মুহূর্তের জন্যে চুপ করেন তিনি, দম নিয়ে ফের শুরু করেন। স্থাণুবৎ বসে থাকেন মার্টিনেজ।
ইট ওয়াজ অ্যারাউন্ড ফিফটিন সিক্সটি। ইন্ডিয়াতে যখন আমরা কলোনি স্থাপন করছি, মোস্ট স্পেসিফিক্যালি গোয়াতে। সেখানকার ভাইকার জেনারেল ছিলেন। আমাদেরই এক পূর্বপুরুষ, মিগুয়েল ভাজ। তিনি পোপের আদেশে একটি অসামান্য শক্তিশালী রিলিজিয়াস আর্টিকেল দখল করতে গিয়ে একটি ঘোর অন্যায় করেন। ইনকইজিশনের আশ্রয় নিয়ে কোনো এক হিন্দু প্রিস্টকে খুন করেন। শুধু তাই নয়, খুন করার আগে তার সামনে তার স্ত্রী আর একমাত্র সন্তানকে খুন করে জ্বালিয়ে দেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই পুরোহিত ছিলেন একজন অসামান্য শক্তিধর অকাল্টিস্ট। তিনি মারা যাওয়ার আগে আমাদের, সমগ্র ভাঁজ পরিবারের আত্মাকে অভিশপ্ত করে যান, বলে যান যে আমাদের পরিবারের কোনও জ্যেষ্ঠ সন্তান বাঁচবে না। সেই থেকে এই পরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ সন্তান বাঁচেওনি। তিনি এও বলে যান, শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত এই অভিশাপ আমাদের তাড়া করে ফিরবে, এর থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
এতটা একসঙ্গে বলে সামান্য হাঁপাতে থাকেন ফার্নান্দো। মার্টিনেজ শুনছিলেন। এতক্ষণ, এবার প্রশ্ন করেন, সাউন্ডস রাবিশ! ইজ দিস সিরিয়াস, পাপাই?
ড্যাম সিরিয়াস মার্ট।
আমি এসবে বিশ্বাস করি না পাপাই। কোইন্সিডেন্স হতে পারে, অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে, হাজারো একটা কারণ হতে পারে…
সব জেনারেশনেই অ্যাক্সিডেন্ট আর কোইন্সিডেন্স মার্ট? প্রতিটি মৃত্যুর কোনো এক্সপ্লানেশন নেই। আজ অবধি একটি মৃত্যুরও কোনো সুরাহা হয়নি। কোনো কারণ হতে পারে মার্ট?.
তার কারণ নিশ্চয়ই ঠিকভাবে তদন্ত হয়নি তাই। পাপাই, খুব স্পষ্ট করে বলছি এসবে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না।
ঝুঁকে পড়ে ছেলের হাতটা খপ করে ধরেন ফার্নান্দো, তোমার বিশ্বাস করা বা না করায় কিছু এসে যায় না মার্টিনেজ। গত পাঁচশো বছর ধরে আমাদের পরিবারের প্রতিটি জ্যেষ্ঠ সন্তান মারা গেছে, আজ অবধি এর অন্যথা হয়নি। প্রতিবারেই, আই রিপিট, প্রতিবারেই কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সব আমাদের পারিবারিক ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে, তোমাকে কোনওদিন এসব বলতে পারিনি, তার কারণ… কারণ… দশ বছর বয়েস থেকেই তুমি বাড়ির বাইরে মানুষ হয়েছ। তোমার মাও চাননি তোমাকে সব কথা বলতে। কিন্তু আজ বলতে খারাপ লাগছে মার্ট, তিয়াগোর জন্যে আমি কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না।
আকাশের দিকে তাকান মার্টিনেজ। বিজ্ঞান আর যুক্তির বাইরে আর কিছু ভাবতে পারেন না তিনি, ভাবা উচিতও নয়। কিন্তু মিজেরাকর্দিয়ার আই সি ইউ কেবিনে শুয়ে থাকা একটা ছোট্ট অসহায় শরীর তার মানসিক স্থিতিশীলতানষ্ট করে দিয়েছে। ফার্নান্দো যা বলছেন তাতে ভুল নেই, অথচ মেনে নিতেও মন চায় না। তিয়াগো… তিয়াগোর জন্যে সব করতে পারেন মার্টিনেজ। সত্যিই যদি তাই হয়? ফার্নান্দো যা বলছেন তা যদি সত্যি হয়েই থাকে… তা হলে?
