চাবিটা ছুঁড়ে দিয়ে ভাঙা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে স্টেশনের দিকে রওনা দেয় টেনিয়া।
না, টেনিয়াকে দেখিয়ে দেওয়ার দরকার নেই মেয়ে তিনটে কোথায় বসে আছে। মোবাইলটার মোড় চেঞ্জ করে টেনিয়া। ইসস, অনেকগুলো মিসড কল অ্যালার্ট এসে পড়ে আছে। নিজের ফেসবুকটা অন করে একবার মেসেঞ্জারটা দেখে নিয়েই বন্ধ করে টেনিয়া।
স্ক্রিনে ফুটে উঠেছিল প্রায় ওরই মতন আরেকটা ছেলের ফটো, প্রোফাইলে লেখা ছিল একটা ছোট্ট নাম, স্যাম!
*********
ট্যাক্সির স্টিয়ারিঙে টানটান হয়ে বসেছিল শিবা।গুরুকখনো ফেল হয় না, একটু পরেই পাক্কা ছবকি তিনটেকে ম্যানেজ করে গুরু সিগন্যাল দেবে। একবার ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাজারহাটের ফাঁকা ফ্ল্যাটটায় তুলতে পারলেই, ওহ। শরীরে কিছু চাঞ্চল্য অনুভব করল শিবা। দুটো দিন তো গুরু রাখবেই। ও আছে, গুরু নিজে আছে, আসলাম আছে, বনোয়ারি আছে, সামন্ত আছে, তোক কম নাকি? দিয়ে থুয়ে খেতে হয়, গুরুর সাফ কথা।
সময় নিচ্ছে গুরু। ভালো, বড় মছলি, কিছু সুতো তো খাবেই।তিনটের মধ্যে যেটা সবচেয়ে বড়, সেটাকে আগে চেয়ে নেবে শিবা, ভেবে রেখেছে। উহ, বাতাবির কী সাইজ মাইরি! ভাবতে ভাবতেই ড্যাশবোর্ড খুলে একটা কালো চ্যাপ্টা বোতল বার করে আনে।
বোতলের ছিপিটা খুলতেই একটা উগ্র কটু ঝাঝালো গন্ধ ট্যাক্সির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পাঁইটটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে শিবা, তারপর সোজা গলায় উপুড় করে দেয়।
গলাটা জ্বলে যায় শিবার, মালটা গিলে নিয়ে খানিকক্ষণ চোখমুখ কুঁচকে বসে থাকে। আহ, কী ধক মাইরি, সালা পলকে ধরে নেয়। নিউ ব্যারাকপুরের পদ্মবৌদির ভঁটিতে বানানো আসলি চিজ। চুন্নুর সঙ্গে চুন, আরও কী কী কেমিক্যাল মেশানো হয়; তারপর খদ্দের বুঝে ব্যাটারির জল। পদ্মবৌদির চুন্নুর তেজে পদ্মগোখরোর বিষের থেকে কম কিছু না, লোকে নামই দিয়েছে পদ্মকাঁটা। আগে বলতো ফুটুশ।
ফুটুশই বটে, বেশিদিন এই জিনিস চালালে পাবলিক ফুটেই যায়, কম লোক তো শিবা দেখেনি এ লাইনে।
শিবাও ফুটবে, বেশি দিন নেই আর।
ভাবতেই ভাবতেই খি খি খি করে ছোপ ধরা দাঁতগুলো বার করে হেসে ওঠে শিবা, আর ঠিক সেই সময়ে মোবাইলটা কর্কশ স্বরে বেজে ওঠে। ঝটপট বোতলটা ড্যাশবোর্ডে চালান করে দিয়ে মোবাইলটা তুলে কল অ্যাক্সেপ্ট করে কানে দেয় ও, বলো গুরু।
ওপার থেকে টেনিয়ার শান্ত কেউটের মতন গলাটা হিসহিসিয়ে ভেসে আসে, বলি দাসদা স্টেশন চত্বরে আছেন নাকি? আপনাকে তো আমার আর তিতলির ব্যাপারে বলেইছিলাম। ও এসে গেছে, বুঝলেন? সঙ্গে আমার দুই শালিও আছে। তা আজকে ঠাকুরমশাই বললেন ভালো লগ্ন নেই, তাই আজ বাদ দিয়ে বিয়েটা আমরা কাল করছি। আজকের রাতটা একটু রাজারহাটে আমার পিসিমার ডেরায় পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করে দিন দাদা, প্লিজ। কালকেও কিন্তু সকালে আসতে হবে সক্কাল সক্কাল, মনে আছে তো? কালীঘাটে পৌঁছে দিতে হবে কিন্তু, হেঁ হেঁ…
