টেক কেয়ার মার্ট, বি এক্সট্রিমলি কশাস। মোস্ট অফ দ্য কিডস আর অফ টেন টু টুয়েলভ ইয়ার্স অফ এজ। বলে একটু দম নেন চিফ, অলমোস্ট অ্যাজ ইয়াং অ্যাজ তিয়াগো।ভাবো, আজ তুমি তোমার একশোটা ছেলেকে বাঁচাতে যাচ্ছে। একটা বাচ্চার। গায়েও যেন আঁচড় না পড়ে। অ্যান্ড লিকুইডেট দোজ আসহোলস। থারটিন মিনিটস টু রিচ। ওভার।
ওভার অ্যান্ড আউট বলে চুপচাপ ফোনটা রেখে মাসইন্ট্রাকমের দিকে এগিয়ে। যান মার্টিনহো। তিয়াগো ওঁর ছেলে, একমাত্র ছেলে। বুকের পাঁজরের থেকেও মার্টিনহো। ভালোবাসেন নিজের ছেলেকে। পাথরের মতন রসকষহীন শুকনো মানুষটা, হাই অলটিচিউড ওয়ারফেয়ার থেকে জাঙ্গল কমব্যাটে যার সমান ঈর্ষনীয় দক্ষতা, খালি হাতে যে একাই দশ বারোটা সশস্ত্র লোকের মহড়া নিতে পারে, ক্লোজ কোয়ার্টার কমব্যাট টেকনিক ক্রাভ মাগাতে যার তুল্য কমান্ডো গোটা ইওরোপে নেই, খালি হাতে শত্রু খুন। করাটা যার বিশেষ স্পেশিয়ালিটি, কম করে গোটা কুড়ির ওপর জঙ্গিহানা সামলানোতে নেতৃত্ব দিয়েছে যে লোকটা, সেই লোকটাই তিয়াগোর শুধু সর্দি হবার খবরে পাগলের মতন করতে থাকে।কঠিন নাস্তিক লোকটা চার্চে মোমবাতি জ্বালাতে দৌড়োয় তিয়াগোর। সামান্য জ্বর হলে।
এসব আরো করে সিসিলিয়া মারা যাবার পর। সিসিলিয়া তিয়াগোর মা।
আজ একশোটা তিয়াগোকে বাঁচাতে হবে।চোয়ালটা শক্ত হয়ে আসে মার্টিনহোর।
দ্রুত মাসইন্ট্রাকমটা তুলে নেন হাতে, এমার্জেন্সি কল রেঞ্জার্স, রেটিং এক্স। অনলি টেন মিনিটস টু রেসপন্ড। একটি শিশুদের স্কুল দখল করা হয়েছে। প্রায় একশোটি শিশু বন্দি। সিক্স মিলিট্যান্টস টু নিউট্রালাইজ। নট আ সিঙ্গল কিড টু গেট হার্ড। নিড টুয়েলভ ভলান্টিয়ার্স। আলিয়াবাদ স্কুল, এখান থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে দেড় কিলোমিটার, ডাউনটাউন। গেট আর্মড টু দ্য টিথ । লেটস মুভ ফাস্ট।
বারো জন ঠান্ডা মাথার খুনে রেঞ্জার্স নিয়ে খ্যাপা প্যান্থারের মতই ছুটে চললেন কর্নেল মার্টিনহো ভাজ।
.