ঝুঁকে আসেন মার্টিনেজ। স্টিলের মতন শক্ত ও শীতল স্বরে জিজ্ঞেস করেন, যদি তোমার কথা সত্যি হয় পাপাই, তা হলে আমাকে বলো, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার। উপায় আছে কিছু?
চুপ করে থাকেন ফার্নান্দো, তারপর ধীরে ধীরে মাথা নাড়তে থাকেন, একটা। উপায় আছে মার্ট, আমরা আগে জানতাম না আছে বলে। আমি সারাজীবন চেষ্টা করে গেছি এর কোনো প্রতিকারের জন্যে। নানা জায়গায় ছুটে গেছি, হাজারো লোকের সঙ্গে আলোচনা করেছি, কয়েক হাজার বই ঘেঁটেছি। এত পরিশ্রমের পর সদ্য, এইমাস দুয়েক আগে হয়তো একটা রাস্তা খুঁজে পেয়েছি। জানি না কতটা ঠিক, আর তার থেকেও বড় কথা হল যে তার মতন শক্ত আর কঠিন কাজ কিছু নেই।
চোখ সরু করে নৈর্ব্যক্তিকস্বরে জিজ্ঞেস করলেন মার্টিনেজ, সেই রাস্তা নিলে কি তিয়াগোকে বাঁচানো গেলেও যেতে পারে?
আ-আই বিলিভ সো। কিন্তু তার দাম বড় কড়া মার্ট। প্রায় অসম্ভব সেই উপায়, অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন সে রাস্তা…
প্লিজ টেল মি অ্যাবাউট ইট।
আমি তোমাকে হারাতে চাইনা মার্ট। ভেবে দেখো, তুমি ছাড়া আর কেই বা আছে। আমার? চোখ ছলছল করে ওঠে সেই বৃদ্ধের, গলা বুজে আসে।
পাপাই, প্লিজ টেল মি অ্যাবাউট দ্য ওয়ে।
খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন ফার্নান্দো। তারপর গলা খাঁকরে পরিষ্কার করে বলেন, ওকে। লেট মি শো ইউ সামথিং।কী সেই অসাধারণ পাওয়ারফুল রিলিজিয়াস আর্টিকেল।
এই বলে ধীরে ধীরে উঠে নিজের ঘরের দিকে যান ফার্নান্দো। পাথরের মতন শক্ত মুখ করে বসে থাকেন মার্টিনেজ। তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। বাটলাররা এসে বারান্দার আলো জ্বেলে দিয়ে গেল। এতক্ষণ ধরে বাবা কী করছেন না জেনে মার্টিনেজ উশখুশ করেছিলেন। বারান্দার পাশেই ফার্নান্দোর শোবার ঘর। খানিকক্ষণ পরেই সেখান থেকে একটা মৃদু ঘটাংঘট শব্দ মার্টিনেজের কানে আসতে উনি বিস্মিত হয়ে উঠলেন।
ফার্নান্দোর একটি গোপন দেরাজ আছে। ফার্নান্দোর বললে ভুল বলা হবে, এই পরিবারের কর্তাদের। মানে যিনিই এই পরিবারের কর্তৃত্ব হাতে পেয়েছেন, তিনিই ওই বিশাল মাস্টার বেডরুমের অধিকার পেয়েছেন, সেই সঙ্গে তার ওপরেই দেওয়ালে গাঁথা গোপন দেরাজটির মালিকানা ন্যস্ত হয়েছে। বাড়ির কর্তাব্যক্তি না হওয়া ইস্তক ভাঁজ পরিবারের কারও পক্ষে সে দেরাজে হাত দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।