতেন হবে। নো সাউন্ড, নো গানশট। সেপারেট দেম আউট অ্যান্ড নিউট্রালাইজ।
ছজন বাঁদিকের পথ নিল, বাকি ছয়জন ডানদিকের।
মার্টিনেজ প্রথম বাঁকের কাছে পৌঁছে একটু থামলেন। স্কুলের সামনের দিকে প্রচর আলো আর আওয়াজ, এ তিনি জানতেনই কেন আর কীসের জন্যে। কীভাবে যেন তারই একটা টুকরো আলোর রেখা মার্টিনেজের সামনে এসে পড়েছে।
আর সেই আলোআঁধারির সিলুয়েটে একটা মানুষের অর্ধেক ছায়ার ভগ্নাংশ এখন মিশে আছে তার পায়ের কাছে। অর্থাৎ এই সরু বারান্দাপথে কেউ আছে। পাহারারত।– একটু নিচু হলেন মার্টিনেজ, তার পেছনে দেওয়ালের দুদিকে কুঁজো হয়ে পজিশন নিয়েছে বাকি পাঁচজন রেঞ্জার্স, টানটান ছিলার মতন ভঙ্গি, যে কোনও মুহূর্তে উড়ে গিয়ে প্রলয়কাণ্ড বাঁধাবার জন্যে দৃঢ়চিত্ত।
নিচু হয়ে ডানপায়ের হাঁটুর ভাজের কাছে যে পকেটটা আছে সেখান থেকে মুঠো করে কী একটা বার করে আনলেন। হাত খুললে দেখা গেল মুঠোর মধ্যে বড় সাইজের
গুবরেপোকার মতন কী একটা। মার্টিনেজ তালুটা খুলে প্রসারিত করে ওটার তলায় আঙুল দিয়ে একটা স্যুইচ অন করে হাতটা সামান্য উঁচু করে ধরলেন। সেই যান্ত্রিক কালো ভ্রমরটির মাথার কাছে আট হাজার আরপিএম রেটে ঘুরতে থাকা পাখাঁটি চালু হতেই সেটি হাতের তালু থেকে উড্ডীন হতে থাকে।