১৫৬০। অগাস্ট। গোয়া।
সন্ধের অন্ধকারে লোকগুলো চুপচাপ মশাল জ্বালিয়ে হেঁটে আসছিল। ঠান্ডা বাদলা হাওয়ায় বেঁকে যাচ্ছিল আগুন, উড়ে যাচ্ছিল মশালের কালো ধোঁয়া। জঙ্গল পেরিয়ে মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া দলটিতে আছে দশ বারো জন বিদেশি সৈন্য, সামনে দুজন দেশীয় পথপ্রদর্শক। দুজন বিদেশি ঘোড়ায় চড়ে পাশে পাশে যাচ্ছিলেন, তাঁদের সাজপোশাক আর কঠিন চোয়ালে স্পষ্ট যে এই দুইজনই অত্যন্ত উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী।
ছোট দলটি যতদূর সম্ভব কম আওয়াজ করে হেঁটে যাচ্ছিল। কারো মুখে কোনো কথা নেই, পথঘাটও জনহীন। শুধু ঘোড়ায় বসা দীর্ঘকায় রাজকর্মচারীটি একবার জিজ্ঞেস করলেন চাপা গলায়, আর কতদূর? আকাশে মেঘ করেছে, বৃষ্টি এল বলে।
বেশিদূর নয় সেইনর এক বিদেশি সম্ভ্রমভরা গলায় উত্তর দেয়, এই মাঠটা। পেরিয়েই সেই মন্দির।
একটু পরেই একটি মন্দিরের সামনে এসে দাঁড়াল ক্ষুদ্র দলটি।মশাল উঁচু করে তুলে। ধরল কয়েকজন। ধীরে ধীরে মেঘকালো অন্ধকারের প্রেক্ষাপটে জমাটবদ্ধ এক পাথুরে অন্ধ পাহাড়ের মতোই শতাব্দী প্রাচীন সেই মন্দিরটির অবয়ব ফুটে উঠল।
দুইজন বিদেশি সিপাহি এসে ঘোড়াদুটির লাগাম ধরতে ঘোড়া থেকে নেমে আসেন দুই রাজপুরুষ। দুইজনেই আকাশের দিকে তাকান। ঘনকালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ, স্তব্ধ অশনিসঙ্কেত ব্যাপ্ত এই চরাচরে। ঠান্ডা হাওয়ার ঝাঁপটা মুখে এসে লাগছে। মাথার টুপি উড়ে যাচ্ছিল, সেটাকে ধরে আবার মাথায় বসিয়ে নিয়ে দীর্ঘকায় রাজপুরুষটি আঙুলের ইঙ্গিতে দেশীয় দুজনকে আদেশ দেন মন্দিরে উঠতে।
চকিতে পা জড়িয়ে শুয়ে পড়ে দুজনেই, গরিবকে মাফ করুন হুজুর। মেরে ফেলুন, কেটে ফেলুন, কিন্তু দয়া করে এই মহাজাগ্রত রুদ্রবেতাল মন্দিরের দরজা খোলাবেন না আমাদের দিয়ে। প্রধান পুরোহিত ছাড়া দিনের বেলাতেই কেউ এর দরজা খোলে না, আর আমরা রাতের বেলা দেবতার ঘুম নষ্ট করে অভিশাপ ডেকে আনব নাকি? আমাদের চোদ্দপুরুষ নরকে যাবে হুজুর। আমাদের রেহাই দিন হুজুর… রাস্তা দেখাতে বলেছিলেন, রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি। এখন…
আচমকা একটা জুতোর ঠোক্কর এসে প্রথম দেশীয় লোকটির মুখে সপাটে আছড়ে পড়ে, যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে সে। অন্য লোকটি ভয়ে জড়সড় হয়ে যায়।
কঠিন মুখে থুতু ছিটিয়ে আদেশ দেন দীর্ঘকায় রাজপুরুষটি, শয়তান হিন্দু, এইসব খেলা আমাদের সঙ্গে খেলিস না, অনেক দেখেছি তোদের।নোংরা, অবিশ্বাসী,নর্দমার কীট তোরা।তোদের এইসব পুতুলগুলোও নোংরা, আর বেজন্মার বাচ্চা তোরাও নরকের এই পুতুলগুলোকে পুজো করে চলেছিস। ভিখিরি শয়তানের দল, ওঠ, মন্দিরে ওঠ, দরজা খোল। ওরে, কে আছিস, বেয়নেটটা এই অপবিত্র পশুটার গলায় ধর তো, বিন্দুমাত্র বেচাল দেখলে গলাটা ফালাফালা করে দিবি।
অঙ্গবস্ত্রে মুখের রক্তটা মুছে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সেই দেশীয় লোকটি, একবার চোখ তুলে তাকায় দীর্ঘকায় রাজপুরুষটির দিকে। অন্ধকারের মধ্যে চোখদুটো ধক করে জ্বলে উঠেই নিভে যায়। তারপর মাথা নিচু করে পা বাড়ায় মন্দিরের সিঁড়ির দিকে। দ্বিতীয় দেশি লোকটিও তার পিছনে পিছনে যেতে থাকে। পিছনে পিছনে বাকিরা । ধীরে ধীরে মন্দিরের পাথুরে সিঁড়িতে পা রাখে প্রথম লোকটি। সঙ্গে সঙ্গে শোঁ শোঁ করে বাদুলে হাওয়ার দাপট বেড়ে ওঠে। মাঠের মধ্যে একটা ছোট হওয়ার ঘূর্ণি কাঠকটো। ধুলো মিশিয়ে ঘুরতে থাকে। অন্ধকারেই তার মধ্যে একটা শূন্য হাহাকারের ডাক মিশে। গেল কি?