ফোনটা কেটে ইঞ্জিন অন করে শিবা। শাল্লা, আগে থেকে চিনতো তার মানে?অন্য সোর্স থেকে তুলেছে? কী অ্যাকটিং মাইরি, সাধে এই হারামিটাকে গুরু বলে মেনেছে শিবা? আহ, দুটো দিন। ভদ্র বাঙালি বাড়ির তিনটে নরমসরম বাচ্চা, টাইট নরম থাপকি
দুটো, তেমন ছুনমুন গাব্বা ডাব্বা, আহহ, ভাবতে ভাবতেই গিয়ার বদলায় শিবা।
*********
ট্যাক্সিটা প্রায় উড়েই চলেছিল সল্টলেকের রাস্তা ধরে। শীতকালের রাত দ্রুত নামে। পিছলে যাওয়া রাস্তার আলোতে ছায়ারা খেলা করে যাচ্ছে পিছনের সিটে বসে থাকা মেয়েগুলোর মুখে। সে মুখে নতুন অ্যাডভেঞ্চারের উত্তেজনা, বিয়ের চিন্তা লোক ভয়, নাকি অজানা অচেনা শহরে হারিয়ে যাওয়ার উদ্বেগ, কোনটা বেশি সেটা বলতেন পারবে না শিবা। পাশে টেনিয়া বসে, ঘনঘন ঘড়ি দেখছে।
ওদের যে ঘাঁটি, তার কেয়ারটেকার সামন্তকে বলাই আছে রেডি থাকতে। আধা তৈরি হয়ে পড়ে থাকা বিল্ডিংটায় কেউ থাকে না, তারই একটা ঘর ওরা নিয়ে রেখেছে। একটেরে বিল্ডিং, দূর দূর অবধি কেউ নেই, চেঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেললেও কেউ শুনতে পাবে না।
টেনিয়ার উদ্বেগ অন্য জায়গায়। মালিককে তিনটেরই ফোটো হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে টেনিয়া, মালিক বলছে কালই তুলে দিতে আসলামের লরিতে। কিছু না ভেবেই দু লাখ চেয়েছিল টেনিয়া, মালিক শোনা মাত্র রাজি হয়ে যায়। এখন আফশোস। হচ্ছে টেনিয়ার, আরও কিছু চাইলেই হত। যাকগে যাক। আজ রাতটাই যা,
অনেকক্ষণ পর বড়ো মেয়েটা কথা বলে উঠল, আমরা কোথায় যাচ্ছি স্যাম? গলার মধ্যে উদ্বেগ আর উত্তেজনাটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। টেনিয়া একটু খুক করে হেসে নিয়ে বলল, এই তো, আমার পিসির বাড়ি, সামনেই। বড় ফ্ল্যাট, পিসি একাই থাকে। আমি বলেই রেখেছি তোমাদের কথা, তোমাদের কোনো অসুবিধাই হবে না, হে হে।
তোমাদের বাড়িতে গিয়ে উঠলে হত না?
যেন লজ্জাতেই জিভ কাটে টেনিয়া, আরে ছি ছি, বিয়ের আগেই মা তোমাকে দেখবেন নাকি? আজ তো কালরাত্রি না কী একটা বলে না? একেবারে কাল বিয়ে করেই না হয় উঠবে। মা তো বরণডালা সাজিয়েই রেখেছে, হে হে।
এত রাত্রে তিনজন গিয়ে উঠব, পিসিমণি কিছু মাইন্ড করবেন না তো? মেয়েগুলোর সারল্য দেখে অবাকই হচ্ছিল শিবা। তবে আরও অবাক করল টেনিয়া, আরে না না, আমাদের ব্যাপার পিসিমা সঅঅব জানে। আসলে এখান থেকে কালীঘাট যেতে সুবিধা, আর কালই শুভদিন। একরাত থাকবে, গল্পগুজব করবে, এ আর এমন কী। আমার পিসি তোমাকে দেখার জন্যে মুখিয়ে আছে বুঝলে! হাজার হোক, বাড়ির বড় বউমা বলে কথা! শিবার তো ইচ্ছে করছিলো স্টিয়ারিং ছেড়ে হাততালি দিয়ে ওঠে। সাল্লা, কোথায় লাগে শারুক্ষান, কোথায় লাগে সালমান। সাধে মালিক এত ভালোবাসে গুরুকে?